বুধবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

এইডস : বাড়াতে হবে সচেতনতা

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

এইডস : বাড়াতে হবে সচেতনতা

গত ১ ডিসেম্বর ছিল বিশ্ব এইডস দিবস। এইডসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সারা বিশ্বে এ দিনটি পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘কমিউনিটির আমন্ত্রণ, এইডস হবে নিয়ন্ত্রণ’। জানা যায়, ১৯৮৮ সাল থেকে সারা বিশ্বে আজকের দিনে দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশে প্রথম এইডস রোগী শনাক্ত হয় ১৯৮৯ সালে। বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে আক্রান্ত কম হলেও ঝুঁকি বেশি। কারণ পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মিয়ানমার এ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এইচআইভি সংক্রমিত ১ হাজার ১০০ জন শনাক্ত হয়েছেন। বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ ২০২২ সালের তথ্য মতে, দেশে অনুমিত এইচআইভি সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা ১৪ হাজার ৫১৩ জন। এর মধ্যে এ বছর মৃত্যু হয়েছে ১২০ থেকে ১৩০ জনের। আগের বছর ২০২২ সালে মৃত্যু হয়েছিল ২৩২ জনের। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের কল্যাণে, উন্নত চিকিৎসায় এবং মানুষের সচেতনতার কারণে সংক্রামক রোগের সংখ্যা কমে যাচ্ছে, বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধি। তারই একটি হলো এইডস।

এইচআইভি এবং এইডস কী : এইডস এক আতঙ্কের নাম, এক মরণ ব্যাধি, এক সংক্রামক রোগ। সারা বিশ্বেই এ রোগের ছড়াছড়ি, এমনকি মহামারি। তবে খুব কম মানুষই এ রোগের সঠিক তথ্য সম্পর্কে অবগত আছেন। সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে রোগটি ভীতিকর হলেও প্রতিরোধযোগ্য। হিউম্যান ইমিউনো-ডেফিসিয়েনসি ভাইরাস (এইচআইভি) এ রোগের জীবাণু।

কীভাবে ছড়ায় এবং কারা ঝুঁকিপূর্ণ : অসচেতনতা, সঠিক দৃষ্টিভঙ্গির অভাব, সুস্থ জীবনের অনুশীলন না করাই এ রোগের প্রধান ঝুঁকি।

এইচআইভি সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো- * এইচআইভি আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে কনডম ছাড়া যৌন মিলনের মাধ্যমে। * সমকামী, বহুগামী ব্যক্তি এবং বাণিজ্যিক ও ভাসমান যৌনকর্মীরা বেশি ঝুঁকিতে থাকে। * আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত শরীরে গ্রহণের মাধ্যমে।  * যুব সমাজের মধ্যে নেশার আধিক্য এবং ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদকদ্রব্য গ্রহণ। * আক্রান্ত ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেমন কিডনি, অস্থিমজ্জা, চোখের কর্নিয়া ইত্যাদি শরীরে সংস্থাপনের মাধ্যমে। * আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহƒত টুথব্রাশ ও ক্ষত সৃষ্টিকারী যন্ত্রপাতি যেমন সুচ, সিরিঞ্জ, কাঁচি, ব্লেড, রেজার, ক্ষুর ইত্যাদি ব্যবহারের মাধ্যমে।  * আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ব্যবহার করা ডাক্তারি যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত না করে ব্যবহার করলে। * কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেও এ ভাইরাস মানুষের শরীরে বছরের পর বছর সুপ্ত অবস্থায় থাকতে পারে এবং অন্যকে সংক্রমিত করতে পারে। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে এ ভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়।

এইচআইভি কীভাবে ছড়ায় না : আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে করমর্দন করলে বা একই ঘরে বসবাস করলে। * আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা, চলাফেরা ও খেলাধুলা করলে বা তাকে স্পর্শ করলে। * আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহƒত থালাবাসন, গ্লাস, বিছানা, বালিশ ইত্যাদি ব্যবহার করলে। *  আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি, কাশি, থুথু বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। * এইডস রোগীর সংস্পর্শে আসা কোনো স্বাস্থ্যকর্মী যেমন- চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী। * মশা-মাছির বা পোকামাকড়ের কামড়ের মাধ্যমেও এইচআইভি ছড়ায় না।

প্রতিরোধে করণীয় : যেহেতু এইচআইভির বিরুদ্ধে প্রতিষেধক কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি, তাই প্রতিরোধ করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এইচআইভি প্রতিরোধের মূল উপাদান হলো শিক্ষা, সচেতনতা, ঝুঁকি অনুধাবনের মাত্রা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও ধারণা। এইচআইভি প্রতিরোধে অন্যতম করণীয়- ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা এইডস প্রতিরোধের অন্যতম উপায়। যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে ধর্মীয় এবং সামাজিক অনুশাসন মেনে চলতে হবে। বিবাহপূর্ব যৌন সম্পর্ক এড়িয়ে চলতে হবে। শুধু বিশ্বস্ত একজন স্বামী বা স্ত্রীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক রাখতে হবে। একাধিক যৌনসঙ্গী পরিহার করতে হবে। * নিরাপদ যৌনক্রিয়ার অভ্যাসের মাধ্যমে অসংক্রামিত লোক এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে পারে। নিয়মিত ও সঠিকভাবে কনডম ছাড়া যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। অবাধ এবং অবৈধ যৌনক্রিয়া থেকে বিরত থাকাই হলো এইচআইভি সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকার সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা। * এইচআইভিতে আক্রান্ত ব্যক্তিরও মনে রাখা উচিত তার ব্যবহƒত সুই বা ইনজেকশন অন্যকে ব্যবহার করতে দেবেন না। * একবার ব্যবহার করা যায় এমন জীবাণুমুক্ত সুচ বা সিরিঞ্জ ব্যবহার করতে হবে। * শরীরে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ গ্রহণের প্রয়োজন হলে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে সে রক্ত বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে এইচআইভি নেই।  সর্বোপরি একসঙ্গে এইডসের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। বাড়াতে হবে সচেতনতা। তাহলেই এইডসমুক্ত বিশ্ব গড়া সম্ভব।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর