২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ১৬:৫৪

সেই শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল, ফিরতে পারবে না ব্রিটেনে

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

সেই শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল, ফিরতে পারবে না ব্রিটেনে

নানা বিতর্কের মধ্যে শেষ পর্যন্ত আইএস বধূ শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তই বহাল রেখেছে ব্রিটেনের স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশন। আজ বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় বিচারপতি রবার্ট জে এই রায় ঘোষণা করেন। 

রায়ের আগে বুধবার সকালে ব্রিটিশ মন্ত্রী জনি মার্সার বলেছিলেন, ‘শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব থাকবে কি থাকবে না বা এটা নিয়ে প্রতিক্রিয়া দেবেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কারণ নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত পূর্বের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়েছিলেন। তবে অবশ্যই সে দেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি। এই মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবলিক ডোমেনে নেই।’ তবে এই অভিজ্ঞ মন্ত্রী বলেছিলেন, আদালত এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি তার শ্রদ্ধা ও আস্থা রয়েছে।

শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার পাঁচ দিনের শুনানিতে মূলত প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল ১৫ বছরের শামীমা বেগমকে পাচার করা হয়েছিলো কিনা সেই বিষয়টি। সম্প্রতি বিবিসির প্রতিবেদনে জানা যায়, শামীমা বেগমকে কানাডার এক গোয়েন্দা রিক্রুট করে সিরিয়ায় পাচার করে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষকে বিয়ে করতে বাধ্য করে। সেই গোয়েন্দা মূলত কানাডার নাগরিকত্ব পাবে এমন শর্তে কানাডার কাছে তথ্য প্রদান করতো, একই সাথে সে গোপনে আইএসের রিক্রুটার হিসাবেও কাজ করত।

২০২০ সালে স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশন বলে শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। কারণ শামীমা বেগমের বাংলাদেশের নাগরিকত্ব আছে। তবে বাংলাদেশ খুব শক্তভাবে এর প্রতিবাদ করে। শামীমা বেগমের বাবা ও মা দুজনই বাংলাদেশি নাগরিক হলেও শামীমা বেগম কখনোই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেয়নি। এমনকি শামীমা কখনোই কোন ধরনের পাসপোর্ট তৈরি করেনি, কখনোই বাংলাদেশ ভ্রমণও করেনি। ২০১৫ সালে শামীমা বেগম যখন সিরিয়া গমন করে তখন সে তার বোনের পাসপোর্ট নিয়ে ফ্লাইটে ওঠে বলে জানিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ। বাংলাদেশ সরকার বলেছিল, শামীমা বেগমকে পাঠানো হলে বাংলাদেশ তাকে গ্রহণ করবে না। এই ধরনের অপরাধের শাস্তি বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড।

২০১৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শামীমা বেগম তার দুজন বান্ধবীর সাথে স্কুল থেকে পালিয়ে তুরস্ক হয়ে সিরিয়াতে আইএসে যোগ দেয়। সেখানে শামীমা বেগমের সাথে বিয়ে হয় ডেনমার্কের নাগরিক জিহাদি রেজভিকের সাথে। শামীমা বেগম বিশ্ব গণমাধ্যমে সবচেয়ে আলোচিত, সমালোচিত জিহাদি বধূ হিসাবে পরিচিত।

২০১৯ সালে সানডে টাইমসের এক সাংবাদিক শামীমা বেগমকে খুঁজে পান সিরিয়ার একটি ক্যাম্পে। শামীমা বেগম ততদিনে ৩ সন্তানের মা হলেও সবগুলো সন্তানই জন্মের পর নানা অসুখে মারা যায়। এসময় শামীমা বেগম যুক্তরাজ্যে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়ে বলে, সে যা করেছে তার জন্য মোটেও অনুতপ্ত নয়। এরপরই আবারো বিতর্ক শুরু হয় শামীমা বেগমকে নিয়ে। ২০১৯ সালেই তুমুল বিতর্কের মধ্যে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাজিদ জাভিদ শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল করেন।

এরপর ব্রিটিশ সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত বহাল রাখে। পরবর্তীতে শামীমা বেগম ব্রিটেনকে ভালোবাসে, সে যা করেছে তার অনুতাপও প্রকাশ করেন। ব্রিটেনে ফিরে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কাজ করার ইচ্ছেও প্রকাশ করে। জানায়, সরকারকে সহায়তা করার ইচ্ছার কথা।তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে শামীমার আইনজীবী ও পরিবার স্পেশাল ইমিগ্রেশন আপিলস কমিশনে আবেদন করে। দীর্ঘ ১ বছরের বেশি সময় ধরে পাঁচটি তারিখে শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালের রায় আসলো। 


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর