জন্মগত ত্রুটি নির্ণয়, প্রতিরোধ এবং সমাধান যে কোনো প্রেগনেন্সিতে চিকিৎসকের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সাধারণত প্রতি ১০০ জন নবজাতকের মধ্যে তিনজনের বড় ধরনের জন্মগত ত্রুটি থাকতে পারে। সমস্যার প্রকারভেদ অনুযায়ী এদের দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন Structural এবং functional প্রতিবন্ধকতা।
Structural প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গঠনগত সমস্যা, যেমন—
হাত-পায়ের গঠনগত ত্রুটি: polydactyly, syndactyly, aplasia or dzsplasia of limbs. কার্ডিয়াক সমস্যা যেমন- হার্টের ভাল্ব-এর সমস্যা কিংবা পর্দায় ছিদ্র থাকা। নার্ভের বিভিন্ন ধরনের অ্যাবনরমালিটির মধ্যে আছে anencephali (মাথার খুলি অসম্পূর্ণ থাকা), microcephali, spina bifida, hydrocephali (ব্রেনের ভিতর তরল পদার্থ জমা হয়) ইত্যাদি। এছাড়া Functional প্রতিবন্ধকতারও রয়েছে বিভিন্ন প্রকারভেদ। যেমন- ক্রোমোজোমাল (down syndrome, thalassemia), মেটাবলিক (hypothyroidism, phenylketonuria)|কখন সমস্যাগুলো বোঝা যায় : সাধারণত একেকটি সমস্যা একেক সময়ে বোঝা যায়। কিছু কিছু সমস্যা জন্মের পরপরই দেখা যায়, যেমন, হাত পায়ের আঙুল কম বা বেশি থাকা, তালু কিংবা ঠোঁট ফাটা, অসম্পূর্ণ মাথার খুলি ইত্যাদি। কিছু সমস্যা শিশুর বাড়ন্ত অবস্থায় অথবা পরিণত বয়সে ধরা পড়ে, যেমন- কার্ডিয়াক বা রেনাল অ্যাবনরমালিটি, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশজনিত অসুবিধা, জিনগত বা ক্রোমোজোমাল প্রবলেম (থ্যালাসেমিয়া, হিমোফিলিয়া)। * জন্মের আগেই কীভাবে ডায়াগনোসিস সম্ভব? কনসিভের আগেই হিস্ট্রির মাধ্যমে রিস্ক নির্ণয় এবং প্রতিকারের ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে ‘হাইরিস্ক’ মা তারা, যাদের- * আগে এক বা একাধিক ত্রুটিসম্পন্ন বাচ্চা রয়েছে। * আন-কনট্রল্ড ডায়াবেটিস, হাইপো/ হাইপার থাইরয়েডিজম বা এপিলেপসিতে আক্রান্ত। * বিভিন্ন ধরনের ওষুধ খাচ্ছেন, যা বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। * অ্যালকোহল বা ধূমপানে আসক্ত। * মায়ের বয়স ৩৫ এর বেশি ইত্যাদি। এছাড়া আধুনিক ডায়াগনোসিস ব্যবস্থা আছে যা থেকে জন্মের আগে কিছু সমস্যা নির্ণয় করা যায়।
* হাই রেজুলেশন-আল্ট্রাসোনো-গ্রামের মাধ্যমে ভ্রূণের প্রথম তিন মাসেই নার্ভাস সিস্টেমের অনেক অ্যাবনরমালিটি বা রিস্ক বোঝা যায়, যেমন- Anencephali, increase nuchal thickness etc. ২০ থেকে ২৪ সপ্তাহের আল্ট্রাসোনোগ্রামে বাচ্চার কার্ডিয়াক, রেনাল, হাড়/অস্থি, পরিপাকতন্ত্রসহ অন্যান্য বেশিরভাগ ত্রুটি বোঝা যায়। তাই যে কোনো প্রেগন্যান্ট মায়েদের এসময়ে একটি অ্যানোম্যালি স্ক্যানিং দেওয়া হয়। * ক্রোমোজোম এবং জিনগত সমস্যা শনাক্ত করতে রক্তের বায়োকেমিক্যাল টেস্ট এবং অ্যামনিওটিক ফ্লুইড অ্যানালাইসিস, CVS (chorionic villus analysis) করা হয়। এসব টেস্ট এখন বাংলাদেশেই করা সম্ভব।
ডা. নুসরাত জাহান, সহযোগী অধ্যাপক (অবস-গাইনি)
ডেলটা মেডিকেল কলেজ, মিরপুর, ঢাকা।