সোমবার, ২৬ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা

মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হলো লাশের শহরে

মধ্যরাতে ঢাকা পরিণত হলো লাশের শহরে

২৫ মার্চের কালরাতে গণহত্যাযজ্ঞের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ঢাকা। এদিন চালানো অপারেশন সার্চলাইট নামের সামরিক অভিযানে পরিকল্পিত গণহত্যা চালানো হয়। রাত ১১টার দিকে পাকিস্তানি সেনারা পুলিশ লাইনস ঘিরে ফেলেছিল। পাকিস্তানিরা বিদ্যুতের লাইন কেটে দিয়েছিল। রাজারবাগে পুলিশেরা প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করে থ্রি নট থ্রি দিয়ে। প্রতিরোধের চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। ট্যাঙ্ক, মর্টার আর মেশিনগানের সঙ্গে তাদের পক্ষে বেশিক্ষণ টিকে থাকা সম্ভব হয়নি। শতাধিক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। সকাল হওয়ার আগেই সেনাবাহিনীর আট-দশটা ট্রাকে করে লাশ সরিয়ে ফেলা হয়। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী  ইপিপিআরএফের চারটি টিনশেড ব্যারাক আগুনে পুড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে ২৫ মার্চ সকাল থেকেই ইপিআরের প্রতিটি গেটে বালুর বস্তা দিয়ে অস্ত্র নিয়ে কড়া পাহারা দিচ্ছিল বালুচ রেজিমেন্টের সদস্যরা। ফলে রাত ১২টায় যখন পাকিস্তানি বাহিনী হামলা চালাল, বেশিক্ষণ প্রতিরোধ হয়নি। ২৯ মার্চ সকাল আটটায় ইপিআর ময়দানে সভা করেন সেই সময়ের ইপিআরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার নেসার আহমদ। তিনি বন্দীদের ছেড়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে চলে যান। কিন্তু পরে সবাইকে বন্দী করে মোহাম্মদপুরের শরীরচর্চা কেন্দ্রে নিয়ে শুরু হয় নির্যাতন। এ ছাড়া পিলখানা, প্রেসিডেন্ট হাউসসহ (অতিথি ভবন সুগন্ধা) বিভিন্ন জায়গা থেকে শতাধিক নিরস্ত্র ইপিআর সদস্যকে ধরে এনে রমনার কালীবাড়িতে হত্যা করা হয়। ২৫ মার্চ রাত ১২টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ডিআইটি ভবনের ওপর থেকে গভর্নর হাউসে (বঙ্গভবন) অবস্থানরত ইপিআর সস্যদের ওপর গোলাবর্ষণ করে। পরে সকালে বালুচ রেজিমেন্টের এক প্লাটুন সেনা সেখানে ঢুকে ইপিআরদের নিরস্ত্র করে। এখানে ইপিআরের কয়েকজন সদস্য নিহত হন। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ছিল তাদের টার্গেট। প্রথম পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০ জন শিক্ষককে হত্যা করা হয়। অধ্যাপক ফজলুর রহমান এবং তার দুই আত্মীয় নীলক্ষেতের ২৩ নম্বর ভবনে নিহত হন। অধ্যাপক আনোয়ার পাশা এবং অধ্যাপক রশিদুল হাসান (ইংরেজি বিভাগ) সে যাত্রায় বেঁচে গেলেও পরবর্তীতে আল-বদর বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান। ১২ নম্বর ফুলার রোডের বাসভবনে প্রাণ হারান ভূ-তত্ত্ববিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক আবদুল মুক্তাদির। ঢাকা হলের গণিত বিভাগের অধ্যাপক আ র খান খাদিম ও শরাফত আলীকে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানি বাহিনী জগন্নাথ হলে শিক্ষকনিবাসে আক্রমণ করে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মির্জা হুদা ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মফিজুল্লাহ কবিরকে লাঞ্ছিত করা হয়। রাত বারোটার পর জগন্নাথ হলের উত্তর ও দক্ষিণের গেট দিয়ে ঢুকে নির্বিচারে ছাত্রদের হত্যা করতে থাকে। সেই আঘাতে ৩৪ জন ছাত্র প্রাণ হারান ছাত্রীনিবাস রোকেয়া হলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ছাত্রীরা আগুন থেকে বাঁচতে হলের বাইরে আসা শুরু করলে পাকবাহিনী তাদের ওপরে নির্বিচারে গুলি চালায়। এ ঘটনায় আনুমানিক ৩০০ জন ছাত্রীকে সেসময় হত্যা করা হয়।

 

সর্বশেষ খবর