মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

কর্মজীবী নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি

অধ্যাপক ডা. আনিসুর রহমান

কর্মজীবী নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বেশি

বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্তন ক্যান্সার বা ব্রেস্ট ক্যান্সার অধিক হারে ধরা পড়ছে। আমাদের দেশে নারীদের মধ্যে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্যান্সারের অবস্থান থেকে বলতে গেলে প্রথম অবস্থানে চলে এসেছে। অন্য সব ক্যান্সারের মতো, ব্রেস্ট ক্যান্সার সম্পর্কে জ্ঞান ও সচেতনতা গত এক দশকে অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এখনো, এমনকি চিকিৎসকরাও ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঠিক কারণ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত নন। তবে বিশ্বব্যাপী অনেক জরিপ যাচাইয়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু ঝুঁকির কারণ আলাদা করা গেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু কারণ আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেমন, নারীদের নারী হওয়ার কারণেই ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়া, ক্রমবর্ধমান বয়স, পরিবারের অন্য কারও ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার ইতিহাস, তুলনামূলক অল্প বয়সে মাসিক শুরু হওয়া, তুলনামূলকভাবে দেরিতে রজঃনিবৃত্তি বা মেনোপজ হওয়া ইত্যাদি। অন্য যেসব কারণ ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায় সেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবন প্রক্রিয়া বা লাইফ স্টাইলের সঙ্গে জড়িত। আমাদের দেশের সমগ্র জনগোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ নারী এবং দেশের কর্মস্থলে অধিক হারে নারীরা এগিয়ে আসছে। উচ্চশিক্ষা, সামাজিক পরিবেশে সহায়ক পরিবর্তন, পারিপার্শ্বিক চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন এবং সর্বোপরি দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের কারণে বাংলাদেশের করপোরেট জগতে ইদানীং অধিক হারে অগ্রগণ্য নারীদের উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে কাজের চাপ, দৈনন্দিন প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হওয়ায় বাড়তি দুশ্চিন্তা ও সাফল্যে পৌঁছার ক্রমবর্ধমান ইচ্ছা, এ যুগের কর্মজীবী নারীদের চিন্তা-চেতনা ও জীবনযাত্রায় ব্যাপক পজিটিভ পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে এসব ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকির পরিপূরক। আমাদের বুঝতে হবে যে, যদিও এ আর্থ-সামাজিক অবস্থানগুলো সরাসরি ব্রেস্ট ক্যান্সারের কারণ নয়, তবে বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সমীক্ষায় বারবার এ পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্পৃক্ততা দেখা গেছে। নিঃসন্তান বা বেশি বয়সে প্রথম সন্তান জন্মদান, সন্তানকে ব্রেস্ট ফিড না করানোর বা কোনো কারণে মায়ের বুকের দুধ পান করাতে না পারা, স্থূলতা, অতিরিক্ত ফাস্টফুড খাওয়া, ধূমপান বা মদ্যপান এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ইত্যাদি ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। এছাড়াও আজকাল করপোরেট জগতে কর্মক্ষেত্রে নারীরা ডেস্কে বসেই প্রচুর কাজ করছেন এবং সময় বাঁচাতে অতিরিক্ত ফাস্টফুড দিয়েই দুপুরের খাবার সেরে নিচ্ছেন, ফলস্বরূপ শরীরে প্রচুর চর্বি জমে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে। এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে তবে কি করা যায়? সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে সচেতন হওয়া। আমাদের মেনে নিতে হবে যেসব নারীই নারী হওয়ার কারণেই ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকে এবং বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এ ঝুঁকি বাড়ে। নারীদের অধিক হারে কর্মক্ষেত্রে আসার কারণে এবং এ সংক্রান্ত জীবনযাত্রার পরিবর্তনের ফলে, কর্মজীবী নারীদের ও করপোরেট খাতে কর্মরত সর্বস্তরের নারীদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি তুলনামূলক বেশি দেখা যাচ্ছে। কাজেই সচেতনতা ও ঝুঁকি নিরূপণে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষাই এর একমাত্র প্রতিকার। ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সের নারীদের নিয়মিত প্রতি মাসে অন্তত একবার ব্রেস্ট সেল্ফ এক্সামিনেশন বা নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করা উচিত।  নারী তার নিজের পরীক্ষায় ব্রেস্টে কোনো অস্বাভাবিকতা যেমন ত্বকের রং পরিবর্তন বা চাকা বা কুঁচকানো ইত্যাদি পাওয়া গেলে, দেরি না করে একজন জেনারেল সার্জনের শরণাপন্ন হবেন। যদি নারীর বয়স ৪০ বা তার উপরে হয়, তবে প্রতি মাসে সেল্ফ এক্সামিনেশনের পাশাপাশি বার্ষিক একবার ম্যামোগ্রাম করা উচিত। ম্যামোগ্রাম এক ধরনের বিশেষ এক্স-রে পদ্ধতি যার মাধ্যমে খুব আগেই ব্রেস্ট ক্যান্সার শনাক্ত করা সম্ভব হয়। এগুলোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচেতন জীবনযাপন করা বাঞ্ছনীয় যেমন, সুষম খাদ্য গ্রহণ, গরু বা খাসির মাংস পরিহার ও সবুজ শাকসবজি খাওয়া। প্রতিদিন সময় করে নিয়মিত ব্যায়াম, সপ্তাহের ৫ দিন অন্তত ৪৫ মিনিট ছোট ছোট পায়ে দ্রুত হাঁটার অভ্যাস করাটা উপকারী। লেখক : কনসালট্যান্ট, জেনারেল

অ্যান্ড ল্যাপারোস্কপিক সার্জারি,

ইউনাইটেড হসপিটাল লিমিটেড, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর