১২ জুলাই, ২০২৩ ২২:৫৮
ইইউ অবজার্ভারের নিবন্ধ

‘বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করা মোটেও উচিত হবে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের’

অনলাইন ডেস্ক

‘বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করা মোটেও উচিত হবে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের’

ইইউর সাবেক কমিশনার ও ধর্ম বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়ান ফিজেল

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উচিত হবে না বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে কোনোভাবেই সমর্থন দেওয়া। ইইউ’র সাবেক কমিশনার ও ধর্ম বিষয়ক বিশেষ দূত ইয়ান ফিজেল এই মন্তব্য করেছেন।

ইয়ান ফিজেল ‘দ্য ইইউ মাস্ট নট সাপোর্ট আ কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক নিবন্ধে এসব কথা বলেন। তিনি বর্তমানে ইউরোপিয়ান ইনস্টিটিউট অব ইনোভেশন অ্যান্ড টেকনোলজি’র (ইআইটি) সদস্য। নিবন্ধটি চলতি সপ্তাহে দ্য ইউরোপিয়ান টাইমস ও ইইউ অবজার্ভারে প্রকাশিত হয়।

এই নিবন্ধে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা দেওয়া হলে তা আবারও সামরিক বাহিনীর হাতে চলে যেতে পারে। যেমনটা ঘটেছিল এখন থেকে ১৭ বছর আগে ২০০৬ সালে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুটি দেশ থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের দৃষ্টান্ত দিয়ে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে সমর্থন না দিতে ইইউ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ইয়ান ফিজেল।

নিবন্ধে বাংলাদেশ পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ইয়ান ফিজেল বলেন, ‘বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। আমাদের সবাইকে দেশটির দিকে নজর দেওয়া উচিত।’

বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তিক্ত ইতিহাস তুলে ধরে ইইউর সাবেক এই কমিশনার বলেছেন, সবশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলে ঘটনাক্রমে তা সেনাবাহিনীর হাতে চলে যায়। ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করে নির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা থাকলেও তারা নির্বাচনই স্থগিত করে। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত কার্যত দেশ শাসন করে। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সেই সময় প্রধান বিরোধী দল ও বর্তমানে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন বয়কট করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়। শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর সব নেতাকে গ্রেফতার করা হয় এবং প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো একটা অনির্বাচিত সরকার পরবর্তী দুই বছর ধরে যেসব কর্মকাণ্ড চালিয়েছিল, তা সাধারণত কোনো জান্তা সরকারই করে থাকে।

বিএনপির বর্তমান দুই শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান ছাড়াও সেই সময় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও জেল-জরিমানা দেওয়া হয়। সেদিনের সেই তিক্ত অভিজ্ঞতা তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবি প্রত্যাখ্যানের ক্ষেত্রে অন্যতম বড় প্রভাবক হয়ে থাকতে পারে।

ইয়ান ফিজেল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এমন একটি ব্যবস্থা যা বিশ্বের আর কোথাও নেই। ২০১১ সালে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকার বলেছে, আগের নির্বাচনগুলোতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজনীয়তা ছিল। কারণ সে সময়গেুলোতে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের কোনো আইনি ভিত্তি ছিল না। তবে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য একটি নতুন আইন পাস করা হয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে চাপ অব্যাহত রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে নির্বাচন তদারকি করতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।

নিবন্ধে বলা হয়, চলতি বছরের জুনে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর গাজীপুরে সাম্প্রতিক স্থানীয় নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে ও বড় কোনো অঘটন ছাড়াই অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীকে কম ব্যবধানে হারিয়ে দিয়েছেন। যদিও বিএনপি এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি।

ইয়ান ফিজেলের মতে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধীদের নির্বাচন বয়কটের আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলে আরেকটি সামরিক হস্তক্ষেপের মঞ্চও প্রস্তুত হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে যদি সামরিক বাহিনীকে থামাতে হয়, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সামরিক নেতাদের এটা অবশ্যই স্পষ্ট করে দিতে হবে যে এর পরিণতি হবে দ্রুত, অত্যন্ত কঠোর এবং ব্যক্তিগত।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর