সোমবার, ৬ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা

শিশু-কিশোরদের অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতা

শিশু-কিশোরদের অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতা

মাঝে মাঝে কিছু কিছু ছেলেমেয়ে অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতা নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হয়। সেটি বাংলাদেশ বা পৃথিবীর যে কোনো দেশের জন্য সত্য হতে পারে। যদি কোনো শিশুর দৈহিক উচ্চতা তার জনগণের আদর্শ দৈহিক উচ্চতার তুলনায় ৯৭ শতাংশের বেশি হয় (+2 SD-এর বেশি) তবে তাকে অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতা বলা হবে। সারা পৃথিবীর প্রতি ১০০ জন শিশু-কিশোরের মধ্যে তিনজন এরূপ। তবে কোনো কোনো পরিবারের সবাই বা অধিকাংশই এ আকারের হতে পারে। সেক্ষেত্রে একে কোনো রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হবে কিনা তা ভাবনার বিষয়।  একটি শিশুর দৈহিক উচ্চতা অস্বাভাবিক বেশি বা কম তা বোঝার জন্য বাবা-মা’র উচ্চতা সাপেক্ষে এ শিশুটির কাঙ্ক্ষিতপ্রাপ্ত বয়স্ক উচ্চতার (Mid Parental Hight) বের করে নেওয়া যায়। এটি মোটামুটি একটি ভালো অনুমান দিতে পারবে। যেহেতু বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের দৈহিক উচ্চতা-কাঠামো বিভিন্নরকম তাই ওই শিশু বা কিশোরের বাবা-মার উচ্চতার সঙ্গে তার উচ্চতা তুলনা করাই সবচেয়ে সঠিক হতে পারে। মায়ের ও শিশুর পুষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। পুষ্টির ওপর ভিত্তি করেই শিশুর দৈহিক ওজন ও উচ্চতা তৈরি হবে।

অস্বাভাবিক দৈহিক বৃদ্ধির মূল্যায়ন : মা বাবার কাছ থেকে শিশুটির দৈহিক বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বা হার জেনে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে শিশুর জন্মকালের দৈহিক ওজন ও আকার গুরুত্বপূর্ণভাবে বিবেচনা করা হবে। কিছু কিছু শিশু শুরু থেকেই লম্বাটে। কেউ কেউ আবার একটা নির্দিষ্ট সময় পর হঠাৎ করেই লম্বা হতে থাকে। এগুলোই শিশুর রোগটির ধরন সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে। যদি শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, পারিবারিক ধারাবাহিকতার অংশ হয়, সেটিও জেনে নেওয়া যাবে। কিছু ক্রমজোমাল ও জেনেটিক সমস্যা অস্বাভাবিক দৈহিক উচ্চতার কারণ হতে পারে। আবার হরমোনজনিত সমস্যাও এর কারণ হয়। মারফান সিন্ড্রোম (Marfan Syndrome) ও ক্লিনেফেল্টার সিন্ড্রোম (Klinefelter Syndrome) এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ। এ দুটি সমস্যা শনাক্তকরণের জন্য শারীরিক গঠনের মাপঝোঁক যেমন- মোট উচ্চতা, শরীরের উপরের অংশ ও নিচের অংশের উচ্চতার অনুপাত, প্রসারিত দুই হাতের মোট দৈর্ঘ্য, মুখগহ্বরের গভীরতা, চোখের কর্নিয়া ও ল্যান্সের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি দেখতে হবে। ক্লিনেফেল্টার সিনড্রমে কিশোরটির যৌবন প্রাপ্তি বিলম্বিত বা অসম্ভব হতে পারে। দুক্ষেত্রেই ক্যারিও টাইপিং করে রোগ শনাক্তকরণের চেষ্টা করা হতে পারে। খুব অল্প সময়ে দ্রুত দৈহিক উচ্চতা বৃদ্ধি প্রাপ্তিও ঘটতে পারে কারও কারও ক্ষেত্রে। যা উপরে উল্লিখিত ঘটনাসমূহের মতো নয়। এক্ষেত্রে সারা দেহের উচ্চতা বৃদ্ধিও ঘটতে পারে। আবার কোনো কোনো সময় শরীরের নির্দিষ্ট অংশের বৃদ্ধিও হতে পারে। এ সমস্যাটির নাম জায়গান্টিজম (Gigantism এবং Acromegaly)। এক্ষেত্রে দৈহিক কাঠামোর সব অংশেরই বৃদ্ধি ঘটে (হাড়, মাংসপেশি, বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ) যদি এ সমস্যাটি দৈহিক বৃদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার আগে শুরু হয়। আর দৈহিক বৃদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার পরে এ সমস্যা শুরু হয়, তবে বৃদ্ধিটা নির্দিষ্ট কিছু এলাকাতে সীমাবদ্ধ থাকে (হাত, পা, নিচের চোয়াল ইত্যাদি) এ সমস্যাটি গ্রোথ হরমোন (Groth Hormone) এর অতিরিক্ত নিঃসরণের কারণে হয়। গ্রোথ হরমোনের অতিরিক্ত নিঃসরণ হতে পারে পিটুইটারির টিউমারের কারণে। সেক্ষেত্রে আরও কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন- মাথাব্যথা, দৃষ্টি সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি। এটিই শনাক্তকরণের জন্য রক্তে গ্রোথ হরমোনের পরিমাণ পিটুইটারি গ্রন্থির নিরূপণ ইত্যাদি পদক্ষেপ হতে পারে।

ডা . শাহজাদা সেলিম, সহকারী অধ্যাপক

এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর