১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ১৪:০২

তালিকা ধরে খোঁজ নিয়ে শিক্ষিকা জানলেন, ক্লাসের সব শিক্ষার্থীই মারা গেছে

অনলাইন ডেস্ক

তালিকা ধরে খোঁজ নিয়ে শিক্ষিকা জানলেন, ক্লাসের সব শিক্ষার্থীই মারা গেছে

সংগৃহীত ছবি

সম্প্রতি ভয়াবহ ভূমিকম্প হয় উত্তর আফ্রিকার দেশ মরক্কো। এতে প্রায় তিন হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ওই ভূমিকম্পে দেশটির কয়েকটি গ্রাম মাটির সঙ্গে মিশে যায়।

এবার সামনে আসল আরেকটি হৃদয়বিদারক ঘটনা। সেখানকার একটি স্কুলের একটি ক্লাসের সব শিক্ষার্থীই মারা গেছে ওই ভূমিকম্পে।

আরবি ও ফারসি ভাষার শিক্ষক নেসরিন আবু এলফাদেল। তার ক্লাসে ছিল ৩২ জন শিশু। মরক্কোর প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্পের পর শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারলেন, তাদের কেউ বেঁচে নেই। ওই শিশুদের বাড়ি দেশটির মধ্যাঞ্চলের আদাসেল গ্রামে।

গত সপ্তাহে ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের এলফাদেল শিক্ষার্থীদের খোঁজ নিতে গ্রামে যান। গিয়ে দেখতে পান পুরো গ্রামই লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।

মারাকেশের দক্ষিণের এলাকাগুলো ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছে। যেখানে অনেক পাহাড়ি গ্রাম সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। আদাসেল সেই জায়গাগুলোর একটি।

শিক্ষার্থীদের ‘ফেরেশতা’ হিসেবে বর্ণনা করেন এ শিক্ষিকা। যাদের ছিল জানার প্রবল আগ্রহ। তিনি জানান, দারিদ্র্য ও ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে লড়াই করা সত্ত্বেও ওই শিশু ও তাদের পরিবার স্কুলে যাওয়াকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিল।

নেসরিন আবু এলফাদেল বলেন, “৮ সেপ্টেম্বর রাতে ভূমিকম্পের ঠিক পাঁচ ঘণ্টা আগে আমাদের শেষ ক্লাস ছিল। এদিন তিনি শিক্ষার্থীদের মরক্কোর জাতীয় সংগীত শিখিয়েছিলেন। তিনদিন পর ১১ সেপ্টেম্বর সকালে পুরো স্কুলের সামনে পরিবেশনের পরিকল্পনা ছিল তাদের।”

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ভূমিকম্পের পরদিন শিক্ষিকা গ্রামে গিয়ে একে একে সবার খোঁজ করেন। যখন জানতে পারেন কেউ বেঁচে নেই, তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

তিনি বলেন, আমি ক্লাসের হাজিরা খাতা ধরে তাদের খোঁজ করি। মোট ৩২ জন। পরে জানতে পারি সবাই মারা গেছে।

স্থানীয় শিশুরা নিজস্ব ভাষা তামজাইটেই কথা বলত। আরবি ও ফরাসি তাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। কিন্তু এ শিশুরা খুবই মেধাবী ছিল। তারা দুই ভাষাতেই প্রায় সাবলীল হয়ে উঠেছিল বলে জানান আলফাদেল।

এ শিক্ষিকা তার পেশা চালিয়ে যাবেন বলে জানান। আশা করছেন, ভূমিকম্পে ভেঙে পড়া স্কুল কর্তৃপক্ষ নির্মাণ করে দেবে।

তিনি বলেন, আবার স্কুল গড়ে দিলে ক্লাসে শিক্ষার্থীরা ফিরে আসবে। তখন আমি সেই ৩২ শিশুকে স্মরণ করব, তাদের গল্প বলব।

সরকারি বিবৃতি অনুসারে, মোট ৫৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মাত্রায় ক্ষতির শিকার হয়েছে। যার মধ্যে অনেকগুলো সম্পূর্ণরূপে ধসে পড়েছে বা গুরুতর কাঠামোগত ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

মরক্কোর সরকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বন্ধ করে দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর