মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২৪ ০০:০০ টা

অরক্ষিত খামারে বাড়ছে ফসলের ক্ষতি

►সুরক্ষায় নেই তেমন কোনো উদ্যোগ ► শস্য বিমায় আগ্রহ কম কৃষকের ► সারা দেশে ১ কোটি ৬৮ লাখ খামার ঝুঁকিপূর্ণ

শাহেদ আলী ইরশাদ

অরক্ষিত খামারে বাড়ছে ফসলের ক্ষতি

শস্য বিমা না থাকার কারণে জলবায়ু সম্পর্কিত বিপর্যয়ের আঘাতে দেশের কৃষকদের কোটি কোটি ডলারের ফসলের ক্ষতি হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সংগৃহীত তথ্য অনুসারে ৯টি ঘূর্ণিঝড় ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে ২০১৯ থেকে গত ছয় বছরে ৭০ কোটি ডলারের বেশি অর্থের ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব ধরনের জলবায়ু-সম্পর্কিত বিপর্যয় বিবেচনা করে কর্মকর্তারা বলেছেন, কৃষির ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত  প্রায় ৭২ কোটি ডলারের ফসল ক্ষতি হয়েছে। যা মোট জাতীয় উৎপাদনের (জিডিপি) ১ শতাংশ। 

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের কৃষি খাতের জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করেছে ফসলের ক্ষতির এই পরিমাণ সেটাই নির্দেশ করে। যদিও ক্ষতিপূরণে কৃষকদের সেভাবে সুরক্ষার উদ্যোগ নেই, কারণ বর্তমানে কৃষকদের জন্য শস্য বিমা ব্যাপকভাবে প্রচলিত নয়। ২০১৯ সালে আবহাওয়া সংক্রান্ত দুটি বড় বিপর্যয়ের কারণে কৃষির ক্ষতি হয়েছে ১০ কোটি ৫৭ লাখ ডলার।

২০২০ সালে একটি একক বিপর্যয়ের ফলে ১১ কোটি ৫৮ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। পরের বছর ২০২১ সালে একটি বড় বিপর্যয়ের ফলে ৩৬ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। ২০২২ সালের একটি ঘটনায় ১ কোটি ২৪ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। যেখানে ২০২৩ সালে তিনটি বড় দুর্যোগে  ৪ কোটি ২৪ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়েছিল। ২০২৪ সালের একটি দুর্যোগে মোট ৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলারের ক্ষতি হয়েছে। যদিও ২০২৪ সালের আগস্ট এবং সেপ্টেম্বরে  দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় উল্লেখযোগ্য বন্যার ঘটনাগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। কর্মকর্তারা বলেছেন, ছোট ছোট ঘটনায় ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ না করা হলেও তারা শুধু বড় দুর্যোগের ক্ষতির মূল্যায়ন করে থাকেন। তবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২২ সালের মে মাসে প্রকাশিত তথ্য মতে, শুধু ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যার মতো বড় দুর্যোগের ক্ষতিই নয়, ভারী বৃষ্টিপাত, খরা, জলাবদ্ধতা, জলোচ্ছ্বাস, বজ্রপাত, ভূমিধস এবং নদী ভাঙনের মতো কারণগুলোও রয়েছে। বৈশ্বিক দুর্যোগ পরিসংখ্যান মোতাবেক, বাংলাদেশ ২০০০ সাল থেকে ১৩৩টি আবহাওয়া, জলবায়ু ও জলবিদ্যুৎ সংক্রান্ত বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।

অর্ধেকেরও বেশি (৭০টি) ঝড়, বিশেষ করে গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং বন্যা ৪১টি। কৃষি শুমারি অনুসারে দেশের মোট ১ কোটি ৬৮ লাখ খামার অরক্ষিত রয়েছে। কোনো কারণে এসব খামারের ক্ষতি হলে সেখান থেকে পুনরুদ্ধার এবং কৃষিকাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাব রয়েছে, শুধু শস্য বিমা অবহেলিত হওয়ার কারণে। কৃষি খাত বিশেজ্ঞরা বলছেন, ফসল হারানোর পরে আমাদের আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন, কিন্তু এখন কোনো বিমা নেই। বাংলাদেশে শস্য বিমার ব্যাপক অভাব রয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সাবেক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ২০১৪ সালে ম্যানিলা ভিত্তিক এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে একটি ফসল-বিমা প্রকল্প চালু করার সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলাম। শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থে শস্য বিমা নেই। কৃষকদের নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্সে আগ্রহ খুব কম। সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির অংশ হিসেবে অনেকেই এই বিমা করে থাকেন। কিন্তু এই উদ্যোগ সমগ্র কৃষি খাতের জন্য ব্যাপক বলা যায় না।

শস্য বিমা কার্যকর করার জন্য ভর্তুকির ওপর জোর দিয়ে তারা বলেন, যদি এই ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয় তাহলে কৃষকরা শস্য বিমায় আগ্রহী হবেন। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) হিসাবে দেশে বর্তমানে ৪৬টি ননলাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কার্যক্রম রয়েছে। ১৯৯০ সালের পর থেকে বাংলাদেশে নিবন্ধিত বিমা প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি অনুমোদন পেয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে। তবে আস্থাহীনতার কারণে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেক গ্রাহকই আকৃষ্ট করতে পারছে না। বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) তথ্য অনুসারে, ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশে ৭২ বিমা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ৬০টি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কোনো বিমা প্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়নি।

সর্বশেষ খবর