২২ আগস্ট, ২০২২ ১১:১০

ইউক্রেনকে আমেরিকার দেওয়া ‘হিমার্স’ আসলে কী?

অনলাইন ডেস্ক

ইউক্রেনকে আমেরিকার দেওয়া ‘হিমার্স’ আসলে কী?

সংগৃহীত ছবি

গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দেশ ইউক্রেনে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে রাশিয়া। এরই মধ্যে দেশটির বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নিয়েছে রুশ বাহিনী।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে চলমান এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে ক্রমাগত সহায়তা করে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেনকে সম্প্রতি এম-১৪২ হাই মোবিলিটি আর্টিলারি রকেট সিস্টেম (ব্যবস্থা) তথা হিমার্স দেওয়ার ঘোষণা দেয় আমেরিকা।

এদিকে, রবিবার রাশিয়া দাবি করেছে, যুদ্ধজাহাজ থেকে ছোঁড়া হাইপারসনিক ক্যালিবার মিসাইলের সাহায্যে ওডেসার একটি অস্ত্রাগার ধ্বংস করা হয়েছে। ওই অস্ত্রাগারেই যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হিমার্স রকেট সিস্টেম ছিল বলে রাশিয়ার দাবি। 

শুধু তা-ই নয়, খারসনে ইউক্রেনের দুটি এম-৭৭৭ হাউইৎজারও তারা ধ্বংস করেছে বলে রাশিয়া জানিয়েছে। ১০০ টন ডিজেল মজুত থাকা একটি পাম্পেও বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন।

তবে রাশিয়ার এই দাবি নাকচ করেছে ইউক্রেনীয় কতৃপক্ষ। তাদের দাবি, একটি শস্যের গুদামে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে রাশিয়া।

হিমার্স রকেট সিস্টেম কী?

হিমার্স হচ্ছে উচ্চপ্রযুক্তির হালকা রকেট লঞ্চার, যা গাড়িতে স্থাপন করা হয়। এটি যুদ্ধক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে ও এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে মোতায়েন করা যায়। প্রতিটি ইউনিটে ছয়টি করে জিপিএস গাইডেড রকেট থাকে। প্রায় এক মিনিটের মধ্যে অল্প কয়েকজন মিলেই পুনরায় রকেট লোড করে ফেলা যায়।

সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ইউক্রেনীয় বাহিনী যেসব রকেট সিস্টেম ব্যবহার করছে, তার চেয়ে এই রকেট সিস্টেম উল্লেখযোগ্যভাবে অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য। এই রকেটগুলোর পাল্লা ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল)।

যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এম-৭৭৭ হাউইৎজারের চেয়ে হিমার্সের পাল্লা প্রায় দ্বিগুণ বেশি। ইউক্রেন যুদ্ধে মে মাসে এম-৭৭৭ হাউইৎজারের ব্যবহার শুরু হয়।

হিমার্স কেন এত গুরুত্বপূর্ণ

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনীর অগ্রযাত্রা ঠেকাতে দীর্ঘদিন ধরে দূরপাল্লার কামান চেয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। সাধারণত পূর্বাঞ্চলের বিস্তৃত এই সমতল অঞ্চলে হামলা প্রতিহত করা অন্য ঘনবসতিপূর্ণ শহুরে এলাকাগুলোর চেয়ে কঠিন বলে মনে করা হয়।

যুদ্ধক্ষেত্রে রুশ বাহিনীর আরও পেছনের অবস্থানে হামলা চালাতে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে সাহায্য করবে এই হিমার্স। আরও সুরক্ষিত দূরত্বে অবস্থান করেও তারা হামলা চালাতে সক্ষম হবে।

রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের গবেষক স্যামুয়েল ক্র্যানি-ইভানস আল-জাজিরাকে বলেন, “বিস্তৃতভাবে বলতে গেলে ইউক্রেনের চেয়ে রাশিয়ার কামানের মজুত দীর্ঘ পাল্লার ও সংখ্যায় বেশি।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আরও উন্নত করা হয়, তবে বর্তমানে রুশ বাহিনীর ব্যবহার করা রকেট সিস্টেমগুলো দিয়ে ৯০ অথবা ১২০ কিলোমিটার দূরত্ব পর্যন্ত ব্যাপক ও ধ্বংসাত্মক গোলাবর্ষণ সম্ভব। এসব রকেট সিস্টেমের মধ্যে বিএম-৩০ সিমের্চ (টর্নেডো) রকেট সিস্টেম উল্লেখযোগ্য।”

স্যামুয়েল বলেন, “যদি হাউইৎজারের পাল্লার বাইরে ব্যবহার করা হয়, তাহলে রাশিয়ার এই রকেট সিস্টেমগুলোর দূরত্ব পর্যন্ত পৌঁছাতে এখন প্রথমত হিমার্সই ইউক্রেনকে সক্ষম করে তুলবে। এই দূরপাল্লার রকেট সিস্টেম রুশ সরঞ্জাম ও কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে ইউক্রেন। লড়াইয়ে টিকে থাকতে এই সরঞ্জামগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

হিমার্স রকেট সিস্টেমের কার্যকারিতা প্রসঙ্গে স্যামুয়েল বলেন, “শেষ পর্যন্ত এটা নির্ভর করছে রুশ বাহিনী অভিযানের বিস্তৃতির ওপর নজরদারি ও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যবহারে আসা নতুন এই রকেট সিস্টেমের সঙ্গে এর সমন্বয়ে ইউক্রেনের সামর্থ্যের ওপর।” সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স, ডয়েচে ভেলে

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর