বৃহস্পতিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০১৮ ০০:০০ টা

ডায়াবেটিস ও রক্তের অস্বাভাবিক লিপিড

ডায়াবেটিস ও রক্তের অস্বাভাবিক লিপিড

আমাদের দেহের কোষসমূহ ও আন্তঃকোষীয় পদার্থের অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বিভিন্ন রকম লিপিড। নির্দিষ্ট পরিমাণ লিপিড (কোলেস্টেরল) যেমন জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে, তেমনি লিপিডের কোনো এক বা একাধিক উপাদানের মাত্রা কম-বেশি হলে তা অসুখের ঝুঁকি বাড়ায়। এখন এটা প্রতিষ্ঠিত যে, রক্তে অস্বাভাবিক মাত্রায় লিপিডের উপস্থিতি হৃদরোগ ও  রক্তনালির অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। এটি যাদের ডায়াবেটিস নেই তাদের জন্য যেমন সত্য, তেমনি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্যও তীব্রভাবে সত্য। রক্তের অস্বাভাবিক লিপিড টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগ ও  রক্তনালির অসুখ ২ থেকে ৪ গুণ বৃদ্ধি করে। রক্তের লিপিডের পাঁচটি উপদানের মধ্যে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ট্রাইগিসারাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়, এইচডিএল (উপকারী কোলেস্টেরল)-এর পরিমাণ কমে যায়। তবে এলডিএল (অপকারী কোলেস্টেরল)-এর পরিমাণ প্রায় স্বাভাবিক থাকে। যাদের ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ নেই তাদের জন্য রক্তে এলডিএল-এর নিরাপদ মাত্রা ১৩০ মিলিগ্রাম/ ডিএল-এর কম এবং এইচডিএল ৪০ মিলিগ্রাম / ডিএল-এর উপরে। আর যাদের ডায়াবেটিস আছে (অথবা কোনো রকম হৃদরোগ আছে) তাদের রক্তে এলডিএল ৭০ মিলিগ্রাম / ডিএল-এর কম ও এইচডিএল-এর পরিমাণ ৪০ মিলিগ্রাম/ ডিএল-এর বেশি। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের অতিরিক্ত ট্রাইপিসায়াইড একটি বড় ঝুঁকি। এজন্য এটিকে সহনীয় বা নিরাপদ মাত্রায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে গুরুত্ব সহকারে। রক্তের লিপিড সঠিক মাত্রায় রাখার প্রাথমিক পদক্ষেপ হলো জীবন-যাপন পরিশুদ্ধিকরণ। এর মধ্যে আছে দৈহিক ওজন কমানো, শারীরিক শ্রম বৃদ্ধিকরণ, সমসত্ত্ব চর্বি গ্রহণ কমানো ও একই সঙ্গে অসমসত্ত্ব চর্বি গ্রহণ বৃদ্ধিকরণ, শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া কমানো। আর রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা সঠিক পর্যায়ে রাখতে পারলে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখা সহজ। এক্ষেত্রে ইনসুলিন ইনজেকশন গ্রহণ যথেষ্ট সহায়ক। যারা এসব পদ্ধতি অবলম্বন করেও কোলেস্টেরল নিরাপদ মাত্রার আনতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাদের কোলেস্টেরল কমাতে খাবার ওষুধ প্রয়োজন হয়। তবে বর্তমান ধারণা মতে চল্লিশোর্ধ্ব ডায়াবেটিস রোগীদের প্রত্যেককেই লিপিড কমানোর ওষুধ সেবন করতে দেওয়া উচিত। তীব্রভাবে লিপিড কমানোর

ওষুধ ব্যবহার করে ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো যায়। তাই অবহেলা না করে ডায়াবেটিস রোগীদের এসব বিষয়ে যত্নবান ও সচেতন হতে হবে।

ডা.শাহজাদা সেলিম, সহকারী অধ্যাপক

এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব

মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর