বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

‘অফিস সিনড্রোম’ যখন ব্যথার কারণ

‘অফিস সিনড্রোম’ যখন ব্যথার কারণ

কৃষি নির্ভরশীলতা থেকে বাংলাদেশ ঝুঁকছে সার্ভিস নির্ভরশীলতার দিকে। প্রতিদিন বাড়ছে অফিস-আদালতের সংখ্যা। বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী বিশেষ করে যারা শহরে বাস করেন তারা সপ্তাহে ৫-৬ দিন এমনকি ৭ দিন অফিস করেন। অনেকেই আছেন যারা দিনের ১২-১৪ ঘণ্টা কাটিয়ে দেন অফিসে। বাংলাদেশের ব্যাংকারদের ওপর পরিচালিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে যে যারা বেশি সময় অফিসে বসে কাজ করেন তাদের ঘাড়, কোমর, হাঁটু বা কাঁধ ব্যথা হওয়ার প্রবণতা যারা কম সময় বসে থাকেন তাদের চেয়ে অনেক অনেক বেশি। এক কথায় যাকে বলা যায় অফিস সিনড্রোম। 

মানুষ জন্মগতভাবেই নড়াচড়াপ্রবণ জীব। মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই আহার সংগ্রহে মানুষ শারীরিক শ্রম দিত। একটি শিকার করতে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বিপুল শারীরিক শক্তি ব্যয় করত। কিন্তু আমাদের আধুনিক জীবন অনেকটাই মেধানির্ভর। চেয়ার-টেবিল বা কম্পিউটার-মোবাইলের সামনে বসেই বেশির ভাগ সময় কাটে আমাদের। ফলশ্রুতিতে হাড়-মাংসপেশিতে আসে জড়তা। বাইরে সূর্যের আলোতে কম আসাতে আমাদের শরীরে দেখা দেয় ভিটামিন-ডি এর ঘাটতি। সব মিলিয়ে স্থবির থাকতে থাকতে আমাদের শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। মাংসপেশি ও হাড়ের জড়তা প্রকাশ পায় ব্যথার মাধ্যমে। হাড়ের ক্ষয়, মাংসপেশির দুর্বলতাজনিত ব্যথা জেঁকে বসে আমাদের শরীরে। একসময় ভাবা হতো যারা ভারী কাজ করেন, অস্বস্তিকর ভঙ্গিমায় বসে বা দাঁড়িয়ে থাকেন কেবল তাদেরই ঘাড়-কোমর ব্যথা বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু আধুনিক কালের গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা; প্রকৃতপক্ষে যারা দীর্ঘ সময় একই ভঙ্গিমায় কাজ করেন তাদেরই ব্যথাজনিত শারীরিক সমস্যা বেশি হয়। অনেকেই ভাবেন খুব আধুনিক চেয়ারে বসে ১২-১৪ ঘণ্টা টানা কাজ করলেও ঘাড় বা কোমর ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিষয়টি কিন্তু তেমন নয়; আসলে আপনি একই ভঙ্গিমায় কতক্ষণ কাজ করলেন সেটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ ভঙ্গিমা যে কোনোরকম হতে পারে, ব্যথামুক্ত থাকার শর্ত হলো সেই ভঙ্গিমায় বেশিক্ষণ থাকা যাবে না।

পরিত্রাণের উপায় কী

প্রথম শর্ত হলো একভাবে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা যাবে না। প্রতি এক ঘণ্টায় এক মিনিটের জন্য হলেও পজিশন পরিবর্তন করতে হবে। সুযোগ থাকলে হালকা স্ট্রেচিং করা যেতে পারে। কিছু খুব সাধারণ অথচ বিশেষ ব্যায়াম আছে যা অফিসের চেয়ারে বসেই করা যায়, সেগুলো জানতে হবে। যারা ইতোমধ্যেই ব্যথায় আক্রান্ত তারা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন। দ্বিতীয়ত, আপনার মোবিলিটি বা নাড়াচাড়া বাড়াতে হবে। একটি স্লোগান মনে রাখা দরকার- ‘সুস্থ থাকতে হাঁটতে হবে’। অনেকেই অজুহাত দেন যে তাদের হাঁটার সময় নেই। কিন্তু আপনি চাইলেই হাঁটতে পারেন। যেমন ধরুন অফিস থেকে বাসায় ফিরতে যেটুকু রাস্তা রিকশায় আসেন সেটুকু আজ থেকে হেঁটে আসুন অথবা সাধের প্রাইভেট কারটা গ্যারেজে রেখে হেঁটে অফিস করুন, দেখবেন অর্থও সাশ্রয় হচ্ছে সঙ্গে ভালো থাকছে শরীর ও মন। পরিশেষে, প্রায়ই বেরিয়ে পড়ুন অ্যাডভেঞ্চারে। হাতে সময় কম থাকলে আশপাশের ট্যুরিস্ট স্পট ভিজিট করুন। সাঁতার কাটুন, দৌড়ান বা হিল ট্রাকিং করুন। শারীরিক শ্রমের সঙ্গে সঙ্গে পাবেন সূর্যের ভিটামিন ডি। মনে রাখুন, আমাদের পূর্ব পূরুষদের সবকিছুই ছিল শারীরিক শ্রমনির্ভর। আপনিও এই জেনেটিক্সের বাইরের কেউ নন! তাই এ বিষয়ে অবহেলা না করে সবাইকে সচেতন হতে হবে। কথায় আছে প্রতিকার নয় প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম।

-ডা. মোহাম্মদ আলী, চিফ কনসালট্যান্ট

হাসনা হেনা পেইন অ্যান্ড ফিজিওথেরাপি রিসার্চ সেন্টার (এইচপিআরসি), উত্তরা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর