মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ০০:০০ টা

৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে আমানত

নিজস্ব প্রতিবেদক

৮০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে অফশোর ব্যাংকিংয়ে আমানত

বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের অন্যতম উৎস অফশোর ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদেশি সহায়তা না নিয়েও ডলারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। এ জন্য আরও সহজ নীতিমালার পাশাপাশি ও প্রবাসী বাংলাদেশিদের উৎসাহী করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে অফশোর ব্যাংকিং আইন করে দরজা খুলে দেওয়ায় ধীরে ধীরে যার সুফল আসতে শুরু করেছে। অফশোর ব্যাংকিংয়ে আস্থা তৈরি করা গেলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা যাবে বলে মত সংশ্লিষ্টদের। অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের ভিতরে পৃথক এক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বিদেশি কোম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালিত হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। ফলে পুরোটাই হয়ে থাকে বৈদেশিক মুদ্রায়। ব্যাংকের প্রচলিত কোনো নিয়ম বা নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ে প্রয়োগ না হলেও মুনাফা ও লোকসান যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে। ডলারের আন্তপ্রবাহ বাড়াতে নতুন যে বিষয়টি অফশোর ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত হয়েছে, সেটি হলো আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব। ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের মনোনীত নিবাসীর নামে অফশোর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নিয়ে আগেও বেশ কিছু প্রডাক্ট চালু ছিল। নতুন করে আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব নামে একটি ডিপোজিট সেবা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক ডলারে আমানত রাখার ক্ষেত্রে বার্ষিক ৮.৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে। এতে ভালো সাড়াও পেয়েছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানতের পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকার বেশি। সিংহ ভাগই বিদেশি আমানতকারী বা বড় বড় আন্তর্জাতিক কোম্পানির অর্থ। বাকি আমানত রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার কোম্পানিগুলোর। খুবই কম আমানতের মালিক ব্যক্তি খাত। অফশোর ব্যাংকিংয়ের ডলারের পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিয়ের অর্থ দিয়েও আমদানিকারকদের দায় পরিশোধ করে থাকে ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই আমানত থেকে ৮৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এবিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান বলেন, ‘ডলার সরবরাহ বাড়াতে এখন নানা স্কিম ঘোষণা করা হচ্ছে এবং ভালো মুনাফা অফার করা হচ্ছে। এতে আগ্রহ বাড়ছে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। এটা ভালো। দুই বছর আগেও এ রকম কোনো স্কিম ছিল না। এখন যেহেতু আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেহেতু এখানে আস্থা ধরে রাখা জরুরি। কারণ আমাদের অতীত খুব বেশি ভালো না। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করেও অনেক বিদেশি সময়মতো অর্থ ফেরত পাননি। তাই অনেকেই দেশে ডলার জমা রাখা থেকে বিমুখ হয়েছেন। এ বিষয়ে অফশোর ব্যাংকিং আইনে যেসব কথা বলা হয়েছে, ‘তা সঠিকভাবে পরিপালন ও বাস্তবায়িত হলে ডলার সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে অফশোর ইউনিট।’ অফশোর ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাইটেক পার্কগুলোর শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত নেওয়া যাবে। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বহির্লেনদেন সেবা দিতে পারবে। অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। এ আমানতের ওপর মুদ্রাভেদে রেফারেন্স রেটের (সোফর) অতিরিক্ত ১.৫০ শতাংশ থেকে ৩.২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ বা মুনাফা দিতে পারবে ব্যাংক। অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাব যে কোনো শুল্ক ও লেভি মুক্ত হবে।

সর্বশেষ খবর