বুধবার, ১৭ জুলাই, ২০২৪ ০০:০০ টা

বুকে ব্যথা নিয়ে কিছু কথা

বুকের ব্যথার হাজারও কারণ থাকতে পারে, সুতরাং এক কথায় বুকের ব্যথার কারণ বলাটা খুবই দুষ্কর

বুকে ব্যথা নিয়ে কিছু কথা

পূর্ণ বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে যদি কারও বুকে ব্যথা দেখা দেয়, তবে বেশির ভাগ লোকজন সর্বপ্রথম গ্যাসের ব্যথা মনে করে তার প্রতিকার নেওয়ার চেষ্টা করে থাকেন। গ্যাসের ওষুধ সেবন করে অনেকেই সুস্থতা বোধ করেন যার ফলে এটা তার মনে করাই স্বাভাবিক যে, এ ধরনের ব্যথা গ্যাসের জন্যই হয়ে থাকে। বাংলাদেশে যত ধরনের ওষুধ বিক্রি হয় তার মধ্যে সব চেয়ে বেশি বিক্রীত ওষুধ হলো গ্যাসের ওষুধ। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো গ্যাসের ওষুধের কোনোরূপ তাৎক্ষণিক পাশর্^প্রতিক্রিয়া বা কোনো ধরনের তাৎক্ষণিক জটিলতা হতে দেখা যায় না। এসব বিবেচনা করে ফার্মেসিম্যাননা নিঃসংকোচে গ্যাসের ওষুধ প্রদান করে থাকেন। তাহলে বুকের ব্যথা কেন হয়? বুকে ব্যথা হওয়ার অনেক কারণ থাকে, প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় বুকের ব্যথা হতে পারে, শ্বাসনালি, ফুসফুসের অনেক অসুস্থতায় এবং হাঁপানিতে বুকেব্যথা হতে পারে। যারা অনেক দিন যাবৎ হাঁচি কাশিতে ভুগছেন তাদেরও বুকে ব্যথা হতে পারে। বুকের পাঁজরের বিভিন্ন অস্থিসন্ধিতে প্রদাহ হলে বুকের ব্যথা হতে পারে। বুকের হাড়, মাংসপেশি ও জয়েন্টে অসুস্থতায়, বুক নড়াচড়া করলে, বড় নিশ্বাস নিলে বা কাশি দিলে ব্যথা বৃদ্ধি পাবে। বুকের খাচার মাংসপেশিতে প্রদাহ বা অন্য সমস্যায় বুকের ব্যথা হতে পারে। কারও কারও পিত্তপাথর ও পিত্তথলির প্রদাহের জন্য বুকে ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। অনেকের মেরুদণ্ডে সমস্যার কারণে বুকে ব্যথা হয়ে থাকে। বুকের ব্যথার হাজারও কারণ থাকতে পারে, সুতরাং এক কথায় বুকের ব্যথার কারণ বলাটা খুবই দুষ্কর। অনেকে আমাকে এবং হয়তো অন্য চিকিৎসকের কাছে জানতে চান, তার বুকে ব্যথা হচ্ছে, কী কারণে হতে পারে এবং তিনি কি চিকিৎসা নেবেন? কখনো সরাসরি আবার কখনো টেলিফোনের মাধ্যমে জানতে চান, প্রায় সময়ই আমরা তার সদোত্তর দিতে পারি না। এখন হয়তো অনেকেই জানতে চাইবেন যে, তবে কি বুকের ব্যথা হলেই আমরা চিকিৎসকের কাছে ছুটে যাব। এ ধরনের পরামর্শও আমি দিতে চাচ্ছি না।

কারও যদি বুকে ব্যথা হয় তবে ব্যথার ধরন ও তীব্রতা কেমন, তা পর্যবেক্ষণ করুন। সাধারণ ব্যথা হলে প্রথমে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ সেবন করতে পারেন দিনে ২ থেকে তিনবার তার সঙ্গে গ্যাসের ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন দিনে ২ থেকে ৩ বার, যদি এক-দুই দিনের মধ্যে ব্যথা নিরাময় না হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে চিকিৎসা নিতে হবে। যদি কারও বুক ব্যথার সঙ্গে কাশি, শ্বাসকষ্ট থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নেবেন। কারও কারও বুক খুব অল্প সময়ের জন্য চিন করে ব্যথা হয় বা চিমটি কাটা বা খোঁচা লাগার মতো ব্যথা হয় এবং তা দুই থেকে পাঁচ সেকেন্ডের মধ্যেই ঠিক হয়ে যায় তাতে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এ অবস্থা এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। মানুষ সবচেয়ে বেশি উৎকণ্ঠায় থাকে হার্টের অসুস্থতার জন্য, মানে বুক ব্যথা হার্টের অসুস্থতার জন্য হচ্ছে কিনা। আগেই বলেছি হার্টের বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতার বহিঃপ্রকাশ হয় বুক ব্যথার মাধ্যমে। হার্টের মাংসপেশি এবং তার বহিঃআবরণের প্রদাহের ফলে লাগাতার বুকের ব্যথা হতে পারে এবং তার সঙ্গে অনেককেই জ¦রে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। হার্টের ভাল্বের সমস্যা, হার্ট ফেইলুর ইত্যাদি কারণেও বুকে ব্যথা হতে পারে, তবে এসব ব্যথা অবিরতভাবে হয় এবং ব্যথার তীব্রতা ওঠানামা না করে সব সময় প্রায় একই রকম থাকে।

বুক ব্যথার সবচেয়ে মারাত্মক দিক হলো হার্ট ব্লকের কারণে হওয়া বুক ব্যথা। বর্তমান বিশে^ মৃত্যুর এক নম্বর কারণ হলো হার্টের অসুস্থতা, যার প্রায় পুরোটাই হার্ট ব্লক এবং হার্ট ব্লকের কারণে সৃষ্ট জটিলতা। প্রাথমিক অবস্থায় হার্ট ব্লকের কারণে মাঝেমধ্যে বুকে ব্যথা হয় তা বুকের মাঝখানে, বামপাশে অথবা ডানপাশে যেকোনো অংশে দেখা দিতে পারে, তার সঙ্গে কারও কারও এক বা দুই বাহু বা হাত, ঘাড়, পেটের উপরিভাগ গলা, চোঁয়াল এবং পিঠ এই সব যেকোনো অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। এ ধরনের সব ব্যথাই হার্ট ব্লকের কারণে হয়ে থাকে। আগেই বলেছি, এসব ব্যথা মাঝে মধ্যে দেখা দেয় এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই আপনা-আপনি নিরাময় হয়ে যায় কোনো রূপ চিকিৎসা গ্রহণ ছাড়াই। যদি এ ধরনের অবস্থা প্রায়ই মানে ঘন ঘন হতে থাকে এ ব্যথার তীব্রতা এবং পরিধি বৃদ্ধি পেতে থাকে, তবে বুঝতে হবে যে হার্ট ব্লকের আকার এবং সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ সময় ব্যথা পুরোপুরিভাবে নিরাময় হতে আগের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায়। হার্ট ব্লকের ব্যথা সাধারণত পরিশ্রমকালীন সময়ে হতে দেখা যায় এবং ব্যক্তি যদি পরিশ্রমের মাত্রা কমিয়ে দেন বা বিশ্রাম গ্রহণ করেন তবে কিছু সময়ের মধ্যেই ব্যথা নিরাময় হয়ে ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যান। ব্যথার এসব ধরন এবং আচার-আচরণ দেখে মানুষ খুব সহজেই হার্ট ব্লকের ব্যথাকে শনাক্ত করতে পারবে। হার্ট ব্লকের ব্যথা হলে হার্ট স্পেশালিস্টের শরণাপন্ন হয়ে সুচিকিৎসা গ্রহণ করলে অনেক সময়ই বড় ধরনের জটিলতা এড়ানো সম্ভব হয়।

উপরে উল্লেখিত ব্যথার ধরনের সঙ্গে যদি শ্বাসকষ্ট, বুক ধড়ফড় করা, শরীর অত্যধিক ঘেমে যাওয়া, বুকে অত্যধিক চাপের জন্য দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়। বমি বমি ভাব বা বমি হয়, মাথা হালকা হয়ে যায়, তবে এসবকে অবশ্যই হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট স্ট্রোক বলে ধরে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে, বিশেষ করে যেসব হাসপাতালে হার্টের চিকিৎসা হয়ে থাকে। ঐ সময় গাফিলতির জন্য রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে।

-ডা. এম শমশের আলী, চিফ কনসালটেন্ট, শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর