বৃহস্পতিবার, ৯ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে কিছু কথা

ক্যান্সার চিকিৎসা নিয়ে কিছু কথা

বিগত তিন দশক ধরে মানব জাতি ধীরে ধীরে অসংক্রামক ব্যাধির প্রাদুর্ভাব প্রত্যক্ষ করছে। অসংক্রামক ব্যাধির মধ্যে মৃত্যুহার বিবেচনায় হৃদরোগের পরই ক্যান্সারের অবস্থান। কিন্তু চিকিৎসা ব্যয়ের দিক থেকে ক্যান্সার বহুগুণ ছাড়িয়ে যায় হৃদরোগকে। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো (খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষা) এর মধ্যে প্রায় বেশির ভাগ পরিবার চিকিৎসা ব্যতীত বাকি চারটির জন্য অর্থ সঞ্চয় করে। তাই ক্যান্সারের মতো এমন ব্যয়বহুল চিকিৎসার আকস্মিক অর্থব্যয় মানুষকে হতভম্ব করে ফেলে। বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে দেড় লক্ষাধিক লোক নতুন করে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে। ক্যান্সার চিকিৎসায় ধরনভেদে সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোনথেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। ক্যান্সার চিকিৎসার ব্যয় শুরু হয় রোগ নির্ণয় থেকে। রোগ শনাক্ত এবং বিস্তার বোঝার জন্য সিটি স্ক্যান, এম আর আই, পেট সিটি স্ক্যান, বায়প্সিই, হিস্টো-প্যাথলজি, ইমিউওনোহিস্টোকেমিস্ট্রি পরীক্ষাগুলো বেশ ব্যয়বহুল। এই পরীক্ষাগুলো পরবর্তীতে চিকিৎসা চলাকালীন এবং চিকিৎসা শেষে, ফলোআপে পুনরায় করতে হয়। সব ধরনের পরীক্ষা একই হাসপাতালে না হওয়ায় অনেক সময় বাসস্থান থেকে অন্যস্থান যাওয়ার জন্য মানসিক ও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় হলে, বিশেষজ্ঞরা সার্জারির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। সার্জারির খরচ শরীরের অঙ্গভেদে ৫০ হাজার থেকে ২ লক্ষাধিক টাকা খরচ বহন করতে হয়। ক্যান্সার রোগীদের খরচের প্রধান অংশ হলো কেমোথেরাপি। কেমোথেরাপি প্রতি ২/৩ সপ্তাহ পরপর হয় এবং প্রতিটি সাইকেল থেরাপিতে গড়ে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। সাধারণত ৬ থেকে ১২ সাইকেল পর্যন্ত রোগীদের কেমোথেরাপি গ্রহণ করতে হয়। তবে সরকারি হাসপাতাল এবং রোগের বিস্তার কম হলে খরচ অনেক কম হয়। তাই ক্যান্সার সম্পর্কে জনমনে ব্যাপক সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। অনেকে (স্তন এবং জরায়ুমুখ ক্যান্সার রোগী) লোক লজ্জার ভয়ে ক্যান্সারের একেবারে শেষ ধাপে চিকিৎসার শরণাপন্ন হন যখন তা নিরাময়যোগ্য থাকে না। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যান্সার শনাক্ত হলে চিকিৎসা ব্যয় অনেক কমে যায়। বাংলাদেশ সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ক্যান্সার রোগীকে এককালীন ৫০ হাজার টাকা সহায়তা প্রদান করে। এ ছাড়া বিভিন্ন এনজিও ও দাতা সংস্থা ক্যান্সার রোগীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। রোগীদের আমাদের দেশে চিকিৎসা গ্রহণে উৎসাহী করার জন্য সেবার মান আরও বাড়ানো প্রয়োজন। সবচেয়ে বড় কথা, এ বিষয়গুলো আন্তরিকতার সঙ্গে বিবেচনা না করলে ক্যান্সার রোগীদের দুর্দশা ও হতাশা থেকে মুক্তি মিলবে না। তাই এসব বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সচেতন ও যত্নবান হতে হবে।

-ড. এস এম আশিকুর রহমান শিমুল, স্পেশালিস্ট, অনকোলজি বিভাগ, ইউনাইটেড হসপিটাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর