শিরোনাম
শনিবার, ৪ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

স্ট্রোক ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয়

অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ

স্ট্রোক ঝুঁকি মোকাবিলায় করণীয়

অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে স্ট্রোক একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। রোগটি আসলে মস্তিষ্কের, অনেকেই একে হার্ট অ্যাটাক বলে ভুল করেন। মস্তিষ্কের রক্তবাহী নালির দুর্ঘটনাকেই স্ট্রোক বলা যায়। এ দুর্ঘটনায় রক্তনালি বন্ধ বা ফেটে মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত বা বন্ধ হয়ে মস্তিষ্কের কোষগুলোর কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। তবে দ্রুত চিকিৎসা করা হলে মস্তিষ্কের ক্ষতি এবং স্ট্রোকসংক্রান্ত অন্যান্য জটিলতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

অনেক কারণেই স্ট্রোক হতে পারে, অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ সবচেয়ে বড় কারণ। এছাড়াও অতিরিক্ত টেনশন, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, রক্তে বেশি মাত্রায় চর্বি, ধূমপান, তামাক পাতা, জর্দা, মাদক সেবন স্ট্রোকের অন্যতম কারণ। কিছু কিছু ওষুধ যা রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা কমিয়ে দেয় যেমন অ্যাসপিরিন, ক্লপিডগ্রেল প্রভৃতি ব্যবহারে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে। যে কোনো ধরনের প্রদাহ অথবা ইনফেকশন ও জন্মগতভাবে ব্রেনে কিংবা মস্তিষ্কে সরু রক্তনালি থাকা। অনেক সময় বংশানুক্রমে কিংবা আগের স্ট্রোক, হার্টঅ্যাটাক ও দূরবর্তী রক্তনালি বন্ধ হওয়ার কারণেও স্ট্রোক হয়।

স্ট্রোকের লক্ষণসমূহ : হাঁটতে বা চলাফেরা করতে এবং ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমস্যা, কথা জড়িয়ে যাওয়া এবং অস্পষ্ট শোনা। শরীরের যে কোনো একপাশ বা উভয়পাশ দুর্বল, অসাড় বা প্যারালাইজড, চোখে অস্পষ্ট বা অন্ধকার দেখা ইত্যাদি। এছাড়া স্ট্রোকের মারাত্মক কিছু উপসর্গ হচ্ছে অজ্ঞান হওয়া, খিঁচুনি, তীব্র মাথাব্যথা ও বমি।

প্রতিরোধের উপায়: স্ট্রোক অবশ্যই একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। একবার আক্রান্ত হয়ে গেলে চিকিৎসা অত্যন্ত জটিল, ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য। আক্রান্ত রোগী নিজে মানসিক এবং শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, পরিবারের জন্য অনেক সময় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। তাই প্রতিরোধ করাই সর্বোত্তম। স্ট্রোকের ঝুঁকি সম্পর্কে জানা এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন পদ্ধতি মেনে চলা উচিত। যেমন নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রক্তের চর্বি এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখুন। হৃৎপিণ্ড বা রক্তনালির কোনো রোগ থাকলে তার চিকিৎসা করান। নিয়মিত ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম এবং দেহের সঠিক ওজন বজায় রাখুন। মানসিক চাপমুক্ত থাকুন। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করুন। নিয়মিত সুষম খাদ্য বিশেষ করে শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খান। মনে রাখতে হবে, স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া মানেই জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণ। রোগী একদিকে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে থাকেন আবার অন্যদিকে চিকিৎসার মাধ্যমে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখার প্রাণান্তকর চেষ্টা চলতে থাকে। স্ট্রোক ভয়াবহ হলেও একটু সচেতন হলে এবং প্রতিরোধের ব্যবস্থা নিলেই এ রোগের কবল থেকে মুক্তি সম্ভব। তাই স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ এবং করণীয় সম্পর্কে নিজে জানুন আর অন্যকে জানিয়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে উদ্বুদ্ধ করুন। তবেই এড়ানো সম্ভব মারাত্মক এ প্রাণঘাতী রোগ।

তাই স্ট্রোক নিয়ে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে।

লেখক :  ডিন, মেডিসিন অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ

মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর