মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০২৪ ০০:০০ টা
ওয়ার্ল্ড অ্যাজমা ডে

বায়ুদূষণ ও হাঁপানি নিয়ে কিছু কথা

বায়ুদূষণ ও হাঁপানি নিয়ে কিছু কথা

বিশুদ্ধ বায়ু পরিবেশের আত্মা। বায়ুতে সাধারণত ২১ শতাংশ অক্সিজেন, ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন, দশমিক ৩১ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং নির্দিষ্ট অনুপাতে ওজন, হাইড্রোজেন ইত্যাদি থাকে। যদি কোনো কারণে বাতাসে অক্সিজেনের ঘাটতি হয়ে অন্য গ্যাসের ঘনত্ব কিংবা বালুকণার হার বেড়ে যায় তবে সেটি দূষিত হয়ে যায়। আমরা বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করি। কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়ি। বৃক্ষরাজি অক্সিজেন নিঃসরণের মাধ্যমে বাতাসকে সজীব ও নির্মল রাখে। কিন্তু প্রকৃতির বাতাসে এখন শুধুই বিষের হাতছানি। বাতাসে ভাসছে বিষ। রাজধানীবাসীর প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার কোনো সুযোগ আসলে নেই। কারণ নিঃশ্বাসের সঙ্গে বিষ ঢুকে যায়। বর্তমানে ঢাকার বাতাসে বলতে গেলে যেন বিষই উড়ে বেড়াচ্ছে। এর অন্যতম আনুসঙ্গ বিভিন্ন কালো ধোঁয়া ও নাগরিক বর্জ্যও রয়েছে। বায়ুদূষণ যেন নগরজীবনের একটি স্থায়ী সমস্যার নাম। বাসা থেকে বের হলেই এ বায়ুদূষণ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করতে পারেন রাজধানীবাসী।

ফুসফুসের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রোগ, যাতে ভুগছে এ দেশের লাখো মানুষ, রোগটির নাম- সিওপিডি। এটি ফুসফুসের এমন একটি রোগ যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুসের শ্বাসরোধক প্রক্রিয়াটি ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং তা মূলত হয়ে থাকে দূষিত বাতাস গ্রহণের কারণে

মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে ঢাকা শহরের মানুষ প্রতিনিয়ত অ্যাজমা (হাঁপানি), ক্রনিক অবসট্রাক্টিভ পালমোনারি রোগ (সিওপিডি) ও ফুসফুসের ক্যান্সারসহ মারাত্মক অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। ধুলায় আচ্ছন্ন শহরটি যেন কুয়াশার মতো ঢেকে থাকে সারাক্ষণ। বায়ুদূষণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। রাজধানীর ছয়টি স্কুলের শিশুদের ফুসফুসের কার্যকারিতার ওপর গবেষণা চালানো হয়। গবেষকরা বলছেন, ২৫ শতাংশ শিশুর ফুসফুস পূর্ণ মাত্রায় কাজ করছে না এবং এদের বেশির ভাগেরই বয়স ৯ থেকে ১৪ বছরের মধ্যে। বায়ুদূষণের ফলেই এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান গবেষকরা।

এদিকে, আজ বিশ্বব্যাপী পালিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড অ্যাজমা ডে বা বিশ্ব হাঁপানি দিবস। বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে দিবসটি। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে অংঃযসধ ঊফঁপধঃরড়হ ঊসঢ়ড়বিৎং হাঁপানি শিক্ষাকে শক্তিশালী করে। হাঁপানিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের তাদের রোগ পরিচালনা করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে ক্ষমতায়ন করা এবং কখন চিকিৎসা সহায়তা নিতে হবে তা চিনতে হবে।

বায়ুদূষণের কারণে কীভাবে হাঁপানি হয়?

হাঁপানি ফুসফুসে বারবার হয়ে চলা একটি প্রদাহজনিত অবস্থা, যাতে কিছু উদ্দীপক প্রদাহ তৈরি করে সাময়িকভাবে শ্বাসনালি সরু করে দেয়। এর ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। রাস্তাঘাটে প্রতিনিয়ত যে ধুলা উড়ছে, তা হাঁপানি বা শ্বাসকষ্টের প্রধান কারণ। ধুলাবালু মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের সঙ্গে শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে শ্বাসকষ্টের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। দূষিত বায়ুর কারণে এ রোগের রোগীর সংখ্যা আরও বাড়ছে। ফ্রি রেডিক্যাল দেহকোষগুলোর ক্ষতি করে। দূষিত বায়ু ফুসফুসে ঢোকার পর সেখানে ফ্রি রেডিক্যালের সৃষ্টি হতে পারে। শ্বাসতন্ত্রের অসুখ সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে এসব ফ্রি রেডিক্যাল।

সিওপিডি কীভাবে হয়?

বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, ক্রমবর্ধমান পরিবেশ দূষণ এবং মানুষের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অসংক্রামক ব্যাধি। ফুসফুসের একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ রোগ, যাতে ভুগছে এ দেশের লাখো মানুষ, রোগটির নাম- সিওপিডি। বাংলা করলে দাঁড়ায় ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসরোধক রোগ। এটি ফুসফুসের এমন একটি রোগ যার ফলে শ্বাসপ্রশ্বাস বাধাগ্রস্ত হয় এবং রোগী শ্বাসকষ্টে ভোগেন। ফুসফুসের শ্বাসরোধক প্রক্রিয়াটি ক্রমেই বাড়তে থাকে এবং তা মূলত হয়ে থাকে দূষিত বাতাস গ্রহণের কারণে, ফুসফুসে সৃষ্ট প্রদাহের জন্য।

কীভাবে বায়ুদূষণের কারণে ফুসফুসে ক্যান্সার হয়?

বাতাসে কার্বন মনোক্সাইড ও সালফার ডাই-অক্সাইডের প্রাবল্য মানুষের ফুসফুসের প্রদাহ বাড়াচ্ছে। দূষিত বায়ু ফুসফুসে ঢোকার পর সেখানে ফ্রি রেডিক্যালের সৃষ্টি হতে পারে। ফুসফুসের ক্যান্সার সৃষ্টিতে ভূমিকা পালন করে এসব ফ্রি রেডিক্যাল।

বায়ুদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঠেকাতে কী করণীয়?

দূষিত বায়ুর হাত থেকে ফুসফুসকে বাঁচাতে সার্জিক্যাল/কাপড়ের মাস্ক সবচেয়ে কম কার্যকরী। ফিল্টারযুক্ত মাস্কের মধ্যে বা প্যাকেটের গায়ে এর কার্যকারিতার মাত্রা লেখা থাকে। ফিল্টারের কার্যকারিতা বোঝাতে ৯৫, ৯৯, ১০০ ইত্যাদি সংখ্যা ব্যবহার করা হয়। ৯৫ সংখ্যা দিয়ে নির্দেশ করা হচ্ছে- এ মাস্ক বায়ু থেকে ৯৫ শতাংশ দূষিত উপাদান ফিল্টার করতে সক্ষম। ৯৯ শতাংশ কার্যকারিতাসম্পন্ন ক্যাটাগরির মাস্ক ৯৯ হতে পারে একটি ভালো বিকল্প। এটা একই সঙ্গে সাশ্রয়ী ও বায়ুর দূষিত উপাদান পরিশোধনে কার্যকরী। হাঁপানি এবং সিওপিডি রোগে যারা ভুগছেন তাদের রক্তে ভিটামিন সি-এর মাত্রা কমে গেলে বায়ুতে দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার সময় শ্বাসকষ্টে ভোগার ঝুঁঁকি বাড়ে। লেবু, আমলকী, পেয়ারা, জাম্বুরা, আনারস, আমড়া, আম, আঙুর, কাঁচা মরিচ, জলপাই, বরই, কামরাঙা, টমেটো, বাঁধাকপি, কমলালেবু ইত্যাদি ভিটামিন সি এর গুরুত্বপূর্ণ উৎস।

বায়ুদূষণ রোধে বেশি বেশি গাছ লাগানো দরকার। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ বছরে ৭৫০ কেজি অক্সিজেন গ্রহণ করে। এ পরিমাণ অক্সিজেনের জন্য ৭/৮টি বড় গাছ প্রয়োজন। নগরীর সড়কের পাশে গাছ লাগানো, পার্কগুলো সংস্কার করা, গাছ কাটা বন্ধ করা, সড়কের মাঝে আইল্যান্ডে গাছ লাগানো এবং বাসাবাড়ির সামনে খোলা জায়গায় গাছ লাগানো যেতে পারে। প্রয়োজনে ছাদবাগান করা যেতে পারে। তাই এসব বিষয়ে আমাদের যত্নবান হতে হবে।

-অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আজিজুর রহমান, মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ, হেলথকেয়ার ডায়াগনোস্টিক সেন্টার লিমিটেড, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর