চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের ৯০ শতাংশ ব্যবস্থাপনা করা হয় কনটেইনার ডিপোতে। আমদানি পণ্যের এক-চতুর্থাংশ বন্দর থেকে এসব ডিপোতে এনে খালাস করা হয়। খালি কনটেইনারও সংরক্ষণ করা হয় ডিপোতে। আমদানি-রপ্তানির এমন গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মারা যান ৫২ জন, আহত হন প্রায় ২০০ জন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ডিপোর একাংশ। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় রপ্তানি পণ্যবাহী ১৫৪টি কনটেইনার এবং আমদানি পণ্যবাহী দুটি কনটেইনার। তবে দুর্ঘটনার প্রায় তিন মাস পর বিএম কনটেইনার ডিপোটি আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে আংশিক কাজ। স্থাপন করা হচ্ছে ফায়ার প্লান্ট। প্রশিক্ষিত করা হচ্ছে ফায়ার নির্বাপণকর্মী। জানা যায়, ৪ জুন চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার বিএম কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটে। দুর্ঘটনার পর থেকে ডিপোটি বন্ধ। তবে বিএম ডিপো কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২২ আগস্ট দুটি শর্তে খালি কনটেইনার ওঠানো-নামানো ও সংরক্ষণের অনুমতি দেয় চট্টগ্রাম কাস্টমস। শর্ত দুটি হলো- পরিবেশ অধিদফতর, বিস্ফোরক অধিদফতর ও ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্র ১৫ দিনের মধ্যে নেওয়া এবং ১৫ দিনের মধ্যে কাছাকাছি ফায়ার স্টেশনের সঙ্গে সমঝোতা স্বাক্ষর করা। অনুমতির পর প্রতিদিন বন্দর ও কারখানা চত্বর থেকে খালি কনটেইনার ডিপোতে নিয়ে সংরক্ষণ করা হচ্ছে এবং ডিপো থেকে খালি কনটেইনার বন্দরে পাঠানো হচ্ছে। তদুপরি খালি কনটেইনার ব্যবস্থাপনার অনুমতি পাওয়ার পর ডিপো কর্তৃপক্ষ গত সোমবার আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম শুরুর অনুমোদনের জন্য কাস্টমসের কাছে আবেদন করে। স্মার্ট গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান বলেন, একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার কারণে গত তিন মাস ধরে ডিপোটি বন্ধ। তবে এই সময়ের মধ্যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ছাঁটাই করা হয়নি। পঙ্গুদের এখনো দেওয়া হচ্ছে চিকিৎসা। তাছাড়া তিনজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া প্রায় সম্পন্ন। বিস্ফোরণে নিহতদের পরিবারকে এখনো বেতন দেওয়া হচ্ছে। তিন দফায় ১৪ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ডিপোতে স্থাপন করা হচ্ছে ২২ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি অত্যাধুনিক ফায়ার সেফটি প্লান্ট। এতে নিজস্ব প্রশিক্ষিত কর্মী দিয়ে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আগুন নির্বাপণের কাজ করা সম্ভব। আমরা মনে করি, এ প্লান্টটির মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তিও উজ্জ্বল হবে। বিএম ডিপোর নির্বাহী পরিচালক ক্যাপটেন মঈনুল আহসান বলেন, দুর্ঘটনার পর পুনঃসংস্কারের মাধ্যমে ২ লাখ ২৮ হাজার বর্গফুটের শেডের প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ। আশা করি, চলতি বছরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত শেড নির্মাণ করা সম্ভব হবে। তাছাড়া দুর্ঘটনার পর ৫৪ হাজার বর্গফুটের সিএফএস শেড-২ লাখ ১৩ হাজার বর্গফুটের ইমপোর্ট শেড ও ১০ হাজার বর্গফুটের জুট শেড অক্ষত ছিল। এসব দিয়ে বর্তমানে আমদানি-রপ্তানি পণ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ডিপোর কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে অগ্নিদগ্ধে ভস্মীভূত কনটেইনার শেড, শেডগুলোর গার্বেজ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ।