মঙ্গলবার, ২০ আগস্ট, ২০২৪ ০০:০০ টা
ডা. এম, শমশের আলী

হৃদরোগের প্রাথমিক অবস্থা

একটু পরিশ্রম করতে গেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হাঁপিয়ে ওঠেন বা পেরেশান হয়ে যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং শরীর অত্যধিক ঘেঁমে যায়

হৃদরোগের প্রাথমিক অবস্থা

বয়স ৪০ পেরিয়ে গেছে মাঝে মাঝে বুকটা বেশ ভার হয়ে উঠে, বিশেষ করে একটু দ্রুত হাঁটতে গেলে অথবা তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক কাজকর্ম সম্পাদন করতে গেলে। কারও কারও হাঁটার সময় বুকে চাপ হয় আবার একটু থেমে গেলে দু-এক মিনিটের মধ্যে বুকের চাপ কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। কেউ কেউ একটু ঢেঁকুর তোলার চেষ্টা করেন এবং ঢেঁকুর উঠলে চাপ কমে যায় তাই এটাকে গ্যাসের লক্ষণ মনে করে গ্যাসের মেডিসিন গ্রহণ করে থাকেন। এ সময় কেউ কেউ আবার দাঁড়িয়ে একটু আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করেন এবং তাতেও চাপ কমে যায়। তাই ভাবতে থাকেন এটা তেমন কিছু না। কারও কারও বেলায় একটু পরিশ্রম করতে গেলে হার্টবিট বেড়ে যায় বা হার্টের গতি বৃদ্ধি পায়, ফলশ্রুতিতে বুকটা একটু ধড়ফড় করে কিন্তু এ ক্ষেত্রেও পরিশ্রম বন্ধ করলে অল্প সময়েই ব্যক্তি আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। তবে একই মাত্রার পরিশ্রম করলে অনেক সময়ই কোনরূপ কষ্ট বোধ করেন না, তাই এটাকে কোন রোগের লক্ষণ বলে মনেই হয় না। সে কারণে চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজনও বোধ করেন না। কেউ কেউ একটু দ্রুত হাঁটার সময় বা সিঁড়ি/পাহাড় বেয়ে ওপরে উঠতে গেলে বুক ব্যথা অথবা শ্বাসকষ্ট বা বুক ধড়ফড় অনুভব করেন। এ ক্ষেত্রে একটু থেমে গেলে এসব উপসর্গ খুব দ্রুত নিরাময় হয়ে যায়। অনেকেই আবার একটু পরিশ্রম করতে গেলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই হাঁপিয়ে ওঠেন বা পেরেশান হয়ে যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি বেড়ে যায় এবং শরীর অত্যধিক ঘেমে যায়, মাথা ধরে যায়, হাত পা অবস অবস মনে হয়। এ ধরনের উপসর্গ আসলে হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ। প্রাথমিক অবস্থায় বিশেষ কিছু পরিবেশ ও পরিস্থিতিতে হৃদরোগের লক্ষণগুলো পরিশ্রমকালীন পরিলক্ষিত হয়ে থাকে এবং পরিশ্রম করা বন্ধ করে দিলে ২-৩ মিনিটের মধ্যেই ব্যক্তি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেন। অনেকেই প্রাথমিক অবস্থাকে গুরুত্ব না দিয়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে থাকেন। হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলোর স্বভাব খুবই গোলমেলে কারণ একই ধরনের বা একই মাত্রার পরিশ্রম করতে গেলে কখনো এসব উপসর্গ দেখা দেয় আবার কখনো দেখা দেয় না। ব্যক্তি যদি দুশ্চিন্তাগ্রস্থ থাকেন অথবা টেনশনে থাকেন তবে এসব উপসর্গ বেশি পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। বিরূপ আবহাওয়ায় (কনকনে শীত, অত্যধিক গরম, ঘিঞ্জি পরিবেশ, ঘোমট আবহাওয়া, বৃষ্টি বাতাসের ঝাপটাকালীন) পেট ভরে খাওয়ার পর, অন্য কোনো অসুস্থতার সময় যেমন জ¦র-সর্দি-কাশি, পেট খারাপ অথবা হাইপ্রেসারের রোগীদের প্রেসার খুব বেড়ে গেলে বা খুব কমে গেলে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তের সুগার খুব বেশি বৃদ্ধি পেলে অথবা খুব কমে গেলে অতি সহজেই হৃদরোগের বর্ণিত লক্ষণগুলির প্রকাশ ঘটে। ফুরফুরে মেজাজে থাকলে, মন খুশি থাকলে, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকলে সাধারণভাবে হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয় না। খালি পেটে, সুন্দর আবহাওয়ায়, উৎফুল্ল চিত্তে, শারীরিক সুস্থতায়, বিশ্রামের পরবর্তী সময়ে সাধারণভাবে একই মাত্রার পরিশ্রমেও এসব লক্ষণ পরিলক্ষিত হয় না।  অনেকে ভেবে থাকেন হয়তো বা গ্যাস সৃষ্টি হওয়ার ফলে কখনো কখনো এ ধরনের সমস্যা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে, তা মোটেই সঠিক নয়।

বংশে যদি কারও হৃদরোগ, ডায়াবেটিস অথবা হাইপ্রেসার থাকে অথবা আপনি যদি নিজেই উচ্চরক্তচাপ বা হাইপ্রেসার অথবা ডায়াবেটিস রোগে ভুগতে থাকেন, তবে এ ধরনের লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হলে আপনার চিকিৎসার জন্য অবশ্যই একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন। প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে আপনার হৃদরোগ নিরাময় করা সহজ হবে। হার্ট এমন একটি অঙ্গ যা বেঁচে থাকতে অত্যবশ্যকীয়। তাই হার্ট সুস্থ রাখার কোনো বিকল্প নেই।  

লেখক : চিফ কনসালট্যান্ট

শমশের হার্ট কেয়ার, শ্যামলী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর