বুধবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০১৩ ০০:০০ টা

কম্পিউটার দ্রষ্টার কাহিনী

শামছুল হক রাসেল

কম্পিউটার দ্রষ্টার কাহিনী
অ্যালান ম্যাথিসন ট্যুরিং। যে যন্ত্র ছাড়া আমরা এখন অচল, সেই কম্পিউটার যে তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত, তা প্রথম এসেছিল এই ব্রিটিশ বিজ্ঞানীর মাথা থেকে। মাত্র ৪২ বছরের অসামান্য ও ব্যতিক্রমী জীবন ছিল তার। তার ট্যুরিং তত্ত্বের উপর নির্ভর করে আজকের এ অগ্রযাত্রা। অথচ আমরা অনেকেই তার সম্পর্কে জানি না। ট্যুরিং মেশিন সত্যিকারের কোনো যন্ত্র নয়, যন্ত্রের বিমূর্ত কাঠামো মাত্র। এই বিমূর্ত কাঠামো বাস্তবে বহুভাবে রূপায়ণ করা সম্ভব। কপিকল থেকে মানব মস্তিষ্ক, ক্যাশ মেশিন থেকে সুপার কম্পিউটার_সবই ট্যুরিং মেশিনের রূপায়ণ। নির্দিষ্ট উপাত্ত (ইনপুট) থেকে বিশেষ নিয়ম অনুসারে সীমিত সংখ্যক ধাপে যে যন্ত্রের সাহায্যে একটি মাত্র সুনির্দিষ্ট আউটপুট (উত্তর)-এ পেঁৗছানো যায়, তাকেই ট্যুরিং মেশিন বলা যেতে পারে। ছোটবেলা থেকেই ডানপিটে ছিলেন ম্যাথিসন ট্যুরিং। অনন্য সাধারণ মেধাবী মননের প্রতীক সমকামী এ মানুষটি জ্ঞানের রাজ্যে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে যতখানি সাবলীল, তার চেয়েও সৎ ও সাহসী ছিলো তার উদ্ভট জীবনবোধ। কোথাও কোনো রকম আপসে যেতে নারাজ ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান ডুবোজাহাজের অবস্থান ও আক্রমণের বিবরণ সংবলিত সংকেতলিপির পাঠোদ্ধার করে যিনি নায়কোচিত সম্মান পেয়েছিলেন, আধুনিক কম্পিউটারের জনক সেই ট্যুরিংয়ের বিরুদ্ধেই মামলা ওঠে ইংল্যান্ডের আদালতে সমকামিতার অভিযোগে। তিনি তার স্বাভাবিক প্রবণতা গোপন করার কোনো চেষ্টাই করেননি। আদালত তার অস্বাভাবিক যৌনতা দমন করার জন্য শাস্তি হিসেবে তাকে নিয়মিতভাবে হরমোন ইনজেকশন নিতে বাধ্য করেন। চরম অপদস্থ হয়েও তার মধ্যে মানসিক অবসাদের কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। অথচ ১৯৫৪ সালের ৭ জুন তার প্রাণচঞ্চল জীবনের ইতি টানতে তিনি সায়ানাইড বিষের সাহায্য নেন। ১৯১২ সালের ২৩ জুন লন্ডনে অ্যালান ম্যাথিসন ট্যুরিংয়ের জন্ম হয়। ছেলেবেলা থেকেই নতুন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রতি তার অসীম আগ্রহ ছিল। হাতের লেখা দুষ্পাঠ্য হওয়ার অপরাধে স্কুল থেকে তাকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসতে দিতে চায়নি। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত ট্যুরিং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত নিয়ে পড়াশোনা করেন। কেমব্রিজের উন্মুক্ত আবহাওয়া তার প্রতিভার বিকাশে সহায়ক হয়। ১৯৩৫ সালে ট্যুরিং কিংস কলেজের ফেলো নির্বাচিত হন এবং ১৯৩৬-এ মাত্র ২৪ বছর বয়সে হিলবার্টের দশম সমস্যার উত্তর দিয়ে গণিত জগতে সাড়া ফেলে দেন। বিশ শতকের প্রথম বছরে প্রখ্যাত গণিতজ্ঞ ডেভিড হিলবার্ট গণিতের ভিত্তি বিষয়ে যে যে সমস্যার সমাধান হয়নি, তার একটা তালিকা তৈরি করেছিলেন। দশম সমস্যাটা সংক্ষেপে বললে দাঁড়ায় এ রকম_ এমন কোনো সাধারণ পদ্ধতি আছে কি, যার সাহায্যে নিশ্চয় করে বলা যাবে গণিতের যে কোনো সমস্যা সমাধানযোগ্য কি না? ট্যুরিং প্রমাণ করে দেখালেন, এমন কোনো সাধারণ পদ্ধতি নেই। পাশাপাশিই বললেন, ট্যুরিং মেশিনের সাহায্যে গণনযোগ্য হলে একটি গাণিতিক ফাংশন সমাধানযোগ্য হতে পারে।

সর্বশেষ খবর