বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

এইডস প্রতিরোধ করাই জরুরি

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

এইডস প্রতিরোধ করাই জরুরি

একটি কথা সবার জানা দরকার, এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই এইডস হয় না। কিন্তু এইচআইভি ভাইরাস একবার কোনোভাবে শরীরে ঢুকে গেলে তখন তাকে পুরোপুরি দূর করাও যায় না

 

ঘাতক ব্যাধি এইডস পুরোপুরি নিরাময়ের উপায় এখনো পাওয়া যায়নি। তাই জনমনে এ রোগ নিয়ে নানা ভীতি কাজ করে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, এইচআইভি/এইডস সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা অনেক কম। অনেকে জানেনই না এ রোগের লক্ষণ কী কী? কীভাবে এইডস প্রতিরোধ করা যায়? বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মানবদেহে এইচআইভি ভাইরাসের সংক্রমণকে পৃথিবীব্যাপী বিরাজমান হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এ ভয়ানক ব্যাধি এখন কোনো নির্দিষ্ট দেশে সীমাবদ্ধ নেই। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বে এইডস রোগে ভুগছে ৩৬.৭ মিলিয়ন মানুষ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ২০.৯ মিলিয়ন মানুষ এইচআইভির চিকিৎসা পেয়েছে। সংক্রমিতদের মধ্যে কিশোরের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বলে জানা গেছে।

১৯৮১ সালে সর্বপ্রথম এইডস শনাক্ত হয় যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি কর্তৃক। এরপর ১৯৮৮ সালে গঠন করা হয় আন্তর্জাতিক এইডস সোসাইটি। সে বছরই ১ ডিসেম্বরকে বিশ্ব এইডস দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এইডসের প্রতীক হিসেবে নির্ধারণ করা হয় লাল ফিতা বা রিবন, যার মাধ্যমে এইচআইভি বা এইডসে আক্রান্তদের প্রতি সহমর্মিতাসহ প্রতিরোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়। এইডস হচ্ছে হিউম্যান ইমিউনো ডেফিসিয়েন্সি ভাইরাস (এইচআইভি) নামক ভাইরাসের কারণে সৃষ্ট এক ধরনের রোগ, যা মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বহুলাংশে হ্রাস করে দেয়। এতে একজন এইডস রোগী খুব সহজেই যে কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হতে পারে, যার শেষ পরিণতি মৃত্যু। মানবদেহে এ ভাইরাস প্রবেশ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধক কোষ, যেমন— হেলপার টি সেল, মনোসাইট, ম্যাক্রফেজ, ডেনড্রাইটিক সেল, চর্মের ল্যাঙ্গারহেন্স সেল, মস্তিষ্কের গ্লায়াল সেল ইত্যাদিকে আক্রমণ করে এবং সেগুলোকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দেয়। ফলে মানবদেহের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। বেশিরভাগ এইডস রোগী কোনো লক্ষণ ছাড়াই এ রোগ বহন করে থাকে। তবে কখনো কখনো এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ছয় থেকে আট সপ্তাহ পরে কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন শরীরের ওজন অনেক কমে, অনেক বেশি ক্লান্ত লাগে, দীর্ঘদিন ধরে জ্বর, মুখে বা গলায় ঘা, গলা ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং ঘন ঘন বা দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া হতে পারে। মাথা, চোখ এবং মাংসপেশিতে ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ, ত্বকের ওপরে ফুসকুড়ি ও ঘা ইত্যাদি হতে পারে। ঠোঁট, জিহ্বা ও যৌনাঙ্গের চারপাশ ধীরে ধীরে ফোসকা ও ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হতে পারে এবং ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও অনেক রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত এমনকি লিম্ফনোডও ফুলে যেতে পারে। অনেক সময় এসব লক্ষণ কোনোরকম চিকিৎসা ছাড়াই সেরে যায়, যার কারণে রোগীরা এ ভাইরাস সম্পর্কে অবগত হয় না। আবার কোনোরকম লক্ষণ ছাড়াই এইডসের ভাইরাসটি সর্বোচ্চ ১০ বছর মানুষের শরীরে নীরবে বাস করতে পারে। একটি কথা জানা দরকার, এইচআইভি সংক্রমণের সঙ্গে সঙ্গেই এইডস হয় না। কিন্তু এইচআইভি একবার কোনোভাবে শরীরে ঢুকে গেলে তখন তাকে পুরোপুরি দূর করাও যায় না। চিকিৎসার দ্বারা এর লক্ষণ বা জটিলতাগুলো আরও কিছু বছর পিছিয়ে রাখা যায়। এটা আতঙ্কের এক মারণব্যাধি হলেও সারা বিশ্বেই আজ এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। তবে রোগটি ভীতিকর হলেও প্রতিরোধযোগ্য। এইচআইভির বিরুদ্ধে প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কৃত হয়নি। তাই প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে এর থেকে নিস্তার পাওয়া অত্যন্ত দুরূহ। কার্যকর কোনো ওষুধও এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। আক্রান্ত ব্যক্তি নিজে যেমন ভুগবে, এর সঙ্গে পরিবার বা সমাজের অন্যদের জন্যও হুমকি হয়ে থাকবে। তাই এইচআইভি ভাইরাস এবং তা প্রতিরোধে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে।

লেখক : ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।

সর্বশেষ খবর