১৪ মার্চ, ২০২৪ ১২:৪৮

সিএএ কোনোভাবেই প্রত্যাহার নয়: অমিত শাহ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সিএএ কোনোভাবেই প্রত্যাহার নয়: অমিত শাহ

ফাইল ছবি

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কোনোভাবেই প্রত্যাহার করা হবে না, সাফ জানিয়ে দিয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। 

গত সোমবার ভারত জুড়ে এই নাগরিকত্ব আইন চালু হয়। এই সম্পর্কিত একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সিএএ চালু করার কথা ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই আইন অনুযায়ী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা অমুসলিম নাগরিকরা (হিন্দু শিখ খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি, বৌদ্ধ) ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবেন। তবে মুসলিমদের বিষয়ে আইনে সরাসরি কিছু বলা হয়নি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই আইনের মারপ্যাচে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন দেশটির অনেক মুসলিম নাগরিক।

ভারতের বিরোধী দলগুলোর দাবি সিএএ অসাংবিধানিক। এই আইন প্রত্যাহারেরও দাবি জানিয়েছিল বিরোধীরা। নাগরিকত্বের জন্য আবেদন জানালে উল্টো তাদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেওয়া হতে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল বিরোধী দলগুলি। সেই ইস্যুতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন আইনে এমন কোন সংস্থানই নেই। 

বৃহস্পতিবার সংবাদসংস্থা এএনআই'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন 'ভারতে বসবাসকারী প্রত্যেক নাগরিকদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়াটা আমাদের সার্বভৌমত্বের অধিকার। এর সাথে কোন আপোষ করা যাবে না। সিএএ কোনভাবে ফেরত নেওয়া হবে না।' 

'সিএএ অসংবিধানিক' বিরোধীদের এই দাবিকে নাকচ করে অমিত শাহ বলেন 'তারা সবসময় আর্টিকেল ১৪ (সকলের জন্য সম অধিকার) এর কথা বলে। তারা ভুলে গেছে যে এই ধারায় দুটো উপধারা রয়েছে। সিএএ কোনভাবেই আর্টিকেল ১৪ কে লঙ্ঘন করে না। এ বিষয়ে পরিষ্কার ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কেবলমাত্র যারা ওই তিনদেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে এসেছেন তাদের জন্য এই আইন। এটা সাংবিধানিকভাবে বৈধ। ভারতের শীর্ষ আদালতে এই আইনের উপরে কোন স্থগিতাদেশ নেই। ' 

সিএএ'এর সাথে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)র কোন সম্পৃক্ততা আছে কিনা, এই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন 'এনআরসির সাথে সিএএ'এর কোন সম্পর্ক নেই। আসামসহ গোটা দেশে সিএএ চালু হচ্ছে। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতের যে রাজ্যগুলিতে যেখানে নাগরিকদের জন্য দুটি বিশেষ অধিকার দেওয়া রয়েছে, এইসব জায়গায় সিএএ আইন চালু হবে না।' 


সিএএ চালুর সময় নিয়ে বিরোধীরা যে প্রশ্ন তুলেছিলেন তা নিয়ে অমিত শাহ বলেন '২০১৯ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে এ কথা বলা ছিল যে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে আসা নাগরিক ও তাদের সন্তানদের ভারতে স্বাগতম এবং নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। এরপর সংসদে তা পাস হয় কিন্তু কোভিডের জন্য তা বাস্তবায়নের বিলম্ব হয়।' 

বুধবারই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছিলেন 'সিএএ চালু হলে ভারতে অনুপ্রবেশের সংখ্যা বাড়বে, চুরি ডাকাতটির ঘটনাও বাড়বে।' 

দুই দিন আগে সিএএ'র বিরোধিতা করে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, এই আইনের ফলে অনেক নাগরিককেই ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠিয়ে দোয়া হবে। তা নিয়ে অমিত শাহ বলেন 'আমি হাত জোড় করে বলছি, রাজনীতি করার জন্য হাজার মঞ্চ রয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দুদেরকে নিয়ে আপনি খেলা বন্ধ করুন, আপনি নিজেও একজন বাঙালি। বাংলাদেশ থেকে যেসব হিন্দু আসছে তাদেরকে নাগরিকত্ব দেওয়ার আইন হলো সিএএ। মমতা দিদিকে আমি পরিষ্কার জানিয়ে দিতে চাই যে কারো নাগরিকত্ব অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার একটি ধারাও সেখানে নেই। দিদি হিন্দু এবং মুসলিমদের মধ্যে একটা বিভেদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। নিজের দলের ভোটব্যাঙ্ক সঙ্ঘবদ্ধ করার চেষ্টা করছে মমতা। আপনি এটা বন্ধ করুক। বরং দিদির অনুপ্রবেশ ঠেকানো উচিত। কিন্তু উনি আমাদের কোনভাবেই সাহায্য করছেন না। যদি আপনি জাতীয় নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে এই ধরনের রাজনীতি করেন, স্বজনপোষণের রাজনীতি করতে গিয়ে অনুপ্রবেশ চলতে দেন তাহলে মানুষ আপনার সাথে থাকবে না। একটি উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন 'আসামে অনুপ্রবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে গেছে, যেহেতু সেখানে বিজেপি সরকার রয়েছে।' 

'আসলে অনুপ্রবেশ এবং শরণার্থীর মধ্যে পার্থক্যটাই মমতা দিদি বোঝেন না। বলেও কটাক্ষ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর