শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্ট্রোক সম্পর্কিত জরুরি কিছু কথা

স্ট্রোক সম্পর্কিত জরুরি কিছু কথা

আমাদের মস্তিষ্কে সব সময় অক্সিজেন ও গ্লুকোজ সরবরাহ হয়ে থাকে। যদি কোনো কারণবশত মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয় তখন মস্তিষ্কের কোষগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে দেখা দিতে পারে বিশেষ পরিবর্তন। অনেক সময় মানব শরীরের কোনো একটি অংশ প্যারালাইসিস বা অবশভাব অনুভূত হয়। এ সমস্যাটিকে স্ট্রোক হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়। লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া মাত্র রোগীকে হাসপাতালে নিতে হবে।

ধরন : স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরনের।

১. ইসকেমিক স্ট্রোক ২. হেমোরেজিক স্ট্রোক।

সাধারণত বেশির ভাগ মানুষ ইসকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকে। সাধারণত ৮৫% মানুষ ইসকেমিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় বাকি ১০ থেকে ১৫% হেমোরেজিক স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

ইসকেমিক স্ট্রোক : এ ধরনের স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল যেকোনো কারণবশত বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।

হেমোরেজিক স্ট্রোক : এ ধরনের স্ট্রোকে রক্তনালি ফেটে মস্তিষ্কে রক্ত ছড়িয়ে পড়ে বা রক্তনালিতে রক্ত জমাট বেঁধে মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালন ব্যাহত হয়। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষরা স্ট্রোকে বেশি আক্রান্ত।

কারণ : স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো :

* উচ্চ রক্তচাপ * অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা

* ট্রমা বা আঘাতজনিত কারণ

* অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস * রক্তে উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরলের উপস্থিতি * অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস * অতিরিক্ত নিকোটিন বা অ্যালকোহল সেবন

লক্ষণসমূহ : শরীরের যেকোনো অংশ অবস বা একপাশ অবস হওয়া। * কথায় জড়তা ভাব উপলব্ধি হওয়া অথবা কথা বলা বন্ধ হয়ে যাওয়া। * চোখে ঝাপসা অথবা ডাবল ভীষণ হওয়া। * হঠাৎ প্রচন্ড মাথাব্যথা বা বমি বমি ভাব হওয়া। * শরীরের ভারসাম্য ধরে রাখতে অসামর্থ হওয়া। * অনেক সময় খিঁচুনি বা জ্ঞান হারানোর অবস্থা হতে পারে। * ঘুম ঘুম ভাব।

চিকিৎসা : স্ট্রোক হওয়ার লক্ষণ প্রকাশ বা আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে তাড়াতাড়ি হাসপাতাল বা ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে মেডিকেল সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে। যদি সম্ভব হয় আক্রান্ত হওয়ার চার ঘণ্টার মাঝে স্ট্রোক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারলে আধুনিক চিকিৎসায় ৯৮ % রোগী খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে।

যদি কোনো কারণে এ সময়ের মধ্যে রোগীকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হতে পারে তবে পরবর্তীতে দুটি চিকিৎসার ওপর গুরুত্ব দিতে হয়। এক. মেডিসিন দুই. ফিজিওথেরাপি। এই দুটি চিকিৎসায় একে অপরের পরিপূরক বা সমান গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে হলে টিমওয়ার্ক চিকিৎসা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যখনই মেডিসিন এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা একসঙ্গে করা সম্ভব হয় তখন রোগী খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে পারে।

পারিবারিকভাবে সাপোর্ট বা নার্সিং কেয়ার সেই সময় খুবই গুরুত্ব বহন করে। রোগীকে একজন নিউরোলজি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ সেবন করতে হয় সঙ্গে সঙ্গে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থেকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি নিশ্চিত করতে পারা যায়; তবেই রোগী অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার স্বাভাবিক জীবনে তথা কর্মজীবনে স্বাভাবিক হতে সক্ষম হবে।

-ডা. মো. সাইদুর রহমান, চিফ কনসালটেন্ট ও চেয়ারম্যান, রি-অ্যাক্টিভ ফিজিওথেরাপি সেন্টার, তেজগাঁও, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর