হিককাপ অব মাইন্ড বা মনের ঢেঁকুর বলে থাকে শুচিবাইকে। জীবনে যে কোনো সময়ে ২-৩ ভাগ লোক শুচিবাইয়ে আক্রান্ত হতে পারে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়— হাসপাতালের বহির্বিভাগে যত সংখ্যক মানসিক রোগী আসে, তার ১০ ভাগ এ ধরনের রোগী। মহিলা ও পুরুষ সমানভাবেই এ রোগে আক্রান্ত হয়, তবে টিনএজদের মধ্যে ছেলেদেরই বেশি হয়। রোগটি ২০ বছর বয়সে বেশি হয়।
কীভাবে বুঝবেন : এর দুটি অংশ— প্রথম অংশটি হলো বারবার চিন্তা আসা। রোগীরা প্রায়ই বলে থাকে, ডাক্তার খালি টেনশন আসে। কোনো কোনো রোগীর দিনের শেষে রাতের বেলায় শুরু হয় বিশেষ কোনো ঘটনা বার বার মনে পড়া। আবার কেউ কেউ কোনো ঘটনা বলার জন্য স্বামীকে বারবার বিরক্ত করে, অথচ তা একবার বললেই হয়। * অপর অংশটি হলো চিন্তাকে কাজের অথবা আচরণের মাধ্যমে প্রকাশ করা যাকে আমরা কম্পালশন বলি। * মাথায় সারাক্ষণ টেনশন থাকে। কেউ কেউ বলে একটা টেনশন গেলে অন্যটা আসে। কিছুক্ষণের জন্যও মাথা টেনশন মুক্ত হয় না। কেবল কল্পনা আসে। * কোনো কোনো রোগীর তীব্র ইচ্ছা হয় অন্যকে ইনজুরি করা, গাড়ির নিচে ঝাঁপ দেওয়া, বিশেষ কোনো জায়গায় গেলে ভয় পায়। এটাকে অবসেসনাল ফোবিয়া বলে। * কেউ কেউ একই ভঙ্গিতে গুনবে এবং ঘরের কাপড়-চোপড় গুছিয়ে রাখবে। একটু এদিক-ওদিক হলে সবার সঙ্গে ঝগড়া লাগিয়ে দেয়।
কি কি সমস্যা : মেয়েদের মাসিকের সময় অস্বস্তি বেড়ে যায়। * ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যাদের শুচিবাই আছে তারা পড়াশোনায় পিছিয়ে পড়ে। * কোনো কাজ সম্পন্ন করতে অনেক সময় লাগে, পরীক্ষার সময় কোনো কোনো ছাত্রছাত্রী পেছনের পাতায় কি লিখেছে তা বারবার চেক করে। এ কারণে পরীক্ষায় পূর্ণ নম্বরের উত্তর লিখে আসতে পারে না। * বিষণ্নতায় ভোগে ৬৭ ভাগ রোগী। অন্যদিকে অনেক লোক আছে যারা মৃত্যুভীতির কারণে লাশ, অ্যাম্বুলেন্স, লাশের ছবি, এমনকি লাশ রাখার খাট দেখলে একদমই সহ্য করতে পারে না, ভিতরে কেঁপে ওঠে, অস্থির হয়ে ওঠে, দম আটকে আসে। এ কারণে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম চলাফেরার ব্যাঘাত ঘটে। আসলে এটি একটি টেনশন বা অস্থিরতা গ্রুপের রোগ, যাকে আমরা প্যানিক ডিজঅর্ডার বলে থাকি। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে, এ ধরনের রোগী ডাক্তারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে সর্বস্বান্ত হয় এবং সব শেষে নিজে একজন হার্টের রোগী বলে কাজকর্ম ছেড়ে দেয়।ডা. মো. দেলোয়ার হোসেন
সহকারী অধ্যাপক, আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতাল, ঢাকা।