বুধবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিয়ন্ত্রণে রাখুন উচ্চরক্তচাপ

নিয়ন্ত্রণে রাখুন উচ্চরক্তচাপ

বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগেই নিয়ন্ত্রণে রাখুন প্রেশার বা রক্তচাপ। উচ্চরক্তচাপ বা হাইপ্রেশার এমন একটি রোগ এর সঠিক কারণ পুরোপুরিভাবে জানা যায়নি। তবে কেউ উচ্চরক্তচাপ স্বাভাবিক (আন্তর্জাতিক পরিমাপ) রাখলে রক্তচাপের প্রভাবে যেসব রোগ বা ও অন্যান্য জটিলতা যেমন- কিডনি ডিজিজ, ব্রেইন ডিজিজ ইত্যাদি আক্রমণ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে। হোক না সেটা সাময়িক, এটাকেই বলা হয় জৈবিক সমস্যা। আমরা বর্তমান সময়ে কেউ অর্থনৈতিক, কেউবা সামাজিক কারণেই অলস হয়ে পড়ছি।

একটা কথা আছে, পরিশ্রমে ধন আনে আর কর্মে আনে সুখ। বর্তমান সময়ে রোগকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, যা খুব দ্রুত ছড়ায় কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয় না যেমন- (সাময়িক রোগ) করোনা অথবা নিপাহ ভাইরাস, অন্যটাকে বৈজ্ঞানিক ভাষায় বলা হয়, লাইফ স্টাইলজনিত রোগ বা দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন হাইপ্রেশার, ডায়াবেটিস এবং হার্টের রোগ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা, যুদ্ধংদেহি মনোভাব, বিষণ্নতায় ভোগা, বিমর্ষতা সামাজিকতা ও খাদ্যাভ্যাস, সর্বোপরি কর্মবিমুখতা, তার থেকে অলসতা সব মিলে রোগ। যা মানসিক উদ্বেগ উৎকণ্ঠাকে আরও বেশি বেগবান করে। একবার কেউ এ চক্রে পতিত হলে উদ্ধার পাওয়াটা বেশ কঠিন বলেই ধরে নেওয়া হয়।

মানুষ বিজ্ঞানভিত্তিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলে মুক্তি পেতে পারে, যেমন- প্রয়োজনমাফিক খাব, নিজের প্রয়োজন নিজে বোঝার জন্য যতটুকু জ্ঞান থাকা দরকার তা অর্জন করা, তা না হলে প্রয়োজন বুঝতে পারবেন না। আরও একটা বিষয় হলো- কখনোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা যাবে না। ওজন বংশগত প্রথা নয় হিসেবে বয়সভিত্তিক নির্ণয় করে তা বজায় রাখতে হবে। মানুষ যদি পুষ্টিকর খাবার না খায় এবং প্রয়োজনীয় কায়িক শ্রম যেমন হাঁটা, উপরে উঠা, নিচে নামা, ওজন বহন করা এবং মাঝেমধ্যে অপরের সঙ্গে দৌড়ে আক্রমণ করা অথবা পলায়ন করা- এ ধরনের কায়িক শ্রম প্রত্যেক মানুষকে অবশ্যই করতে হবে। এসবকে একত্রে খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনধারা (স্বাস্থ্যকর) বলা হয়। মানুষ অত্যধিক যান্ত্রিক হওয়ার ফলে জীবনধারা বা লাইফ স্টাইলজনিত রোগগুলোর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি পরিলক্ষিত হতো না। উচ্চরক্তচাপ যে জন্যই হোক না কেন প্রাথমিক এবং ক্ষেত্র বিশেষে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত সময়ে কোনোরূপ উপসর্গ পরিলক্ষিত না হওয়ার জন্য মানুষ বুঝতে পারত না। কিন্তু বর্তমান সময়ে রক্তচাপ পরিমাপের যন্ত্রের প্রাপ্ততা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়া অনেক সময়ই প্রাথমিক অবস্থা থেকেই উচ্চরক্তচাপ নির্ণয় হচ্ছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় মানুষ ওষুধ গ্রহণে আগ্রহী হয় না, নিজে নিজেই নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করে আবার ভুলে যায়। এভাবে জটিলতা বৃদ্ধি পেলেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়।

হাইপ্রেশার থাকলে মানুষের হার্টকে অধিক পরিশ্রম করে সারা শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে হয়। যদি হার্টকে অনেক সময় ধরে অধিক পরিশ্রম করে তার কাজ করতে হয়, তবে ধীরে ধীরে তার কর্মক্ষমতা কমতে থাকবে, হার্ট তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে কমতি দেখা দেওয়াকে হার্টের দুর্বলতা বা হার্ট ফেইলুর (মানে পাস নম্বর পায়নি) সৃষ্টি হয়ে থাকে। কেউ কেউ তারও আগে থেকে পরিশ্রমে বুক ব্যথা, পরিশ্রমে হাপিয়ে যাওয়া বা হাঁপিয়ে ওঠা, কেউ কেউ এটাকে দম আটকে আসা, কেউ বলে হাঁসফাঁস লাগে, কারও কারও বুক ধড়ফড় করে থাকে। এককভাবে বা অন্য উপসর্গের সঙ্গে, কেউ কেউ চলতে চলতে থেমে যান আবার চলতে পারেন, কেউ শক্তির কাজ করতে পারেন না। হাইপ্রেশার থেকে হার্ট আক্রান্ত হওয়ার আগেই প্রেশার নিয়ন্ত্রণে রাখুন, সেটা লাইফ স্টাইলের মাধ্যমে হলে ভালো। যদি তা না হয় তবে লাইফ স্টাইলের সঙ্গে ওষুধ গ্রহণ করুন। আশা করছি সুফল পাবেন। তাই সচেতন হওয়া জরুরি। কথায় আছে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর