সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

ব্যথা উপশমে মালিশ কতটুকু কার্যকর?

ব্যথা উপশমে মালিশ কতটুকু কার্যকর?

মালিশ একটি অতি প্রচলিত চিকিৎসা-পদ্ধতি। গা-ব্যথা, কোমর ব্যথা, গিঁটে ব্যথা, এমনকি মাথাব্যথাতেও মালিশের ব্যবহার হরহামেশা দেখা যায়। এ ছাড়া বিভিন্ন অসুখে বুকে-পীঠে, হাতে-পায়ের তালুতে তেল মালিশের প্রচলন তো রয়েছেই।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, মালিশ ব্যবহারে কী আসলেই কোনো উপকার হয়? অনেকেই অর্থাৎ যারা মালিশ ব্যবহার করে, তাদের ধারণা, এ জাতীয় মালিশ ত্বকের গভীরে অবস্থিত মাংসপেশিতে তাপ সঞ্চালনের মাধ্যমে ব্যথা কমায়। সর্বসাধারণের মনে এ ধারণার সূত্রপাত ঘটেছে রাস্তাঘাটে ওষুধ বিক্রেতার লেকচার থেকে। মালিশের মলম খুব বেশি হলে ত্বকের খানিকটা অভ্যন্তরে হয়তো যেতে পারে, কিন্তু সেই মলমের প্রভাবে মাংসপেশি পর্যন্ত পৌঁছা কিছুটা অসম্ভবই বটে! আর মাংসপেশি পর্যন্ত পৌঁছে সেখানে তাপ উৎপাদন করে ব্যথা উপশমের ব্যাপারটা অলৌকিকই। বাজারে ব্যথা উপশমের জন্য যেসব মালিশ পাওয়া যায়, উপাদান হিসেবে এগুলোতে থাকে ক্যাম্পফর, মেনথল, মিথাইল স্যালিসাইলেট। এগুলো ত্বক ঠাণ্ডা অথবা গরম অনুভূতির উদ্রেক করে এবং সেই সঙ্গে কিছুটা ব্যথা নিরাময় ও অবশ ভাব আনে। ফলে সাময়িকভাবে ব্যথার উৎস থেকে ব্যথার অনুভূতি অন্যতে ছড়াতে পারে না। সম্ভবত এটা ব্যথার সংকেতকে সরাসরি অথবা স্নায়ুটি উত্তেজিত করে কাজটি করে থাকে। এ ধরনের উপাদানকে বলা যেতে পারে কাউন্টার ইরিটেন্ট অর্থাৎ শরীরে নতুন উত্তেজনার উদ্রেক করে পুরনো উত্তেজনা থেকে মনকে সরিয়ে আনা। রোগীর এতে কোনো লাভই হয় না।  কাজেই সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা করা উত্তম। আর মাংসপেশির সামান্য ব্যথা এমনিতেই সেরে যায়। শরীরের নিজেরই সেই ক্ষমতা আছে। মাংসপেশি থেঁতলে গেলে সেক্ষেত্রে মালিশ করা নিষেধ আছে। অধিকাংশ মালিশেরই থাকে ঝাঁঝালো গন্ধ। এই ঝাঁঝালো গন্ধও রোগীর ব্যথা উপশমে মানসিকভাবে কাজ করে। এসব  মালিশ কখনো ওষুধ হিসেবে গণ্য নয়। যে কারণে এগুলো পাওয়া যায় রাস্তাঘাটে, বাসে, ট্রেনে ক্যানভাসারের হাতে। যারা মালিশ জাতীয় জিনিস চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করছেন কিংবা ব্যবহার করার উৎসাহ বোধ করছেন, তাদের উদ্দেশে শেষ কথা হচ্ছে— মালিশ মাংসপেশির গভীরে ঢুকে ব্যথা উপশম করে না। তাই এসব বিষয়ে আরও সচেতন হতে হবে।

ডা. সজল আশফাক, স্বাস্থ্য নিবন্ধকার, নিউইয়র্ক থেকে।

সর্বশেষ খবর