বৃহস্পতিবার, ১৯ মে, ২০২২ ০০:০০ টা

জুতা রপ্তানিতে সম্ভাবনা

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

জুতা রপ্তানিতে সম্ভাবনা

ধনপুর। কুমিল্লা সদর উপজেলার একটি গ্রাম। এই গ্রাম থেকে প্রতি অর্থবছরে জার্মানি, ইতালিসহ বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে ১৩০ কোটি টাকার জুতা। কারখানার নাম লালমাই ফুটওয়্যার। এখানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ৫ হাজার শ্রমিক। শ্রমিকদের ৯০ ভাগ স্থানীয় বাসিন্দা। তাদের ৭০ ভাগ নারী। এই কারখানায় কাজ করে আশপাশের কুমিল্লা সদর ও সদর দক্ষিণ উপজেলার ২০ গ্রামে এসেছে সমৃদ্ধি। ১৯৯২ সালে এই কারখানার যাত্রা শুরু হয়। গত তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জুতা রপ্তানিতে প্রথম সারির একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে এটি। কয়েক বছর ধরে চামড়া খাতে দেশের শীর্ষ তিন করদাতা প্রতিষ্ঠানের একটি লালমাই ফুটওয়্যার।

সূত্রমতে, ইউরোপ ও আমেরিকার বেশকিছু ব্র্যান্ডের জুতা তৈরি হচ্ছে এই কারখানায়। তার মধ্যে রয়েছে- যুক্তরাষ্ট্রের ফ্রাঙ্কোসার্টো ও ন্যাচারালাইজার, জার্মানির লিডেল, ইতালির চিকো, স্পেনের ডাস্টিন টিজাস, ফ্রান্সের ডামার্ট ও অ্যারাম। এ ছাড়া জেসিপেনি, এবিসি মার্ট, ম্যাসিস, কোলসের মতো বিশ্বখ্যাত মেগাশপেও লালমাই ফুটওয়্যারের জুতা পাওয়া যায়। নারী-পুরুষ ও শিশু সবার জুতা বানায় প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার জোড়া জুতা বানানোর সক্ষমতা আছে। শতভাগ রপ্তানিমুখী জুতা তৈরির প্রতিষ্ঠানের মধ্যে লালমাই ফুটওয়্যার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানির ৮০ শতাংশের বেশি চামড়ার জুতা। বাকি ২০ শতাংশ জুতা পাট থেকে তৈরি হয়।

সরেজমিন কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, ধনপুর গ্রামে প্রায় ২৫ বিঘা জমিতে লালমাই ফুটওয়্যারের কারখানার সীমানা। ১০ বিঘায় রয়েছে কয়েকটি কারখানা ভবন। চারটি ইউনিটে কাজ চলে। প্রথম ইউনিটে জুতার তলা বা সোল তৈরি হয়। আছে জুতার আপার কাটিং ইউনিট। ভবনের তিন ও চারতলায় সেলাই বিভাগ। শেষ ধাপে জুতা ঠিকমতো তৈরি হলো কি না, তা পরীক্ষা করা হয়।

প্রতিষ্ঠানটির সূত্র জানায়, কয়েক বছর ধরেই লালমাই ফুটওয়্যার ১০০ কোটি টাকার বেশি সমমূল্যের জুতা রপ্তানি করছে। ২০১৭ সালে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১২৪ কোটি টাকার জুতা। ২০১৮ সালে রপ্তানি হয় ১২১ কোটি টাকার জুতা। ২০১৯ সালে ১২৫ কোটি টাকার জুতা রপ্তানি হয়। ২০২০ সালে করোনার কারণে রপ্তানি কমে নেমে এসেছিল ৯২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ১৩০ কোটি টাকার জুতা রপ্তানিার সম্ভাবনা রয়েছে।

কামরুন নাহার ও জামাল হোসেন নামের ধনপুর গ্রামের দুজন শ্রমিক জানান, বাড়ির পাশে কারখানা। দিনে এক বেলা কাজ করি। মাস শেষে ভালো বেতন পাই। অবসর সময় থাকায় বাড়ির কাজও করতে পারি। ছেলেমেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছি। এখানে কাজ করে আমাদের পরিবারের উন্নতি হয়েছে। এখানে কাজ করে আমাদের মতো সামবকশি, বালুতুপা, গোয়ালমথন, রাজেন্দ্রপুর, নোয়াপাড়া, রঘুপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ ভালো আছে।

লালমাই ফুটওয়্যারের নির্বাহী পরিচালক জসিম উদ্দিন বলেন, কুমিল্লায় প্রতিষ্ঠিত প্রথম রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠান লালমাই ফুটওয়্যার। কোম্পানির চেয়ারম্যান আমিন-উর-রশিদ ইয়াছিন যখন ধনপুর গ্রামে কারখানা শুরু করেন তখন অনেকে হাসাহাসি করেছেন।  অনেক নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। প্রথম বছরে আমরা ২-৩ কোটি টাকার মতো রপ্তানি করেছি।

তেমন সুযোগ সুবিধা ছিলো না। পাশে একটি চা দোকানও ছিলো না। খাবারের কষ্ট হয়েছে। এখন আমরা শ্রমিকদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করেছি। রয়েছে চিকিৎসা ব্যবস্থা। কারখানায় আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে। আশ-পাশের গ্রাম গুলোর কয়েক হাজার মানুষ স্বাবলম্বী হয়েছেন। কারখানার এলাকায় গড়ে উঠেছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। তিনি আরো বলেন, বিশ্বের খ্যাতনামা অনেক ব্র্যান্ডের জুতা আমরা তৈরি করি। জুতার মানে আমরা কখনও ছাড় দিই না। তাই তিন দশক ধরে বিদেশি ক্রেতারাও আমাদের ওপর আস্থা রেখেছেন।

সর্বশেষ খবর