মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭ ০০:০০ টা

এই সময়ের সর্দি-কাশি

অধ্যাপক ডা. মনিলাল আইচ লিটু

এই সময়ের সর্দি-কাশি

শীতের এ সময়ে স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রধান একটি হলো শ্বাসতন্ত্রের রোগ। এ ছাড়া আরও রয়েছে সর্দি-কাশি। এসব রোগের প্রধান কারণ ভাইরাস হলেও বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যেসব এনজাইম আছে, তা স্বাভাবিকের চেয়ে কম তাপমাত্রায় কার্যকর হয়ে পড়ে। ফলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়। শীতে বাতাসের তাপমাত্রা কমার সঙ্গে আর্দ্রতাও কমে যায়, যা আমাদের শ্বাসনালির স্বাভাবিক কর্ম প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করে ভাইরাসের আক্রমণকে সহজ করে। শুষ্ক আবহাওয়া ভাইরাস ছড়ানোকে আরও ত্বরান্বিত করে। এছাড়া ধুলাবালির পরিমাণ বেড়ে যায়। ধুলাবালি এক ধরনের অ্যালার্জেন যা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট রোগীদের জন্য খুবই মারাত্মক। এর ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। শীতে ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার প্রাদুর্ভাব ঘটে সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে প্রথমেই চলে আসে সাধারণ ঠাণ্ডাজনিত সর্দি-কাশির কথা বা কমন কোল্ড, আমাদের একটি পরিচিত নাম। বিশেষত শীতের শুরুতে তাপমাত্রা যখন কমতে থাকে, তখনই এর প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। এ রোগের শুরুতে গলাব্যথা করে, গলায় খুশ খুশ ভাব ও শুকনা কাশি দেখা দেয়। নাক বন্ধ হয়ে যায়। নাক দিয়ে অনবরত পানি ঝরতে থাকে এবং ঘন ঘন হাঁচি আসে। হালকা জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, শরীর ম্যাজ ম্যাজ করা, দুর্বল লাগা ও ক্ষুধামন্দা দেখা দেওয়া। এটা মূলত শ্বাসতন্ত্রের উপরের অংশের রোগ এবং সৌভাগ্যক্রমে তা

এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। সৈয়দ মুজতবা আলীর ভাষায়— চিকিত্সা করলেও সাত দিন লাগে, না করলেও এক সপ্তাহ লাগে। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে কাশি কয়েক সপ্তাহ থাকতে পারে। যদি প্রতিরোধের চেষ্টা সত্ত্বেও সর্দি-কাশি দেখা দেয়, তবু প্রতিরোধের উপায়গুলো চালিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি প্যারাসিটামল এবং এন্টিহিসটামিন জাতীয় ওষুধ খেলেই যথেষ্ট। এটা শুধু রোগের তীব্রতাকে কমাবে না, রোগের বিস্তারও কমাবে। প্রয়োজনে চিকিত্সকের শরণাপন্ন হতে হবে এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খেতে হবে। পাশাপাশি দেশজ ওষুধ যেমন— মধু, আদা, তুলসী পাতা, কালিজিরা ইত্যাদি রোগের উপসর্গকে কমাতে সাহায্য করবে। হাঁচি-কাশির মাধ্যমে এ রোগ আবার আরেকজনের মধ্যেও ছড়ায়। তাই রোগ যাতে অন্যদের আক্রান্ত করতে না পারে, সে জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্ব্বন করা উচিত। যেমন আরোগ্য না হওয়া পর্যন্ত বাসায় থাকা। বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী যারা আক্রান্ত, তাদের অবশ্যই বাসায় রাখতে হবে। নেহাত বাইরে যেতে হলে মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। তাই শীতের এই সময়ে এ সব বিষয়ে অবহেলা করা ঠিক হবে না। প্রাথমিক অবস্থায় এগুলো নিয়ে যত্নবান হতে হবে।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইএনটি, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর