২৮ জুন, ২০২৩ ১৩:৩১

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন আরও যারা

অনলাইন ডেস্ক

টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে বিপাকে পড়েছিলেন আরও যারা

টাইটান সাবমার্সিবল। সংগৃহীত ছবি

একশ’ এগারো বছর আগে আটলান্টিক মহাসাগরের অতল গভীরে ডুবে যাওয়া জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়ে ধ্বংস হয়ে গেছে ডুবোযান ‘টাইটান সাবমার্সিবল’। এর পাঁচ আরোহীরও মৃত্যু হয়েছে আটলান্টিকের অতলে।

ওশানগেট নামে একটি সংস্থার তৈরি টাইটানের এই চূড়ান্ত পরিণতির কারণ হিসেবে ‘ক্যাটাস্ট্রফিক ইমপ্লোশন’কে দায়ী করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, সমুদ্রের নীচে পানির প্রচণ্ড চাপ সহ্য করতে পারেনি ২২ ফুটের টাইটান।

পানির চাপে আচমকাই ভিতরের দিকে তুবড়ে গিয়েছিল ডুবোযানটি। ভিতরে থাকা পাঁচ আরোহী কয়েক মিলিসেকেন্ডের মধ্যে টাইটানের মধ্যেই পিষে যান। তৎক্ষণাৎ তাদের মৃত্যু হয়।

আটলান্টিকের পানি থেকে এখনও টাইটানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা যায়নি। আমেরিকা ও কানাডার উপকূলরক্ষী বাহিনী জানিয়েছে, ঘটনাস্থলের পরিস্থিতি অত্যন্ত প্রতিকূল। তাই উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

টাইটানের পরিণতি সারা বিশ্বকে আলোড়িত করেছে। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও অনেকে অনেকবার আটলান্টিকের সাড়ে ১২ হাজার ফুট নীচে গিয়ে দেখে এসেছেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ।

১৯৯৮ সালে অস্কার প্রাপ্ত হলিউড ছবি ‘টাইটানিক’-এর নির্মাতা জেমস ক্যামেরন ছবি তৈরির আগে নিজে মোট ৩৩ বার আটলান্টিকের গভীরে জাহাজের ধ্বংসাবশেষটি দেখতে গিয়েছিলেন।

ক্যামেরন-সহ অন্য অনেক পর্যটক টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পর্যবেক্ষণ করে এসে নিজেদের ভয়াবহ ও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা শুনিয়েছেন। আটলান্টিকের ওই এলাকার পরতে পরতে রয়েছে রহস্যের জাল বিছানো।

২০০৯ সালে ক্যামেরনের আত্মজীবনী ‘দ্য ফিউচারিস্ট’ প্রকাশিত হয়। সেখানে টাইটানিক দর্শনের অভিজ্ঞতার কথা লিখেছেন কানাডিয়ান পরিচালক। ছবির স্বার্থে যে ৩৩ বার তিনি সমুদ্রে ডুব দিয়েছেন, তার মধ্যে তৃতীয়বার যেন মৃত্যুকে ছুঁয়ে ফিরে এসেছিলেন।

১৯৯৫ সালে তৃতীয়বার টাইটানিক দর্শনে গিয়ে সমুদ্রের নীচে মহাবিপদে পড়েছিলেন ক্যামেরন। ডুবোজাহাজে তিনি ছাড়াও ছিলেন পাইলট অ্যানাটোলি স্যাগালেভিচ এবং এক রাশিয়ান ইঞ্জিনিয়ার।

ক্যামেরন জানান, টাইটানিকের কাছাকাছি পৌঁছে এক ভয়ঙ্কর বালিঝড়ের মুখে পড়েছিলেন তারা। সমুদ্রের নীচের বালি উথালপাথাল করে ধেয়ে এসেছিল ছোট্ট ডুবোযানটির দিকে। কয়েক সেকেন্ডের জন্য তারা সকলে চোখ বন্ধ করে ফেলেছিলেন।

ক্যামেরনদের ডুবোযানের বিদ্যুৎ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল। ব্যাটারিও প্রায় ফুরিয়ে এসেছিল। কিছুটা ওঠার পর আবার নীচে তলিয়ে গিয়েছিল যানটি। তিনবার চেষ্টার পর ডুবোযানটিকে আবার সচল করতে পেরেছিলেন তারা।

তবে সমুদ্রের বালিঝড় বড় কোনও ক্ষতি করতে পারেনি ক্যামেরনদের। পাঁচ ঘণ্টার চেষ্টায় সমুদ্রপৃষ্ঠ ভেদ করে দিনের আলোয় মাথা তুলতে পেরেছিলেন তারা।

১৯৯১ সালে কানাডার সমুদ্রতলের চিকিৎসক জো ম্যাক্‌কিনিস টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শনের ১৭টি অভিযানে শামিল হয়েছিলেন। শেষবারের অভিযানে বিপদে পড়েন তিনি।

ম্যাক্‌কিনিসদের ডুবোযানটি টাইটানিক দর্শনের পর উপরে ওঠার সময় আটকে গিয়েছিল। কিছুতেই সমুদ্রতল থেকে উপরের দিকে তোলা যাচ্ছিল না যানটিকে। খবর পেয়ে দ্বিতীয় একটি সাহায্যকারী যান পাঠানো হয়।

সাহায্যকারী যানটি গিয়ে দেখে, ম্যাক্‌কিনিসদের যানের একটি অংশ আটকে আছে সমুদ্রের তলার তারের জটে। দীর্ঘক্ষণের চেষ্টার পর কৌশলে সেই জট থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিলেন তারা।

২০০০ সালে আর এক দুঃসাহসিক অভিযাত্রী মাইকেল গুইলেন টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে গিয়েছিলেন। টাইটানিক অভিযানে যাওয়া প্রথম সাংবাদিক তিনিই। আটলান্টিকের বিপদ তারও পিছু নিয়েছিল।

গুইলেন জানান, তাদের ডুবোযান যে মুহূর্তে জাহাজের সামনের ভাঙা অংশটি অতিক্রম করে, তখনই তারা অনুভব করেন, তারা দ্রুত গতিতে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছেন। সমুদ্রতলের আকস্মিক চোরাস্রোতের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন গুইলেনরা।

গুইলেন জানান, স্রোতের টানে তাদের ডুবোযান তরতরিয়ে এগিয়ে টাইটানিকের প্রপেলারে সজোরে ধাক্কা খায়। সেখানে ঘণ্টাখানেক আটকে ছিলেন তারা। পরে আবার উপরে উঠতে পেরেছিলেন।

আটলান্টিকের সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে এমনই অনেক বিপর্যয় লুকিয়ে আছে। সময়ে সময়ে যারা উঁকি মারে অভিযাত্রীদের ডুবোযানের জানালা দিয়ে। কেউ বিপদ এড়াতে পারেন, কারও পরিণতি হয় টাইটানের মতো।

১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউ ইয়র্ক যাওয়ার পথে উত্তর আটলান্টিকের সাগরে ডুবে গিয়েছিল টাইটানিক। ওই সময় জাহাজে ২,২২৪ জন যাত্রী ছিল। দেড় হাজারের বেশি মানুষ দুর্ঘটনায় মারা যায়। জাহাজের ধ্বংসাবশেষ এখনও রয়ে গেছে আটলান্টিকের গভীরে। সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, এনডিটিভি, ডেজার্ট নিউজ, মার্কা

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর