বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকার

শিল্পায়নে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে

এম. রিয়াজুল করিম, এফসিএমএ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী, দি প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড

সাইফ ইমন

শিল্পায়নে বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে

বাংলাদেশ প্রতিদিন : বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পায় কী কী?

এম. রিয়াজুল করিম : আমরা ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যাংকের প্রণীত ঋণ নীতিমালা ও গাইডলাইন অনুসরণ করে থাকি যা বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা ও গাইডলাইনের আদলে প্রণীত। কোনো গ্রাহককে ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা সর্বপ্রথম ঋণের প্রয়োজনীয়তা যাচাই করে থাকি। এ ছাড়া গ্রাহকের ব্যবসা ও ব্যবসার ধরন, সুনাম, ব্যবসার অর্থনৈতিক অবস্থা, রিস্ক রেটিং, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা যাচাই করে থাকি যা তার ক্যাশ ফ্লো বিশ্লেষণ করে নির্ধারণ করা হয়। যখন আমাদের কোনো একটি ব্যবসার উৎপত্তি হয় তখন সেই জায়গা থেকেই আমরা আমাদের রিলেশনশিপ টিমের মাধ্যমে সেই ব্যবসার গুণগত মান যাচাই-বাছাই করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যবসার ধরন, ব্যবসায়িক ঝুঁকি এবং এই সেক্টরে আমাদের যারা স্পন্সর রয়েছেন তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড আমরা যথাযথভাবে নিরীক্ষা করে থাকি এবং সে ক্ষেত্রে আমরা ব্যাংকের ঋণ প্রক্রিয়াকরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের যে নীতিমালা রয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করার জন্য সব সময় সচেষ্ট থাকি। পরবর্তীতে ডিসবার্সমেন্টের ক্ষেত্রেও প্রচলিত নিয়মনীতি জোরালোভাবে পরিপালন করা হয়।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন :  বিগত বছরগুলোতে আপনাদের সাফল্য?

এম. রিয়াজুল করিম : প্রিমিয়ার ব্যাংক তৃতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংক হিসেবে এর ২৪ বছরের পথচলা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। পথযাত্রার শুরু থেকেই ব্যাংকটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের সারথি হয়েছে। অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে প্রিমিয়ার ব্যাংক বহু দেশি ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে। গ্রাহকদের আস্থা অর্জনের মাধ্যমে আমরা দেশের প্রথম সারির একটি ব্যাংকে পরিণত হতে পেরেছি। আমাদের আমানতের পরিমাণ ২৯ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। শত শত উদ্যোক্তা তৈরির মাধ্যমে প্রিমিয়ার ব্যাংক প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সমৃদ্ধিময় এক পথ খুলে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠার দুই দশকে একটি শক্তিশালী ভিতের ওপর দাঁড়াতে পেরেছে আমাদের ব্যাংক। গত কয়েক বছরে আমরা সব সূচকেই ঈর্ষণীয় সাফল্য পেয়েছি। গত পাঁচ বছরে প্রিমিয়ার ব্যাংকের এসব সূচকে ৫০ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। প্রিমিয়ার ব্যাংক অতীতের সিলেকটিভ টাইপ (বাছাইকৃত) ব্যাংকিং থেকে বেরিয়ে এসে বিগত চার-পাঁচ বছর ধরে এ ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যাংকের চেয়ারম্যান ডা. এইচ বি এম ইকবালের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, প্রিমিয়ার ব্যাংক গণমানুষের একটি ব্যাংক হিসেবে এদেশের গ্রামগঞ্জে তার সেবার পরিধি বিস্তৃত করবে।

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : ব্যাংকিং সেবায় ২২ বছরের দ্বারপ্রান্তে আপনারা কেন আলাদা?

এম. রিয়াজুল করিম  : প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের  সম্পদের গুণগত মান ও দক্ষ কর্মীবাহিনী  অনন্য যা আমাদের একটি সুসংহত জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। ব্যাংকের শুরু থেকে ব্যবসার কর্মযজ্ঞের লক্ষ্য ছিল করপোরেট গ্রাহকদের নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। সে লক্ষ্যমাত্রার প্রচেষ্টা হিসেবে আমরা করপোরেট পোর্টফোলিওকে ডাইভার্সিফাই করে দেশের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে কর্মসংস্থান করার লক্ষ্যে আমরা শিল্পায়নের দিকে মনোনিবেশ করেছি। বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে শিল্পায়নে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। যদিও এটি আমাদের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ ছিল। যা আমাদের বিশাল দক্ষ কর্মী বাহিনীর সাহসী প্রক্রিয়া ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও সুন্দর মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সেই ব্যবসাকে আমরা সম্প্রসারণ করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গত বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪.১৩ বিলিয়নের (ইউএসডি) বাণিজ্য করেছি যা এ বছর এ পর্যন্ত প্রায় ৫.৩৯ বিলিয়নে (ইউএসডি) উন্নীত হয়েছে যা কি না বিগত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০.৫১% বৃদ্ধি হয়েছে।  প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড এ মুহূর্তে মার্কেটে আমদানির ক্ষেত্রে নিট উদ্বৃত্ত ব্যাংক হিসেবে ডলারের (ইউএসডি) জোগান দিয়ে থাকি। আমরা এসএমই খাতেও মনোনিবেশ করেছি এবং এর সাফল্য হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক আমরা পুরষ্কৃত হয়েছি। আমরা কৃষি খাতে সরকারের যে দৃঢ় প্রত্যয় তার সঙ্গে একত্রিত হয়ে এই খাতকে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা মনোনিবেশ করেছি। এর অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় শতভাগ আমরা অর্জন করেছি। আমাদের অল্টারনেট ডেলিভারি চ্যানেলের আরও সম্প্রসারণ করেছি। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রজেক্টের কাজ চলছে। আমাদের মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে যে কোনো গ্রাহক যে কোনো ব্যাংক ও মোবাইল ব্যাংক হিসেবে অর্থ স্থানান্তর, ইউটিলিটি বিল পরিশোধ, ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ, মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকিং সেবা ঘরে বসে খুব সহজেই করা যাচ্ছে। যা কি না মার্কেটে ব্যাপক সাড়া দিয়েছে এবং আমরা এটিকে ক্রমবর্ধমান গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ। টেকনোলজিতে কোর ব্যাংকিংসহ আমাদের নতুন বিনিয়োগের কর্মপন্থা রয়েছে। আমরা মোবাইল ফিন্যানশিয়াল সার্ভিসের (এমএফএস) দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছি। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন সেবা প্রদান করে আসছি। ৬৮টি উপজেলায় আমাদের এজেন্ট পয়েন্ট আছে। 

 

বাংলাদেশ প্রতিদিন : আপনাদের বাৎসরিক গ্রোথ সম্পর্কে বলুন।

এম. রিয়াজুল করিম : প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের সম্পদ ও আমানতের পোর্টফোলিও বর্তমানে (৩০.০৯.২০২২) যথাক্রমে ৩৮,২৮০.০০ কোটি টাকা এবং ২৯,১৩০.০০ কোটি টাকা যা গত বছর ছিল যথাক্রমে ২৬,৮৮৬.০০ কোটি টাকা এবং  ২৫,১৯৯.০০ কোটি টাকা, এ.ডি রেশিও ৭৪.২৬% যা গত বছর ছিল ৭৬.২২%। প্রিমিয়ার ব্যাংকের এলসিআর ১২৩.৯৬% যা গত বছর ছিল ১১৭.২১%, এনএফএসআর ১২৪.৫২% যা গত বছর ছিল  ১২২.৩৮% এবং খেলাপি ঋণের হার ২.৭৬%। আমাদের এডি রেশিও, এলসিআর, এনএফএসআর এবং খেলাপি ঋণের হার বাংলাদেশ ব্যাংকের স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী খুব ভালো অবস্থানে আছে যা একটি ঈর্ষণীয় সাফল্য। ২০২১ সালে ব্যাংকের মোট মুনাফা ছিল ৮৩৮ কোটি টাকা, যা ২০২০ সালে ছিল ৬৭৯ কোটি টাকা, রিটার্ন অন ইকুইটি ১৬.৭৮% যা গত বছরের তুলনায় ১.৪৪% বেশি, ২০২১ সালের জন্য সম্মানিত পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকের শেয়ার হোল্ডারদের জন্য ১২.৫০% নগদ লভ্যাংশ এবং ১০.০০% শেয়ার লভ্যাংশসহ ২২.৫০% লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে যা বিগত বছরের তুলনার ব্যাংকের  শেয়ার হোল্ডারদের জন্য একটি ভালো লভ্যাংশ।

 

 

সর্বশেষ খবর