সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০০ টা

আগ্রহে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

আকতারুজ্জামান

আগ্রহে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্যসূত্র : শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন

একসময় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতেন অন্য কোথাও ভর্তির সুযোগ না পেয়ে। পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। ছাত্রছাত্রীদের অনেকের আগ্রহের তালিকার ওপরের দিকে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো সেশনজট, রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশ। এসব কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহ বাড়ছে ভর্তিচ্ছুদের। ১৯৯২ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরুর পর ৩১ বছরের ব্যবধানে দেশে বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ১১৩টি। অনুমোদনের অপেক্ষায় আরও কমপক্ষে পাঁচটি। সব মিলিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এখন বড় সম্ভাবনার নাম। উচ্চশিক্ষা স্তরের বৃহৎ অংশের শিক্ষার্থী তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করছেন এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। শুধু দেশ নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণ-তরুণীরা ভর্তি হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন সরকারের রাজস্ব বাড়ছে, অন্যদিকে উজ্বল হচ্ছে দেশের ভাবমূর্তিও। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান বলছেন, কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও মানসম্মত শিক্ষাদান করছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে খোলা হচ্ছে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নানা প্রোগ্রাম। এ ছাড়া তাদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ৪৮তম (সর্বশেষ) বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, ২০২১ সালে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীর শতকরা প্রকৌশল ও কারিগরিতে শিক্ষার্থী ছিল সর্বোচ্চ, যা ৪৩ দশমিক ৩২ শতাংশ; ব্যবসায় প্রশাসনে ছিল ২৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ; কলা ও মানবিকে ১০ দশমিক ৫৪ শতাংশ; বিজ্ঞানে ৭ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, আইনে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ; ফার্মেসিতে ৩ দশমিক ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী।

অতীতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক অভিযোগ থাকলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা কমে এসেছে।  এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রমেই বাড়ছে শিক্ষার মান। বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তীর্ণ হয়ে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) থেকে শুরু করে সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আকর্ষণীয় চাকরিতে নিজেদের স্থান করে নিচ্ছেন গ্র্যাজুয়েটরা। প্রকৌশল আর প্রযুক্তিতে অনেক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে।

 

বাড়ছে বিদেশি শিক্ষার্থী

বর্তমানে দ্রুত বিকাশমান খাতগুলোর মধ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অন্যতম। রাজধানী ছাড়িয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ফলে ছাত্রছাত্রীদের বিদেশে পড়তে যাওয়া হার কমে এসেছে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এদেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হচ্ছেন তরুণ-তরুণীরা। ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০২১ সালে ভর্তি হয়েছেন ৭১০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী। ২০১৮ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোট বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১৩৮৬ জন। ২০১৯ সালে তা বেড়ে হয়েছে ১৪৬৭ জন। ২০২০ সালে ১৫৫০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। আর সর্বশেষ ২০২১ সালে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছিলেন ১৬০৪ জন বিদেশি শিক্ষার্থী। এসব শিক্ষার্থীরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, চীন, জাপান, ইয়েমেন, ফিলিস্তিন, গাম্বিয়া, মরক্কো, সাউথ কোরিয়া, মৌরিতানিয়া, তানজেনিয়া, অস্ট্রিয়া, রুয়ান্ডা, জিবুতি, সোমালিয়া, ইথিওপিয়া, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান, সাউথ সুদান ও বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসে ভর্তি হয়েছেন। ইউজিসি বলছে, প্রতিবছরই বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে।

 

প্রতিবছর ভর্তি হন ১ লাখ শিক্ষার্থী

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রায় ৩ লাখ ভর্তিযোগ্য আসন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে স্নাতক (পাস) পর্যায়ে ১ হাজার ১৬০টি। স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে ১ লাখ ৮৬ হাজার ৮৯৯টি এবং মাস্টার্স পর্যায়ে আসন রয়েছে ৮৯ হাজার ২৯৬টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর প্রায় ১ লাখ শিক্ষার্থী বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি হন। ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে ৯৩ হাজার ৫০৩ জন ছাত্রছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হয়েছেন। প্রতিবেদন অনুযায়ী- দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওই বছরে মোট শিক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ১০৭ জন।

 

সময়োপযোগী প্রোগ্রাম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খোলা হয়েছে আধুনিক যুগের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ও শিক্ষার্থীদের চাহিদামাফিক নানা বিষয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- আর্কিটেকচার, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, বায়োকেমিস্ট্রি, মাইক্রোবায়োলজি, পাবলিক হেলথ, ফার্মেসি, ফার্মাসিউটিক্যাল সায়েন্স, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজি, অ্যাপারেল ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার, প্রডাক্ট ডিজাইন, মিউজিক, গভর্নমেন্ট অ্যান্ড পলিটিক্স, মেকাট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং, উইমেন অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ, অ্যাকাউন্টিং, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন, বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, আইন ইত্যাদি। এসব প্রোগ্রাম থেকে পড়ালেখা শেষ করে পেশা জীবনেও ছাত্রছাত্রীরা রাখছেন কৃতিত্বের স্বাক্ষর।

 

সুযোগ আছে বিনা বেতনে পড়ার

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিনা বেতনেও পড়ছেন অনেক শিক্ষার্থী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এ ভর্তিযোগ্য মোট আসন সংখ্যার শতকরা ৩ ভাগ মুক্তিযোদ্ধা সন্তানদের বিনামূল্যে ভর্তির জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা খরচ, স্কলারশিপ এবং ওয়েভারপ্রাপ্ত সর্বমোট শিক্ষার্থী রয়েছেন যথাক্রমে ১৫ হাজার ৪২, ৭৭ হাজার ৫০০ এবং ১৪ হাজার ২৮৩ জন। এ ছাড়া বর্তমানে বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ হাজার ৬৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পড়াশোনা করেছেন। উচ্চশিক্ষার সুযোগ সর্বস্তরে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার মোট আসনের শতকরা ৩ ভাগ দরিদ্র অথচ মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষণ করেছে। বর্তমানে ১০ হাজার ৫৬৯ জন দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থী বিনা খরচে অধ্যয়নরত।

 

ব্যয় বাড়ছে গবেষণায়

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে গবেষণায় ব্যয় না করার অভিযোগ ছিল দীর্ঘদিন। বর্তমানে সে অভিযোগ কমে এসেছে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ৭৮টি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা খাতে কম-বেশি অর্থ ব্যয় করেছে। ২০২১ সালে এ ব্যয় ছিল ১১৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, যা গড় হিসেবে দেড় কোটি টাকার বেশি। গবেষণা খাতে বরাদ্দ রাখা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এর আগে ২০২০ সালে গড় হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গবেষণা খাতে ব্যয় করেছিল ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

 

সুপরিসর স্থায়ী ক্যাম্পাস

অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে সব সুবিধা সম্বলিত দৃষ্টিনন্দন সুপরিসর স্থায়ী ক্যাম্পাস। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার পর ১২ বছরের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। ইউজিসির তথ্যমতে, বর্তমানে ৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থায়ী ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস থাকা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিকে যেমন সরকারের শর্ত পূরণ করেছে, অন্যদিকে সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে। ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার পরিচালক ওমর ফারুখ বলেন, ইউজিসির নিয়মিত তদারকির কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বেশির ভাগই আইনের মধ্যে পরিচালিত হচ্ছে। স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রছাত্রীরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

 

শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত সন্তোষজনক

বেশির ভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান, জ্ঞান বিতরণ তুলনামূলক সহজতর হচ্ছে উচ্চশিক্ষার এসব বিদ্যাপীঠে। ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী- ২০২১ সালে একাডেমিক কার্যক্রম চালুকৃত ৯৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৯১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ছিল ১:৩০ বা ১:৩০ এর নিচে। মাত্র পাঁচটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এর অনুপাত কাক্সিক্ষত মানের ছিল না। তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ক্রমেই সন্তোষজনক পর্যায়ে আসছে বলে মনে করে ইউজিসি।

 

আছেন দক্ষ শিক্ষক

সম্ভাবনাময় খাত দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিপুলসংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর কর্মসংস্থান হচ্ছে। ইউজিসি সূত্র বলছে, বর্তমানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ১৫ হাজার ৩৯৩ জন শিক্ষক কর্মরত। তাঁদের মধ্যে মহিলা শিক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৯৯৯ জন। শিক্ষকদের মধ্যে পূর্ণকালীন অধ্যাপক রয়েছেন ৮৬২ জন। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বর্তমানে ২৯৪৪ জন পিএইচডিধারী শিক্ষক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে মহিলা  পিএইচডিধারী রয়েছেন ৪১৮ জন। এ ছাড়া মোট ৫ হাজার ৪০০ কর্মকর্তা ও ৭ হাজার ১৮১ জন কর্মচারী কর্মরত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। 

 

ইউজিসি চেয়ারম্যান যা বললেন

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, উচ্চশিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারণে শিক্ষার্থীদের বিদেশমুখিতা কমেছে। তিনি বলেন, হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অভিযোগ, সমালোচনা থাকলেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের নিয়ম মেনে চলছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে শিক্ষার মান বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কারণ, যারা মানসম্মত শিক্ষাদান করবে না শিক্ষার্থীরা সেগুলোতে ভর্তিও হবে না। কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও ভালো করছে বলে জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর