সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

মন-হৃদয়-শরীর

অধ্যাপক ডা. এএইচ ওয়ালিউল ইসলাম

মন-হৃদয়-শরীর

উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ অন্যতম কারণ। উচ্চরক্তচাপ, বহুমূত্র রোগ, রক্তে চর্বি বা কোলেস্টেরলের আধিক্য বিশেষ করে LDL cholesterol, বংশানুক্রমিক, ধূমপান, অলস জীবনযাপন বা অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসে হৃৎরোগে আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ! বর্তমান যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশের ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি জেলার সরকারি তথা বেসরকারি হাসপাতালে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত ব্যক্তির তাৎক্ষণিক চিকিৎসার মাধ্যমে করোনারি অ্যানজিওগ্রামের মাধ্যমে রক্তনালির ব্লক নির্ধারণ ও রিং বা করোনারি stent প্রতিস্থাপনের দ্বারা পুনরক্ত সঞ্চালন করা হয়। হার্ট অ্যাটাকের ২-৬ ঘণ্টার মধ্যে এ চিকিৎসা সেবা নিতে পারলে হৃৎপিন্ডের ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমানো যায়। জেনে রাখা ভালো যে হার্ট অ্যাটাকের ফলে চিকিৎসা না ফেল যে ক্ষতি হয় বা হৃৎপিন্ডের মাংসপেশি দুর্বল হয় তা পূর্বের অবস্থায় ফিরানো যায় না। শুধু চিকিৎসা ব্যবস্থা নয়, নিয়মিত ওষুধ সেবন, সুষম খাদ্যাভ্যাস, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার ও সহনীয় পরিমাপ হাঁটার অভ্যাস হার্টের সুস্থতার জন্য অবশ্য পালনীয়। প্রকৃতপক্ষে মন ও শরীর একে অপরের পরিপূরক যা হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর রোগ নিরাময়ে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রভাব বিস্তার করতে পারে! চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর মনস্তাত্ত্বিক অবস্থার দিকে নজর দেওয়া উচিত। উল্লেখ্য, Takotsubo বা stress induced cardiomyopathy যা মনস্তাত্ত্বিক অস্থিতিশীলতা বা আবেগজনিত কারণে হয়ে থাকে। এতে রোগীর হৃৎপিন্ডের কর্মক্ষমতা কমে যায় ইসিজি ও রক্ত পরীক্ষার দ্বারা নির্ণিত খরা যেয়ে থাকে।

হঠাৎ অতিরিক্ত মাত্রার মানসিক চাপ হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে যা অস্বাভাবিক মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে তুলে। উদাহরণ স্বরূপ, ১৯৯৪ সালে লস এঞ্জেলেসে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্পের ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুঝুঁকি ২৬৪ গুণ বেড়ে যায়। দুশ্চিন্তা ও হৃদরোগের বা হার্ট অ্যাটাকের জন্য একটা ঝুঁকিপূর্ণ কারণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় যে দুশ্চিন্তার ফলে হৃদরোগে আক্রান্ত ২.৫-৪.৯% হার, সঙ্গে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দনসহ মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। বিষণœতায় আক্রান্ত রোগীরা সাধারণত নিয়মিত ওষুধ সেবন হতে বিরত থাকেন। ফলে হার্ট অ্যাটাক পরবর্তী মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। বিভিন্ন গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে সুস্থ মন মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর একটা পজেটিভ প্রভাব ফেলতে পারে যা কিনা হৃদরোগের নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পারতপক্ষে চিকিৎসার পাশাপাশি think positive attitude রোগীর পুন পুন হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে আনতে সহায়তা করতে পারে। মানসিক সুস্বাস্থ্য বা psychological well being রোগীর মনে সুখ শান্তি হৃদরোগের ও পরবর্তী জটিলতা হতে রক্ষা করতে পারে। Mind-Heart-Body বা মনের প্রশান্তি ও মানসিক সুস্বাস্থ্যের জন্য অনেক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সর্বজনবিদিত। তন্মধ্যে মেডিটেশন বা ধ্যান, মানসিক চাপ কমানোর প্রশিক্ষণ, ইয়োগা তথা নিয়মিত হাঁটা বা সহনীয় মাত্রার ব্যায়াম বিশেষ করে সান্ধ্যকালীন হাঁটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে।

উপরিউক্ত পদ্ধতির প্রয়োগে মনে প্রশান্তি, সুখ শান্তিসহ মনের দৃঢ়তা, ধূমপান পরিহার ও নিয়মিত ওষুধ সেবন তথা সুষম স্বাস্থ্যসম্মত স্বল্প কোলেস্টেরল যুক্ত খাদ্যাভ্যাস ও শারীরিক ওজন নিয়ন্ত্রণ রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। পরিশেষে, বিভিন্ন গবেষণা, তথ্য উপাত্তে বিষদ বর্ণনায় সর্বজনবিদিত যে মন- শরীর- হৃৎপিন্ডের মধ্যে যে সংযোগ আছে, তার জন্য শুধু হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা নয়, সঙ্গে রোগীর মানসিক পারিপার্শ্বিক সামাজিক অবস্থারও উন্নতির জন্য চিকিৎসার পাশাপাশি উপদেশ দেওয়া বাঞ্ছনীয়। লেখক : ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট,

এ্যাপোলো হসপিটালস, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর