২৯ জুন, ২০২২ ১২:১৫

লিথিয়াম খনির বিরুদ্ধে পর্তুগালে গড়ে উঠছে প্রতিরোধ আন্দোলন

অনলাইন ডেস্ক

লিথিয়াম খনির বিরুদ্ধে পর্তুগালে গড়ে উঠছে প্রতিরোধ আন্দোলন

প্রতীকী ছবি

বর্তমানে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়াতে সর্বত্র ব্যাটারির চাহিদা বাড়ছে। আবার সেই ব্যাটারির জন্য প্রয়োজনীয় লিথিয়াম উত্তোলন পরিবেশের ক্ষতি করছে। পর্তুগালের একটি অঞ্চল এমন উভয় সংকটে পড়েছে।

জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ‘ডয়েচে ভেলে’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এই তথ্য।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক দিন সকালে নেলসন গোমেস মনে দুশ্চিন্তা নিয়ে গোয়ালে যান। আর কতদিন তিনি গরু পালন করতে পারবেন, সে বিষয়ে তার মনে সংশয় রয়েছে। কারণ পর্তুগালের উত্তর-পূর্বে কোভাস দো বারোসোয় লিথিয়ামের খনি চালু হলে মানুষ আর চাষবাস ও গবাদি পশু পালন করতে পারবে না।

গোমেস বলেন, “যা বোঝা যাচ্ছে, এখানে বিশাল মাত্রায় কর্মযজ্ঞ শুরু হবে। পাহাড়ে বিস্ফোরণ ঘটবে, খনির কারণে বিশাল পরিমাণ বাড়তি পানির চাহিদা দেখা দেবে, বিকট শব্দও এড়ানো যাবে না। আমরা একেবারে পাশেই থাকি।”

গোটা গ্রাম এমন হুমকির মুখে খনির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াচ্ছে। প্ল্যাকার্ড ও সাইনবোর্ডে তাদের স্লোগান ‘খনি নয়, জীবন চাই’ অথবা ‘সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করব’।

নেলসন গোমেস ও তার প্রতিবেশীরা এক নাগরিক উদ্যোগ শুরু করেছেন। কার্লোস গনসালভেসও তাতে যোগ দিয়েছেন। মৌমাছি পালনকারী হিসেবে তিনি শুধু তার সাড়ে চারশ’ মৌচাক নিয়েই চিন্তিত নয়।

কার্লোস বলেন, “এখানে খনি হলে গোটা গ্রামের জনসংখ্যার চাহিদার সমান পানি খরচ হবে। সেই পানি কোথা থেকে আসবে? আমাদের তো সেই পানি নেই। একটি পাহাড়ি নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা যায় বটে, কিন্তু এমন নদী বারবার শুকিয়ে যায়।”

পর্তুগালে ইউরোপের সবচেয়ে বড় লিথিয়ামের ভাণ্ডার রয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। কোভাস দো বারোসোয় ইতোমধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু সেই সম্পদ স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা বড় অংশের জন্য অভিশাপের মতো হয়ে উঠছে। এমনকি জেলা সদর বোটিকাসে মাত্র এক ব্যক্তিকে পাওয়া গেল, যিনি এই প্রকল্পের পক্ষে। তার মতে, লিথিয়িমের খনির অনুমতি দেওয়া উচিত। সবসময়ে শুধু পরিবেশের কথা না ভেবে অর্থনীতির কথাও ভাবতে হবে।

পর্তুগালের সরকারও সেই সম্পদের সদ্ব্যবহার করতে চায়। সে দেশের পরিবেশ ও জলবায়ু সংরক্ষণ মন্ত্রণালয় এ প্রসঙ্গে মনে করিয়ে দিয়েছে, যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ‘গ্রিন ডিল' মেনে চলা বাধ্যতামূলক। ইউরোপের নিজস্ব লিথিয়ামের জোগানের ক্ষেত্রেও পর্তুগাল অবদান রাখতে চায়।

কোভাস দো বারোসোর প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণেও অদূর ভবিষ্যতে লিথিয়াম উত্তোলনের কাজ শুরু হতে পারে। সেখানে আগেই কোয়ারৎসের খনি রয়েছে। মূলত বয়স্ক মানুষের সেই জনপদে প্রতিরোধ খুবই দুর্বল। ভিলা গার্সিয়ার মানুষের কাছে খনি নতুন কিছু নয়।

পাশের ট্রানকোসো এলাকায় জোসে আলমেইদা ও তার বন্ধুরা ফ্লায়ার বিতরণ করছেন। তারা সেখানকার মানুষের চোখ খুলে দিতে চান, তাদের বোঝাতে চান। কারণ লিথিয়াম খনি আরও বড় আকারে প্রকৃতির উপর হস্তক্ষেপ করবে।

জোসে বলেন, “খনির বাসিন্দাদের জন্য এর পরিণাম কী হবে, সে বিষয়ে যথেষ্ট জানানো হয়নি। মানুষকে ধোঁয়াশায় রেখেই নেপথ্যে যা করার করে নেওয়া হচ্ছে।”

২০ কিলোমিটার দূরে পিনইয়েলের মেয়র এমনকি পর্তুগালের সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে চান। রুই ভেন্তুরা বলেন, বছরের পর বছর ধরে এলাকার ৪০ শতাংশ জমিতে নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। সেইসঙ্গে ইউরোপীয় স্তরে তিনি কম ধ্বংসাত্মক বিকল্প সন্ধানের পক্ষে সওয়াল করছেন।

রুই বলেন, “আমরা সবাই লিথিয়ামের গুরুত্ব বুঝি। কিন্তু লিথিয়াম ছাড়াও যে অন্য পথ রয়েছে, সেটাও আমরা জানি। আমাদের সে বিষয়ে আরও গবেষণা চালানো উচিত। বিজ্ঞানীদের সেই কাজ করতে দিতে হবে। ইউরোপ মুখে সে কথা বললেও সেই লক্ষ্যে কাজ করছে না।”

মাত্র চার বছর আগে জাতিসংঘ পর্তুগালের উত্তরে কোভাস দো বারোসোকে কৃষি সংস্কৃতি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে জীবনযাত্রাই সেই সম্মান এনে দিয়েছে। গ্রামের মানুষ সেই মর্যাদা হাতছাড়া করতে চান না। কারণ তারাও তো নিজেদের মতো করে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলা করছেন। সূত্র: ডয়েচে ভেলে

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর