বৃহস্পতিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

নরমাল ডেলিভারি ও কিছু জিজ্ঞাসা

নরমাল ডেলিভারি ও কিছু জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন : ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি (ভ্যাজাইনাল) বলতে আমরা কী বুঝি?

উত্তর : এ ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি প্রক্রিয়ায় নরমাল ডেলিভারির সময় যেসব নার্ভগুলো  ব্যথার অনুভূতি বহন করে সেগুলো ব্যথানাশক ওষুধ দিয়ে অবশ করে দেওয়া হয়, ফলে রোগী নরমাল ডেলিভারির পেইন অনুভব করতে পারে না। তবে এ সময়ে হাঁটাচলা বা অন্যান্য কাজ স্বাভাবিকভাবে করতে পারবে। এ ব্যথানাশক প্রক্রিয়াটির নাম এপিডুরাল এনালজেসিয়া

প্রশ্ন : কীভাবে এবং কখন দেওয়া হয়?

উত্তর : তিনটি স্টেজ  আছে, যেমন-প্রথমে স্টেজ : লেবার পেইন শুরু হওয়ার পর থেকে জরায়ুমুখ পুরোপুরি খোলা (১০ সেমি) পর্যন্ত  সময়কে প্রথম পর্যায় ধরা হয়।

দ্বিতীয় স্টেজ : জরায়ু মুখ পুরোপুরি খোলার পর থেকে বাচ্চা ডেলিভারি পর্যন্ত।

তৃতীয় স্টেজ : এ সময় গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা ডেলিভারি হয়।

নরমাল ডেলিভারির প্রথম স্টেজে জরায়ুর মুখ যখন চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার খুলে যাবে এবং রোগী ব্যথা সহ্য করতে পারবে না তখন এ অবশের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এ প্রক্রিয়ায় মেরুদণ্ডের ভিতরে প্লাস্টিকের ক্যাথেটার প্রবেশ করানো হয় এবং এখান থেকে কিছুক্ষণ পর পর স্পাইনাল কর্ডের এপিডুরাল স্পেসে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া হয়।

প্রশ্ন : এ প্রক্রিয়ার সুবিধাগুলো কী কী?

উত্তর : প্রথমত যেসব রোগী নরমাল ডেলিভারির ব্যথা সহ্য করতে চাইত না তারা এখন এভাবে সহজেই ব্যথামুক্ত নরমাল ডেলিভারি করাতে সক্ষম হবে। এতে  নরমাল ডেলিভারির হার বেড়ে যাবে। এতে সুবিধা হচ্ছে সিজারজনিত জটিলতা থেকে মা মুক্ত থাকবে; যেমন সিজারের জন্য কিছুটা হলেও মায়ের মৃত্যুঝুঁঁকি বেড়ে যায়,  সিজারিয়ান ডেলিভারিতে ব্লিডিং এবং ইনফেকশন হওয়ার সম্ভাবনা নরমাল ডেলিভারির তুলনায় বেশি থাকে। সিজারের আরও কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে  অ্যাডহেশন তৈরি হওয়া অর্থাৎ পেটের ভিতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্বাভাবিক অবস্থান নষ্ট হয়। এ ছাড়াও একবার বা দুবার সিজার হলে পরবর্তীতে আবার সিজার করার দরকার পড়ে। তা ছাড়া সিজারের পরে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হতে সাধারণত দুই থেকে তিন মাস সময় লাগে, অন্যদিকে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হলে রোগী খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক কাজকর্ম শুরু করতে পারে। বাচ্চা নরমাল প্রক্রিয়ায় হওয়ার কারণে শ্বাসকষ্ট এবং অ্যালার্জিজনিত রোগে ভোগার আশঙ্কা কম থাকে।

প্রশ্ন : অসুবিধাগুলো কী কী?

উত্তর : ডেলিভারির দ্বিতীয় স্টেজে মা যেহেতু জোরে পুশ করতে পারে না, তাই সাধারণ নরমাল ডেলিভারির চেয়ে এখানে সময় বেশি লাগার সম্ভাবনা থাকে। তা ছাড়া এ প্রক্রিয়াটি কিছুটা ব্যয়বহুল। তবে এ এনালজেসিয়ার কারণে বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

প্রশ্ন : এপিডুরাল এনালজেসিয়া বা অবশকরণের জন্য নরমাল ডেলিভারি হওয়ার সম্ভাবনা কি কমে যেতে পারে?

উত্তর : এপিডুরালের কারণে নরমাল ডেলিভারি হওয়ার চান্স কমে না, তবে যে কোনো নরমাল ডেলিভারির আগে থেকে ১০০ ভাগ শিউর হওয়া যাবে না যে শেষ পর্যন্ত নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে বাচ্চা হবে কি না। অনেক সময় দেখা যায় কোনো স্টেজে এসে বাচ্চা আটকে গেলে কিংবা ফিটাল ডিসট্রেস/বাচ্চার শ্বাসকষ্ট হলে সিজার দরকার হতে পারে।

প্রশ্ন : সব মায়েরাই কি

এভাবে ডেলিভারি করানোর জন্য উপযুক্ত?

উত্তর : যেসব মায়েদের নরমাল ডেলিভারির জন্য সিলেক্ট করা হয়,

তাদের সবাই এপিডুরাল নিতে পারবেন। তবে গর্ভকালীন একবার এনেসথেসিস্ট ডাক্তারের

মাধ্যমে চেকআপ করানো হয়।

প্রশ্ন : এভাবে ডেলিভারি করানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠানে কী কী সুবিধা থাকা জরুরি?

উত্তর : প্রথমত, লেবারকালীন মা ও বাচ্চার মনিটরিংয়ের জন্য এক্সপার্ট ম্যানপাওয়ার বা লোকবল থাকতে হবে। একজন অভিজ্ঞ এনেসথেসিস্ট এবং ইমারজেন্সি সিজার করার সুবিধা থাকা অবশ্য জরুরি। এ ছাড়াও মা ও বাচ্চার সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের জন্য সিটিজি মেশিন দরকার হয়।

তাই এসব বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।

উত্তর দিয়েছেন- ডা. উম্মুল নুসরাত জাহান

সহযোগী অধ্যাপক, কনসালটেন্ট (অবস-গাইনি), বিআরবি হসপিটালস লি. ঢাকা।

সর্বশেষ খবর