রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার ও করণীয়

অধ্যাপক ডা. মো. আবু হানিফ

হেড অ্যান্ড নেক ক্যান্সার ও করণীয়

ক্যান্সারের সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। এর সুপ্ত রহস্য উদ্ঘাটন করার জন্য বিস্তর গবেষণা চলছে। সাধারণভাবে যা বোঝা যায় তা হলো মানুষের শরীরে প্রায় ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ থাকে। প্রতিটি কোষে একটি নিউক্লিয়াস থাকে। এই নিউক্লিয়াস হলো কোষের প্রাণ। কোষে থাকে ২৩ জোড়া ক্রোমজম। এই ক্রোমজমগুলো ডিএনএ দ্বারা গঠিত। প্রতিটি ডিএন’র মধ্যে থাকে অসংখ্য জিন। এই জিনগুলো কোষের বিভিন্ন কাজকে নিয়ন্ত্রণ করে তথা মানুষের শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই জিনগুলো মানুষের দৈহিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্যগুলো নির্ধারণ করে। এই অসংখ্য জিনের মাঝে কিছু কিছু জিন আছে যাদের বলা হয় প্রি ক্যান্সার জিন অর্থাৎ তারা যেকোনো সময় ক্যান্সার জিনে রূপান্তরিত হতে পারে। আরেক ধরনের জিন আছে যাদের বলা হয় টিউমার সাপ্রেসর জিন। এই জিনগুলো প্রি ক্যান্সার জিনকে নিবৃত্ত করে রাখে অথবা একটি ব্যালান্স অবস্থায় রাখে। ক্যান্সার সাপ্রেসর জিন যদি দুর্বল, অকেজো বা ডিলিট হয়ে যায় অথবা ডিএনএতে যদি লক্ষণটি দেখা দেয়, তখন প্রি ক্যান্সার জিনগুলো বেপরোয়া হয়ে ওঠে এবং ক্যান্সার জিনে পরিণত হয়। এই ক্যান্সার সেলটি তখন সব নিয়ম-কানুন অমান্য করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে এবং খুব দ্রুত একটি বড় টিউমারে পরিণত হয়। মানুষের যে কোনো কোষে যে কোনো সময় ক্যান্সার হতে পারে। অর্থাৎ মানুষের ধ্বংসের বীজ তার নিজের মধ্যে বপন করা আছে। আর কিছু জিন আছে যারা জন্মগতভাবেই খারাপ এবং বংশপরম্পরায় এই খারাপ জিন ট্রান্সমিট হচ্ছে। ফলে বংশগত ক্যান্সারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া ধূমপান, পান-জর্দা, গুল, সুপারি, মাদক, ভাইরাস, রেডিয়েশন, বিভিন্ন ক্যামিক্যাল ক্যান্সার তৈরিতে সাহায্য করে এবং জিনের পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে এবং ক্যান্সার সৃষ্টি করে।  মানুষের শরীরে ২০০ প্রকার কোষ আছে। ১০০ প্রকার ক্যান্সার মানুষকে আক্রমণ করে। ক্যান্সার মৃত্যুর ২ নম্বর কারণ। সারা বিশ্বে প্রতি ৬ জনে একজনের মৃত্যু হয় ক্যান্সারে। আইআরসির (আন্তর্জাতিক এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার) পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১২ সালে সারা বিশ্বে নতুন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪.১ মিলিয়ন এবং মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪.২ মিলিয়ন। এই হারে বৃদ্ধি পেলে ২০৩০ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২১.৭ মিলিয়নে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াবে ১৩ মিলিয়নে। বাংলাদেশে ক্যান্সারের কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। ২০১২ সালে গ্রোবক্যান’র পরিসংখ্যানে দেখা যায়, জনসংখ্যা ১৫ কোটি, ২৪ লাখ ৮ জন। ১২ লাখ ২৭ হাজার নতুন ক্যান্সার রোগী এবং ৯১.৩ হাজার ক্যান্সারজনিত মৃত্যু। প্রতি বছর ক্যান্সারে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা ২ লাখ।

হেডনেক ক্যান্সার: নাক, সাইনাস, মুখ-গহ্বর, জিহ্বা, শ্বাসনালি, খাদ্য নালির উপরিভাগ, লাল গ্রন্থির ক্যান্সারকে একত্রে বলে হেড নেক ক্যান্সার। বাংলাদেশে হেড নেক ক্যান্সারের রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ এবং প্রতি বছর ৭০ হাজার নতুন রোগী হেড নেক ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি বছর থাইরয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় প্রায় ৭.৫ হাজার রোগী। হেড নেক ক্যান্সারের রোগী দিন দিন বাড়ছে এবং ৬০ শতাংশ রোগী অ্যাডভান্স স্টেজে ডাক্তারের নিকট আসছে। বিলম্বে আসার প্রধান কারণ হলো অসচেতনতা, অবহেলা, রোগের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত না থাকা এবং অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা। প্রথমে রোগীরা নিজেরাই অসুখ সারানোর চেষ্টা করেন। কেউ কেউ অপচিকিৎসার শিকার হন।

এতে করেও বিলম্ব হয়। হেড নেক ক্যান্সার বিষয়টিও মানুষের কাছে নতুন। এই বিষয়টি নিয়ে খুব বেশি প্রচার-প্রচারণা নেই। হেড নেক ক্যান্সার চিকিৎসার বিষয়ে এখনি মনোযোগ না দিলে এটা ভবিষ্যতে ভয়াবহ সমস্যা সৃষ্টি করবে। হেড নেক ক্যান্সারের প্রধান চিকিৎসা হলো অপারেশন। প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সারের জন্য সার্জারিই যথেষ্ট। কিন্তু অ্যাডভান্স স্টেজের রোগীদের জন্য

অপারেশনের পরে এডজুভেন্ট চিকিৎসা হিসেবে রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপির প্রয়োজন হয়। যাতে করে পরবর্তী সময়ে রোগটি দেখা না দেয়।

লেখক : অধ্যাপক, নাক-কান-গলা ও হেড নেক ক্যান্সার বিভাগ, জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউট, মহাসচিব, হেড নেক ক্যান্সার সাপোর্ট ফাউন্ডেশন।

সর্বশেষ খবর