আপনি সমবয়সীদের তুলনায় শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছেন। হাঁটা বা দৌড়াদৌড়ি করার সময় সহজে হাঁপিয়ে ওঠেন, সিঁড়িতে উঠতে গেলে নিঃশ্বাস ঘন হয়ে যায় তার সঙ্গে বুক ধড়ফড় বা বুকে চাপ ও ব্যথা অনুভব করেন। বিশেষ করে রাতে বিছানায় শুতে গেলে, মাঝে মাঝে রাতে শুকনো কাশি অথবা শ্বাসকষ্টের জন্য ঘুম ভেঙে যায়, শরীর ভার-ভার মনে হয়, কাজকর্মে অনীহা দেখা দিয়েছে, হাত-পা ও মুখ ফুলা-ফুলা ভাব ধরেছে। হজমে গোলমাল দেখা দিয়েছে। প্রস্রাবের পরিমাণ কমে গেছে। বল প্রয়োগের কাজ করতে গেলে মাথা হালকা অনুভূত হয় অথবা চোখ অন্ধকার হয়ে মাথা ঘোরাতে থাকে। হৃৎপিণ্ড পাম্পের মাধ্যমে সারা শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে থাকে। বিশ্রামকালীন সময়ে আপনার শারীরিক চাহিদা সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকায়, শরীরে রক্ত প্রবাহের চাহিদাও সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে, ফলশ্রুতিতে হৃৎপিণ্ডকেও সর্বনিম্ন পরিমাণে রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। তবে যখন কোনো ব্যক্তি তার শারীরিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করে তখন শারীরিক চাহিদা পূরণে হৃৎপিণ্ডকে অধিক পরিমাণ কাজ করে, অধিক রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে শারীরিক চাহিদা মেটাতে হয়। সর্বোচ্চ কায়িক শ্রম যেমন—১০০ মিটার রেস বা ক্রিকেট খেলায় দুই উইকেটের মধ্যে দৌড়ানোর সময় হৃৎপিণ্ড রক্ত পাম্পের পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম। তাই দেখা যাচ্ছে যে, আপনি যখন কায়িক শ্রমের মাত্রা বৃদ্ধি করেন তখন তার সঙ্গে আনুপাতিক হারে আপনার হৃৎপিণ্ডকেও তার গতি বৃদ্ধি করতে হয়। যখন আপনার হৃৎপিণ্ড অধিক কাজ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে তখন শারীরিক যোগ্যতা কমতে থাকে। প্রাথমিক অবস্থায় হার্টের যোগ্যতা কমতে থাকলেও আপনি তা অনুভব নাও করতে পারেন। কারণ তখন পর্যন্তও আপনার হৃৎপিণ্ড আপনাকে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ কর্ম সম্পাদনে পুরোপুরি সহায়তা করতে সক্ষম হয়। ধীরে ধীরে হৃৎপিণ্ড আরও দুর্বল হয়ে গেলে প্রথমে আলোচিত উপসর্গ শরীরে পরিলক্ষিত হয়, তার মানে হলো হৃৎপিণ্ড তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হচ্ছে। বহুবিধ কারণে হার্ট দুর্বল হতে পারে তবে আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু কারণকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। উচ্চ রক্তচাপের ফলে হৃৎপিণ্ডের কাজের চাপ বাড়ে। অধিক চাপে কাজ করলে এক সময় হার্ট অবসাদগ্রস্ত হয়ে যায়। তাই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি। ডায়াবেটিস রোগ রক্তনালীর ক্ষতিসাধন করে থাকে বিশেষ করে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীর। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস দীর্ঘ সময় বিদ্যমান থাকলে রক্ত প্রবাহের স্বল্পতার জন্য হার্ট দুর্বল হয়।
ডা. এম শমশের আলী, সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শমশের হার্ট কেয়ার এবং মুন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, বাবর রোড, শ্যামলী।