শনিবার, ১ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিশুর শ্বাসকষ্ট ও বয়স্কদের হাঁপানি

শিশুর শ্বাসকষ্ট ও বয়স্কদের হাঁপানি

যে কোনো শিশু হঠাৎ সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট ও জ্বরে আক্রান্ত হতে পারে। কোনো কোনো শিশুর শ্বাসে বাঁশির শব্দ (হুইজিং) শুনে হঠাৎ অনেকে ভয় পেতে পারেন। শিশুর নিঃশ্বাসে হুইজিং মানে অ্যাজমা নয়। পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের শ্বাসনালির প্রদাহ এবং সংকোচন হয় সাধারণত ভাইরাস আক্রমণে। ভাইরাস আক্রান্ত শিশুদের শ্বাসনালির অন্যান্য লক্ষণসমূহ যেমন কাশি, কফ, গলাব্যথা বারবার দেখাা দেয়। বারবার শ্বাসনালির প্রদাহ এবং স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসের বাধার অন্যান্য কারণ যেমন শ্বাসনালির স্থায়ী সংকোচন, টিউমার ইত্যাদি বিষয় যদি রোগের বৃত্তান্ত এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে বাদ দেওয়া যায় তবে সে ক্ষেত্রে হুইজিংকে অ্যাজমার অন্যতম লক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব। দেখা যায় বংশ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেকের এটা কমে আসে সেহেতু হুইজিং হলেই অ্যাজমা নিরূপণ করা নিতান্তই অবিবেচকের পরিচয় দেওয়া হবে। এ অবিবেচনায় শিশুর ভুল রোগ নিরূপণ, ভুল চিকিৎসা বা অপর্যাপ্ত চিকিৎসা এবং শ্বাসনালির অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।

প্রতিরোধ : সাধারণত শিশুদের শ্বাসে বাঁশির মতো শব্দ হলে শ্বাসনালিতে প্রদাহ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। শিশুদের রোগের পরিপূর্ণ বৃত্তান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে অ্যাজমার সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যান্য লক্ষণগুলোকে বাদ দেওয়া যায়। দেখা যায় যদি কারণগুলো সঠিক পরীক্ষা, অ্যালার্জি টেস্ট ও ফুসফুসের কার্যকর ক্ষমতা পরীক্ষা করে অ্যালার্জি ওষুধ ও ভ্যাকসিন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় তা হলে কর্টিকোস্টেরয়েডের বহুল প্রতিক্রিয়া থেকে রেহাই পাওয়া সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন পদ্ধতি অ্যালার্জিজনিত রোগের চিকিৎসা বলে অভিহিত করেছেন। এই চিকিৎসা পদ্ধতিকে অ্যালার্জি রোগীদের দীর্ঘমেয়াদি সুস্থ থাকার চিকিৎসা পদ্ধতি। অনেকের ধারণা ছিল অ্যালার্জিজনিত রোগ একবার হলে আর সারে না। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে। অ্যালার্জিজনিত রোগ প্রথমদিকে ধরা পড়লে একেবারে সারিয়ে তোলা সম্ভব। অনেকদিন এই রোগ নিয়ে অবহেলা করলে সারিয়ে তোলা কঠিন হয়ে পড়ে। অ্যালার্জি জাতীয় খাবার পরিহার, ওষুধ এবং ভ্যাকসিন পদ্ধতি ব্যবহার করে শিশুদের অ্যাজমা জাতীয় রোগ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। একজন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

বয়স্ক মানুষের হাঁপানি : হাঁপানি নির্দিষ্ট বয়সের কোনো রোগ নয়। যে কোনো বয়সের মানুষই হাঁপানি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শিশু, প্রাপ্তবয়স্ক ও বুদ্ধদেব হাঁপানি বিভিন্নভাবে আত্মপ্রকাশ করে থাকে। হঠাৎ শিশুদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও কাশি, প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে হঠাৎ শ্বাসকষ্টের আক্রমণ এবং বৃদ্ধদেব মধ্যে শ্বাসকষ্ট ছাড়াও সামান্য পরিশ্রমে হাঁপিয়ে পড়ার লক্ষণ দেখতে পাওয়া যায়। বয়স্কদের মধ্যে এ ঘটনার কারণ হলো ক্রনিক ব্রংকাইটিস ও এমপাইসিমা। প্রাপ্তবয়স্করা হাঁপানি আক্রমণের মধ্যবর্তী সময়ে স্বাভাবিক আর বৃদ্ধ হাঁপানি রোগীরা আক্রমণ ছাড়াও দিনের বেশির ভাগ সময়ই শ্বাসকষ্ট থেকে রক্ষা পান না।  হাঁপানি উন্নত দেশের বয়স্ক মানুষের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বয়স্কদের বুকের মধ্যে চাপ অনুভব কাশি ও ছোট ছোট শ্বাসই হাঁপানি রোগের উপসর্গ। গ্লুকোমা, উচ্চ রক্তচাপের কোনো কোনো ওষুধ বস্কদের হাঁপানি বৃদ্ধি করে। দেখা যায় হজমের ওষুধ, ডিসপেপসিয়ার ওষুধ, এন্টাসিড হাঁপানি কিছুটা কমাতে পারে। বৃদ্ধ বয়সে হাঁপানিতে যারা কষ্ট পান তাদের চিকিৎসা সাবধনে করতে হয়। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ একনাগাড়ে ব্যবহার করা উচিত নয়। স্টেরয়েট জাতীয় ওষুধ বেশি সেবনের ফলে বেশি জোরে কাশি দিলে বুকের পাঁজরের হাড়ও ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। বয়স্কদের যাদের প্রস্টেট গ্রন্থিতে অসুখ থাকে এবং বেশি মাত্রায় স্টেরয়েড এবং এফিড্রিন খান তাদের প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেসব বয়স্কের মধ্যে  উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আছে তারা যদি অ্যাড্রিনেলিন ইনজেকশন নেন তাদের মহাবিপদের আশঙ্কা আছে। তাই সচেতনতা বাড়াতে হবে।

অধ্যাপক একেএম মোস্তফা হোসেন

প্রধান উপদেষ্টা, ওয়েস্টিন মেডিকেল সেন্টার,

কুড়িল চৌরাস্তা, প্রগতি সরণি, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর