বুধবার, ১ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের সম্পর্ক

কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের সম্পর্ক

এ কথা সবারই জানা, হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ রক্তের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল। রক্তে বিদ্যমান কোলেস্টেরলের বেশ কয়টি রূপ বা শ্রেণি রয়েছে। যেমন-হাই ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এইচডিএল) লো ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (এলডিএল), ট্রাইগ্লিসারাইড (টিজি) এবং সর্বোপরি রক্তে বিদ্যমান সব ধরনের কোলেস্টেরলে মোট পরিমাণ বা টোটাল কোলেস্টেরল (টিসি)। এদের মধ্যে রক্তে বিদ্যমান এলডিএল হৃদরোগ সৃষ্টিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে এবং টিজি অবশ্যই এলডিএলের চেয়ে অনেকটা কম ক্ষতিকারক। রক্তে এইচডিএলের মাত্রা যত বেশি থাকে হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা তত কমে যায় এবং এর মাত্রা বেশি কমে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। এর বিপরীত হলে এলডিএল অর্থাৎ এলডিএলের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়। তাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এলডিএলকে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল এবং এইচডিএলকে হৃদবান্ধব কোলেস্টেরল বলা হয়। রক্তে টিজি মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। তবে এর ক্ষতিকারক ক্ষমতা এলডিএলের চেয়ে অনেক কম।

খাদ্যে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকলে, খাদ্য হজমের পর রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। রক্তের কোলেস্টেরল দুটি উৎস থেকে আসে। এক খাদ্য চর্বি যা থেকে কোলেস্টেরল রক্তে প্রবেশ করে এবং দ্বিতীয়টি হলো আমাদের লিভারের বা কলিজার কার্যক্রমের মাধ্যমে উৎপাদিত কোলেস্টেরল। মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের স্বাভাবিক কর্মতৎপরতার জন্য কেলেস্টেরলের প্রয়োজন হয়, স্টেরয়েড হরমোন ও সেক্স হরমোন তৈরির প্রধান কাঁচামাল কোলেস্টেরল, ত্বকের লাবণ্যতা ধরে রাখার জন্য এবং ত্বকের কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে কোলেস্টেরল মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই কোলেস্টেরল ছাড়া কোনো অঙ্গই তার কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবে না। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি থাকতে থাকলে দিনে দিনে রক্তনালির বিশেষ বিশেষ স্থানে কোলেস্টেরল ও অন্যান্য চর্বি জাতীয় বস্তু জমা হতে থাকে। দীর্ঘদিন যাবৎ  (১০, ২০, ৩০ বছর) এভাবে কোলেস্টেরল ও অন্যান্য চর্বি জাতীয় বস্তু জমা হতে হতে হার্ট ব্লক ও অন্যান্য অঙ্গ যেমন- ব্রেন, কিডনি ইত্যাদির রক্তনালিতে ব্লক সৃষ্টি করে অর্থাৎ রক্তপ্রবাহের পথ আটকে দিয়ে রক্ত সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করে হৃদরোগ, হার্টঅ্যাটাক, ব্রেনস্ট্রোক, কিডনি ফেইলুর সৃষ্টি করে থাকে। রক্তনালিতে কোলেস্টেরল জমা হয়ে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করার প্রক্রিয়াটা এত ধীরগতির যে, এর প্রভাবে রোগ সৃষ্টি হতে বহু বছর (১০ থেকে ৩০ বছর) লেগে যায় এবং অনুরূপভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে এবং কোলেস্টেরল কমানোর মেডিসিন গ্রহণ করে এর ফলাফল পেতে ও দীর্ঘসময় লেগে যায়। অনেকে কোলেস্টেরলের মাত্রা ছয় মাস বা এক বছর যাবৎ কমিয়ে রেখে এর থেকে সুফল পাওয়ার আশা করতে থাকেন, এটা ঠিক নয়। মেডিসিনের পরিবর্তে খাদ্যাভ্যাস ও কায়িকশ্রমের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা বিজ্ঞানসম্মত, দীর্ঘমেয়াদি এবং অধিক কার্যকর। মেডিসিনের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ না করে প্রাকৃতিক উপায়ে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করলে তা থেকে অধিক সুফল পাওয়া যায় এবং এটাকে দীর্ঘস্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

ডা. এম শমশের আলী (কার্ডিওলজিস্ট)

সিনিয়র কনসালটেন্ট (প্রা.), ঢাকা মেডিকেল

কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর