আমাদের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। আর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগ। ডায়াবেটিস রোগী যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলে অনেক ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় করতে যথেষ্ট দেরি হয়ে যায়। কারণ ডায়াবেটিস রোগীর যক্ষ্মারোগের লক্ষণ সাধারণ যক্ষ্মারোগীর মতো নাও হতে পারে। যদিও যক্ষ্মারোগে প্রধানত ফুসফুস আক্রান্ত হয়ে থাকে কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ফুসফুসবহির্ভূত যক্ষ্মা আক্রান্তের হার অনেক বেশি। যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের অন্যতম পদ্ধতি হলো কফ পরীক্ষা করা এবং বুকের X-ray করা। এই দুই ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক সময় X-ray তে যক্ষ্মারোগের লক্ষণ সঠিকভাবে প্রকাশ পায় না এবং কফের মধ্যে জীবাণু পাওয়ার হার অনেক কম। ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে যক্ষ্মারোগ নির্ণয়ের জন্য High Degree of suspicion দরকার। যক্ষ্মারোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় অতিরিক্ত সাবধানতার দরকার হয়। সঠিক নিয়মে পূর্ণ মাত্রায় ওষুধ সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায়ও যক্ষ্মারোগের ওষুধ সমানভাবে কার্যকর। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। কারণ রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি হলে যক্ষ্মা বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং যক্ষ্মারোগের ওষুধ সঠিকভাবে কাজ নাও করতে পারে। সাধারণত বেশির ভাগ যক্ষ্মারোগীর ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। তবে যাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা এত বেশি নয় এবং অন্য কোনো ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা নেই, তাদের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ইনসুলিনের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে এনে পরবর্তীতে ইনসুলিনের পরিবর্তে ডায়াবেটিসের জন্য মুখে খাওয়ার ওষুধ দেওয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে যক্ষ্মার এবং ডায়াবেটিসের ওষুধ একই সঙ্গে প্রয়োগ করার ফলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কিনা তার প্রতি বিশেষ লক্ষ্য রাখতে হবে। ডায়াবেটিস একটি এমন রোগ যার দ্বারা শরীরের বেশির ভাগ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার যক্ষ্মারোগও অনেক সময় শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসার সময় অতিরিক্ত সাবধানতা প্রয়োজন। যেমন যদি কোনো ডায়াবেটিস ও যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর বুকে পানি জমে সেক্ষেত্রে যক্ষ্মারোগের ওষুধের সঙ্গে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ দিতে হয় যা রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এক্ষেত্রে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। তাই এসব বিষয়ে অবহেলা না করে সবাইকে সচেতন হতে হবে।
- অধ্যাপক ডা. একেএম মোস্তফা হোসেন, বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।