জার্মানির জোট সরকারের মধ্যে কোন্দল দূর করতে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের মাঝে ঘর গোছানোর উদ্যোগ নিচ্ছেন জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস।
জার্মানির প্রথম তিন দলীয় জোট সরকার গঠনের সময়ে চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস দেশের আধুনিকীকরণকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নিজের সরকারকে ‘অগ্রগতির জোট' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। একাধিক উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্যমাত্রা স্থির করে সেই জোট উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধ অনেক হিসেব গোলমাল করে দিয়েছে। সংকটের সময়ে প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি-নিরাপত্তার মতো বিষয় বিশেষ প্রাধান্য পেয়েছে। সেইসঙ্গে প্রবল চাপের মুখে শরিক দলগুলির মধ্যে প্রকাশ্যে মনোমালিন্য বেড়ে গেছে। বিশেষ করে দুই ছোট শরিক-পরিবেশবাদী সবুজ দল ও উদারপন্থি এফডিপি দলের মন্ত্রীদের মধ্যে কলহ চ্যান্সেলরের জন্য প্রবল অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে।
এমনই প্রেক্ষাপটে বার্লিনের উপকণ্ঠে মেসেব্যার্গ কেল্লায় দুই দিনের জন্য মিলিত হচ্ছে শলৎসের মন্ত্রিসভা।গতকাল রোববার চ্যান্সেলর শলৎস দেশবাসীর উদ্দেশ্যে এখনো সমাজ ও অর্থনীতির আধুনিকীকরণের বিষয়ে নিশ্চিত থাকার কথা বলেন। মন্ত্রিসভার এই বিশেষ বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি জলবায়ু নীতি ও ডিজিটাইজেশনের মতো বিষয় বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে।
চ্যান্সেলর বলেন, জার্মানি দ্রুত গতিতে অর্থনীতির আধুনিকীকরণ ঘটিয়ে কার্বনমুক্ত হয়ে উঠবে এবং বিশ্বব্যাপী সফলভাবে রপ্তানি চালিয়ে যাবে। সেইসঙ্গে দেশের মানুষও ভালো বেতনের চাকরি করতে পারবেন।
জার্মান মন্ত্রিসভার এই বৈঠকের শুরুতেই উপস্থিত ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন। ইইউ দেশগুলিতে পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ি পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রার ক্ষেত্রে জার্মানির পরিবহণমন্ত্রীর আপত্তি যে সংকট সৃষ্টি করেছে, ‘গঠনমূলক সংলাপের মাধ্যমে' সেই জটিলতা কাটিয়ে তোলা সম্ভব হবে বলে ফন ডেয়ার লাইয়েন ও শলৎস আশা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, একের পর এক নির্বাচনে ধাক্কা খেয়ে সরকারের ছোট শরিক এফডিপি দল পেট্রল ও ডিজেলচালিত গাড়ি পুরোপুরি বাতিল করার পরিকল্পনায় বাধা সৃষ্টি করছে।
গত বছর অক্টোবর মাসেই ইইউ পার্লামেন্ট ও সদস্য দেশগুলি ২০৩৫ সালের পর শুধু কার্বন নির্গমনহীন নতুন গাড়ি পথে নামানোর বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে। গত মঙ্গলবার সেই সিদ্ধান্ত আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদনের কথা ছিল। জার্মানির এফডিপি দলের আপত্তির কারণে সেই প্রক্রিয়ায় বিলম্ব ঘটছে। এফডিপি ‘ই-ফুয়েল' চালিত গাড়ির ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমের দাবি করছে। ‘ই-ফুয়েল' কার্বনমুক্ত হলেও সেই জ্বালানি উৎপাদন করতে অনেক বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়।
জার্মান চ্যান্সেলর নিজের জোট সরকারের মধ্যে এমন কোন্দল দূর করার বিষয়ে অন্তত প্রকাশ্যে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাস দেখাচ্ছেন। তার মতে, মৌলিক নীতির ক্ষেত্রে ঐকমত্যের কোনো অভাব নেই। খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে মতপার্থক্য দূর করা সম্ভব হবে বলে শলৎস আশা প্রকাশ করেন। বাজেটের ক্ষেত্রেও বিভিন্ন মন্ত্রীদের প্রত্যাশা নিয়ে টানাপড়েন দূর করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদী তিনি।
সূত্র : ডয়চে ভেলে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত