শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০২৪ ০০:০০ টা

ঈদ-পরবর্তী স্বাস্থ্য সচেতনতা

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

ঈদ-পরবর্তী স্বাস্থ্য সচেতনতা

যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্যদিয়ে  উদযাপিত হলো ঈদুল আজহা। ঈদ মানেই আনন্দ, ঈদ মানেই খুশি। আর এই আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো বাহারি খাবার। বিশেষ করে কোরবানির ঈদে  খাবার টেবিলে গরু ও খাসির মাংসের প্রাধান্য থাকে বেশি। খাওয়া-দাওয়া, ব্যস্ততা, বেড়ানো এবং হরেক রকমের উপভোগ- এসবেই শেষ হলো ঈদ আনন্দ। এ সময় স্বাস্থ্যের কথা মাথায় না রেখে মুখরোচক খাবারের দিকেই বেশি ঝুঁকে যাই আমরা। আর এটিই বয়ে আনতে পারে নানাবিধ বিপদ। ঈদ-পরবর্তী আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে একটু বেশি বেশি যেতে হয়। যাওয়া হয় বন্ধুবান্ধবের বাড়িতেও, জীবনে যোগ হয় আরও আনন্দ। ঈদের দিনগুলোতে এবং ঈদ-পরবর্তী যে হরেক রকমের মজার মজার খাবার রান্না হচ্ছে, তা যে একেবারেই খাওয়া যাবে না তা নয়। মূল সমস্যাটা নিঃসন্দেহে খাবারের পরিমাণ। তাই ঈদ উৎসবে খাওয়া-দাওয়ায় চাই একটু সচেতনতা, যা ঈদ-পরবর্তী বিভিন্ন ঝুঁকি থেকে বাঁচিয়ে রাখতে আমাদের সাহায্য করে। প্রায় ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত খাবারের মাধ্যমে ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ আগের তুলনায় হয়তো বেড়ে যায়, এটাই স্বাভাবিক। ঈদের খাবারকে মুখরোচক করতে গিয়ে নানা রকম ঘি ও মসলা ব্যবহার করা হয়। আর এতেই খাবারে কোলেস্টেরলের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে বেশ কিছু অসুস্থতার যোগসূত্র রয়েছে, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক, ব্রেন স্ট্রোক ইত্যাদি। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার বৃদ্ধি ঘটলে আনুপাতিক হারে এসব রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ঈদের এই সময়টা খাবার পরিবর্তনের ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগীদের সমস্যা বা জটিলতা বেড়ে যেতে পারে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ওষুধের পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগীদের জটিলতা প্রশমনে এ সময় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি, নিজেকে শারীরিক ও মানসিকভাবে সক্রিয় রাখাও অতীব গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত ব্যায়াম সামগ্রিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে পারে। এটি স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে। যারা নিয়মিত হাঁটতেন, ব্যায়াম করতেন, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ করতেন, কিন্তু ঈদে তা বজায় রাখতে পারেননি, তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার পুরনো অভ্যাসে ফিরে যেতে শুরু করুন। তবে প্রাথমিক অবস্থায় ধীরে ধীরে চালু করা উচিত। হাঁটতে, ব্যায়াম করতে যদি কোনো অসুবিধা অনুভূত হয় যেমন- সহজে হাঁপিয়ে যাওয়া বা বুকে ব্যথা অনুভূত হওয়া, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বাঞ্ছনীয়। ঈদ-পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা এড়াতে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেগুলো থেকে ভালো থাকা সম্ভব: (১) কোরবানির মাংস খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে পরিমাণটা বজায় রাখতে হবে। ঈদের আনন্দে হঠাৎ করে বেশি মাংস খাবেন না। কোথাও বেড়াতে গিয়ে হোটেল রেস্তোরাঁ বা বন্ধু-বান্ধবের বাসায় খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দাওয়াতে গেলে অতি ভোজন পরিহার করার চেষ্টা করবেন। হয়তো খাবার টেবিলে হরেক রকমের খাবার সাজানোই থাকবে, কিন্তু খেতে বসলেই সব খেতে হবে, তা ঠিক নয়।

(২) রাতের খাবার খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বেন না। খাওয়ার অন্তত দুই ঘণ্টা পর বিছানায় যাবেন। খাবারের ফাঁকে ফাঁকে পানি পান করবেন না, এতে হজম রসগুলো পাতলা হয়ে যায়, ফলে হজমে অসুবিধা হয়। তাই খাওয়ার অন্তত একঘণ্টা

পর পানি পান করুন।

(৩) কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে বেশি বেশি পানি, শাক-সবজি, সালাদ, ইসবগুলের ভুসি, বেল, পেঁপে, দুধ, দই ইত্যাদি খেতে পারেন। মাংস, পোলাও, বিরিয়ানি বা কাচ্চি ইত্যাদি কম খাওয়া উচিত।

(৪) ডায়রিয়া, আমাশয় প্রতিরোধে বিশুদ্ধ

পানি পান করুন। পাশাপাশি বাইরের খাবার, যেমন- চটপটি, ফুচকা, হালিম ইত্যাদি পরিহার করুন। প্রয়োজনে এসব খাবার ঘরে বানিয়ে নিন।

(৫) উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা লবণযুক্ত,

চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। নিয়মিত

রক্তচাপ চেক করবেন।

(৬) ডায়াবেটিস রোগীরা রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণ রাখতে অবশ্যই খাদ্য নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে সচেতন থাকবেন, কম চিনিযুক্ত খাবার খাবেন। অবশ্যই রক্তের সুগার মাঝেমধ্যে চেক করে দেখবেন।

(৭) কিডনির সমস্যা থাকলে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন ডিম, মাছ, মাংস অবশ্যই পরিমাণ মতো এবং ডাক্তারের নির্দেশমতো খেতে হবে।

(৮) বেশি করে বিশুদ্ধ পানি ও তরল খাবার, ডাবের পানি, বাসায় বানানো দেশি ফলের জুস খান। পানি শূন্যতার অভাব দূরকরণের জন্য বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করবেন। ঈদের পর ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চেকআপ করিয়ে নিন। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিবারকে নিয়ে সুস্থ ও নিরাপদে থাকুন। ঈদ-পরবর্তী যেকোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং সুস্থ থাকুন।

প্রতিকার নয়, এসবক্ষেত্রে প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক।

সর্বশেষ খবর