শিরোনাম
৯ মে, ২০২৪ ১৩:০৭

তবে কি ইলন মাস্কের ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ ধরে ফেলেছে চীন?

অনলাইন ডেস্ক

তবে কি ইলন মাস্কের ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ ধরে ফেলেছে চীন?

ইলন মাস্ক (ফাইল ছবি)

এপ্রিল মাসের শেষের দিকে ভারতে সফরের কথা ছিল মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের। কিন্তু ভারত সফরের পরিকল্পনা একেবারে শেষ মুহূর্তে বদলে তিনি চলে যান চীনে। পরে অবশ্য মাস্ক জানিয়েছিলেন, “গুরুত্বপূর্ণ কাজের কারণেই তাকে রাতারাতি চীনে যেতে হয়েছে।”

কী এমন ‘দায়বদ্ধতা’ ছিল তার? চীন সফর নিয়ে জল্পনা শুরু হলে জানা যায়, ইলন মাস্ক নাকি ‘গুপ্তচরবৃত্তি’ চালান। সে বিষয় জেনে ফেলেছে বেইজিং। আর তাই রাতারাতি চীনে যেতে হয় মাস্ককে।

ইলেকট্রিক গাড়ি নির্মাণ সংস্থা টেসলার প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্ক। সারা বিশ্বে আমেরিকার পর টেসলার সবচেয়ে বড় বাজার রয়েছে চীনে। এমনকি টেসলার সবচেয়ে বড় কারখানাটিও রয়েছে চীনের করমুক্ত এলাকায়।

হিসাব অনুযায়ী, টেসলার মোট ১৭ লাখ ইলেকট্রিক গাড়ি চীনের সড়কে চলাচল করে। এমনকি টেসলার সুপারচার্জিং স্টেশনও আমেরিকার পর সবচেয়ে বেশি রয়েছে চীনেই।

কিন্তু টেসলার ইলেকট্রিক গাড়িগুলোর মাধ্যমেই নাকি চীনের ‘গোপন তথ্য’ আমেরিকায় পাচার করার পরিকল্পনা করছেন ইলন মাস্ক। সেই কারণে টেসলার গাড়ি চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন।

আসলে ইলেকট্রিক গাড়ির মধ্যে ‘ফুল সেল্ফ ড্রাইভিং’ (এফএসডি) নামের এক নতুন প্রযুক্তি নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে মাস্কের সংস্থা টেসলা। এই প্রযুক্তি কোনও গাড়িতে থাকলে চালক ছাড়াই সেই গাড়িটি চালানো যাবে।

চীনে টেসলার যে গাড়িগুলো চলে, সেগুলোতেও এই প্রযুক্তি যোগ করার প্রস্তাব ইলন দিয়েছিলেন চীনের প্রিমিয়ার লি ছিয়াংকে। কিন্তু তাতে চীনের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়।

এফএসডি প্রযুক্তির গাড়ি কোথাও চালানো হলে সেখানকার রাস্তাঘাট সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য জানা প্রয়োজন। ইলনের মাস্কের দাবি, এই নতুন প্রযুক্তির যে সফল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, তা আমেরিকার কয়েকটি গাড়িতে মহড়া দিয়ে বোঝা গেছে। কিন্তু মাস্কের এই বক্তব্য শুনেও রাজি হয়নি চীন।

চীনের দাবি, আমেরিকার সড়কের ব্যাপারে টেসলা অবগত রয়েছে। তাই মহড়া দিতেও সুবিধা হয়েছে। কিন্তু চীনের রাস্তা সম্পর্কে কিছুই জানে না টেসলা। ফলে গাড়িতে সেই প্রযুক্তি ব্যবহার করলেও সেখানে মহড়া দেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব হতো না।

টেসলার যে গাড়িগুলো চীনে ইতোমধ্যেই চালু রয়েছে সেগুলোর সাহায্যে চীনের সড়কব্যবস্থা নিরীক্ষণ করে সেই তথ্য আমেরিকা নিয়ে যাওয়ার অনুমতি চান ইলন। টেসলা সংস্থার কর্মকর্তার কথা শুনে চমকে ওঠে চীন।

চীনের দাবি, টেসলার গাড়িতে ক্যামেরা লাগানো রয়েছে, যার সাহায্যে সেখানকার সড়কের ছবি তোলা হচ্ছে। এমনকি স্থানীয় সংবাদ সংস্থা সূত্রের দাবি, টেসলা নাকি প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণ দেখিয়ে সারা বিশ্ব থেকে ২০ লাখ গাড়ি আবার ফিরিয়ে নেয়। নির্দিষ্ট সময় পর আবার সেই গাড়িগুলো নির্দিষ্ট জায়গায় পাঠিয়ে দেয়।

এখানেই টেসলার দিকে সন্দেহের তির ছুড়েছে চীন। চীনের দাবি, টেসলার গাড়ি নাকি ‘গুপ্তচর’-এর কাজ করছে। সে কারণে চীনের সমস্ত সরকারি দফতর থেকে শুরু করে বড় বড় শপিং মলের ভিতর টেসলার গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে চীন। সুরক্ষার খাতিরে এই সিদ্ধান্ত বলে জানিয়েছে বেইজিং।

বিশেষজ্ঞেরা জানান, বছরের শুরু থেকেই টেসলার গাড়ি বিক্রিতে পতন নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন মাস্ক। দাম কমিয়েও বিক্রি বাড়ানো যায়নি। এমনকি, শেয়ারদরও ৩২ শতাংশ কমে গেছে।

সংবাদমাধ্যমের খবর, লি ছিয়াংয়ের সঙ্গে দেখা করে চীনে তার সংস্থার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং আমেরিকা-চীন বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেন ইলন মাস্ক। যার মধ্যে ছিল সুরক্ষার খাতিরে চীনে বিভিন্ন জায়গায় আমেরিকার সংস্থাটির গাড়ির উপরে জারি হওয়া নিষেধাজ্ঞা।

২১ এবং ২২ এপ্রিল দু’দিনের জন্য ভারত সফরে আসার কথা ছিল ইলনের। এই সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা ছিল তার। তিনি নিজেই সে কথা জানিয়েছিলেন। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মাস্ক লিখেছিলেন, “ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার জন্য মুখিয়ে রয়েছি।”

মার্চ মাসেই বৈদ্যুতিক গাড়ির নীতিবদলের কথা ঘোষণা করেছে মোদী সরকার। তাতে বলা হয়েছে, কোনও সংস্থা বিদেশ থেকে বৈদ্যুতিক গাড়ি আমদানি করলে শুল্কে আপাতত ছাড় পাবে। তবে তিন বছরের মধ্যে এ দেশে ন্যূনতম ৫০ কোটি ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪১৫০ কোটি রুপি) লগ্নিতে কারখানা গড়া-সহ কিছু শর্ত মানতে হবে।

বর্তমানে ভারতে কোনও গাড়ি আমদানি করলে ৭০-১০০ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। নতুন নীতিতে পাঁচ বছরের জন্য তা কমে হবে ১৫ শতাংশ। তবে কম শুল্কে ৩৫,০০০ ডলার বা তার বেশি দামি (গাড়ির দাম, বিমা, পরিবহণ খরচ ধরে) গাড়ি বছরে সর্বাধিক ৮০০০টি আমদানি করা যাবে (অর্থাৎ মোট ৪০,০০০টি)। সংস্থাটিকে বিনিয়োগের পাশাপাশি পাঁচ বছরের মধ্যে ভারতে কারখানায় উৎপাদন চালু করতে হবে।

মোদী সরকারের ঘোষণার পর টেসলাকর্তার ভারত সফরের কথা জানা যায়। অনেকেই দাবি করেন, ইলন মাস্ক এই সুবিধাই চেয়েছিলেন। তবে ইলন মাস্কের সফর স্থগিত হয়ে যাওয়ার ফলে সেই সম্ভাবনার ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত হয়ে গেছে।

ইলন মাস্ক কবে আবার ভারতে আসবেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে মাস্ক জানান, টেসলার কিছু কাজের দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেই কারণে ভারত সফর স্থগিত করতে হয়েছে যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে চলতি বছরের শেষে ভারতে আসার চেষ্টা করবেন বলে জানান মার্কিন এই ধনকুবের। সূত্র: আনন্দবাজার

বিডি প্রতিদিন/একেএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর