বৃহস্পতিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

রংপুরে ৮ হাজার কোটি টাকার সবজি বাণিজ্য

নজরুল মৃধা, রংপুর

রংপুরে ৮ হাজার কোটি টাকার সবজি বাণিজ্য

উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার ক্ষুদ্র, বর্গা ও প্রান্তিক চাষি শাকসবজির আবাদ করে স্বাবলম্বী  হয়েছেন। এ অঞ্চলে চলতি খরিপ-১, খরিপ-২ এবং রবি মৌসুমে শাক সবজির আবাদ হয়েছে দেড় লাখ হেক্টরের ওপর। এ পরিমাণ জমি থেকে উৎপাদিত শাকসবজির  মূল্য দাঁড়িয়েছে  ৮ হাজার কোটি টাকার ওপর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কল্যাণী ইউনিয়নে  করলাচাষি বুলবুল মিয়া ১ একর জমিতে করলা আবাদ করে খরচ বাদ দিয়ে লাভ করেছেন দেড় লাখ টাকা। কাউনিয়া উপজেলার আফজাল হোসেন আলু আবাদ করে লাভ পেয়েছেন প্রায় ৭৫ হাজার টাকা। তাদের মতো হাজার হাজার ক্ষুদ্র চাষি সবজি আবাদ করে নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করেছেন।

চাষিরা আরও জানান, এখন তাদের শাকসবজি বিক্রির জন্য হাটবাজারে যেতে হয় না।  ব্যাপারীরা বাড়ির আঙিনা থেকেই শাকসবজি ক্রয় করে নিয়ে যান
এসব চাষি জানান, এক সময় তাদের সংসার চলত ধারদেনা করে। কিন্তু সবজি চাষের ফলে তাদের ভাগ্যের চাকা ঘুরেছে। তারা এখন সবাই স্বাবলম্বী। চাষিরা আরও জানান, এখন তাদের শাকসবজি বিক্রির জন্য হাট বাজারে যেতে হয় না। ব্যাপারীরা বাড়ির আঙিনা থেকে শাকসবজি ক্রয় করে নিয়ে যান। এসব ব্যাপারী ঢাকা চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে সবজি সরবরাহ করেন। এ ছাড়াও খরিপ-১ মৌসুমে ঢেঁড়স, পটোল, চিচিঙা, পুঁইশাক, বেগুন, মিষ্টি কুমড়া, পানি কুমড়া, চাল কুমড়া ইত্যাদি রবি মৌসুমে মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পালংশাক, পুঁইশাকসহ অন্যান্য সবজি আবাদ করে প্রায় একই ধরনের লাভ পাচ্ছেন উত্তরের ১৬ জেলার কৃষক। এখন উত্তরাঞ্চলের মহা সড়কগুলোর পাশে দাঁড়ালে দেখা যায়, বিভিন্ন হাটবাজারের পাশে ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে সবজি ক্রয়ের জন্য। রাত থেকে ভোর হতে হতেই এসব ট্রাক সবজি নিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানে চলে যাচ্ছে। বেশ কয়েক বছর থেকে এ অঞ্চলে সবজি চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা বেশি করে সবজি চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন।

এদিকে রংপুর ও রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় রবি ও খরিপ মৌসুমে দেড় লাখ হেক্টর জমি থেকে ২৯ লাখ মেট্রিক টন করলা, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লালশাক, পুঁইশাক, মুলা, টমেটো, কুমড়াসহ বিভিন্ন শাকসবজি  কৃষকদের ঘরে উঠেছে। প্রতি হেক্টরে গড় উৎপাদন হয়েছে  ১৯/২০ মেট্রিক টন। এ পরিমাণ উৎপাদিত পণ্যের সর্বনিম্ন বাজার মূল্য ৮ হাজার ৩৪০ কোটি টাকার ওপরে। প্রতি কেজি শাকসবজির দাম সর্বনিম্ন ২০/২৫ টাকা  হলে প্রতি মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে ২০/২৫  হাজার টাকায়। সেই হিসাবে দুই মৌসুমে সাড়ে ২৮ লাখ মেট্রিক টন শাকসবজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকার ওপরে। শাকসবজি বিক্রি করে কৃষক এ অঞ্চলে দরিদ্রতা দূরীকরণে বিশেষ ভূমিকা রাখছেন।

 

সর্বশেষ খবর