১৩ মে, ২০২৪ ১১:৩৫

রাফার বাসিন্দাদের নিয়ে ইসরায়েলের কোনও পরিকল্পনা নেই: ব্লিংকেন

অনলাইন ডেস্ক

রাফার বাসিন্দাদের নিয়ে ইসরায়েলের কোনও পরিকল্পনা নেই: ব্লিংকেন

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন (ফাইল ছবি)

গাজার সর্বদক্ষিণের রাফা শহরে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা নিয়ে কোনও গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা ইসরায়েল এখনও দেয়নি বলে জানিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন।

তিনি বলেছেন, সাত মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধ শেষ হলে কী হবে, সে বিষয়েও ইসরায়েল কোনও পরিকল্পনা দেয়নি।

কয়েক মাস আগে গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের উপর ইসরায়েলি হামলা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য যে ১৩ লাখ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলের আদেশে দক্ষিণ গাজার রাফায় পালিয়ে এসেছিলেন, তাদের মধ্যে প্রায় তিন লাখ মানুষকে আবার সরে যাবার আদেশ দেওয়া হয়েছে। ইসরায়েল তাদের এবার রাফার উত্তরপূর্বে, গাজার ভূমধ্যসাগর উপকূলে চলে যেতে বলেছে।

তবে রবিবার টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসির ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে ব্লিংকেন বলেন, ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা দেওয়া বা তাদের পর্যাপ্ত মানবিক সাহায্য দেওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েলের সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা নেই।

যুদ্ধের পর কী হবে?

ব্লিংকেন বলেন, এখানে অন্য একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। গাজা যুদ্ধ শেষ হবার পর কী হবে, সে বিষয়ে কোনও পরিকল্পনা আমরা এখনও দেখতে পাইনি। কারণ, এখন ইসরায়েল যে পথে আগাচ্ছে, তারা যদি রাফা আক্রমণও করে, তারপরও হাজার হাজার সশস্ত্র হামাস রয়ে যাবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ এই কূটনীতিক বলেন, “উত্তরে যেসব এলাকায় ইসরায়েল অভিযান চালিয়েছে, আমরা দেখেছি সেসব এলাকায়, এমনকি খান ইউনুসেও হামাস ফিরে আসছে।”

“কাজেই, ইসরায়েল যে গতিপথে আছে, রাফায় অভিযান চালানো, এমনকি হামাসের অবশিষ্ট ব্যাটালিয়নগুলো পরাস্ত করার জন্য, সেখানে বেসামরিক মানুষকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার সম্ভাবনা থাকে, বিশেষ করে যদি তাদের নিরাপত্তার জন্য কোনও পরিকল্পনা না থাকে।

“আরও ঝুঁকি থাকে সমস্যার সমাধান না করার, যে সমস্যা আমরা দু’দেশই সমাধান করতে চাই, যার মানে হল আমরা নিশ্চিত করতে চাই হামাস যেন আর কখনও গাজা শাসন না করে,” বলেন ব্লিংকেন।

ইসরায়েলের প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী যুক্তরাষ্ট্র বারবার রাফায় পূর্ণমাত্রার স্থল অভিযানের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি দিয়েছে। কিন্তু ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী রাফায় বিমান হামলা এবং সীমিত পরিসরে স্থল আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।

বাইডেনের হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের জন্য বরাদ্দ দুটি অস্ত্রের চালান-৩,৫০০টি ২২৭-কিলোগ্রাম এবং ৯০৭-কিলোগ্রাম বোমা- স্থগিত রেখেছেন। তিনি আশঙ্কা করছেন এই বোমাগুলো রাফা আক্রমণে ব্যবহার করা হতে পারে।

গত সপ্তাহে বাইডেন আরও বলেছেন, ইসরায়েল রাফায় পূর্ণমাত্রায় অভিযান চালালে তিনি কিছু আক্রমণাত্মক অস্ত্রের চালানও আটকে দেবেন।

যুদ্ধবিরতি এবং হামাসের হাতে ১০০ এর মত জিম্মির মুক্তি নিয়ে ইসরায়েল এখনও যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে, তা অচলাবস্থার মুখে পড়েছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, রাফায় অবশিষ্ট হামাস যোদ্ধা উৎখাত না করা পর্যন্ত তার দেশ যুদ্ধ থামাবে না।

ব্লিংকেন এই চলমান বিশৃঙ্খলা নিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ইসরায়েল যে গতিপথে আছে, তাতে তারা সম্ভবত একটা গেরিলা যুদ্ধ পাবে, যেখানে অনেক সশস্ত্র হামাস থাকবে। অথবা তারা (ইসরায়েল) যদি চলে যায় তাহলে সেখানে একটা শূন্যতা সৃষ্টি হবে যেখানে নৈরাজ্য চলবে, বা হামাস সেই শূন্যতা পূরণ করবে। গাজায় এবং পুরো অঞ্চলেরর জন্য টেকসই ফলাফল এবং নিরাপত্তা পাবার অনেক ভাল একটি পথ নিয়ে আমরা তাদের সাথে কথা বলছি।”

ব্লিংকেন বলেন, “এই (যুদ্ধ) শেষ করার সবচেয়ে দ্রুত পথ হচ্ছে হামাস যদি জিম্মিদের ছেড়ে দেয়। আমরা একটা যুদ্ধ বিরতি পাব, যেটার উপর ভর করে আমরা আরও টেকসই কিছু তৈরি করতে পারব। সব পক্ষ কথা বলে যাচ্ছে।”

মার্কিন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিভক্তি

গাজায় আমেরিকান নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভক্তি রবিবার সহজেই অনুমেয় ছিল।

ডেমোক্র্যাটিক দলের ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার বিরোধিতা যারা করেন, তাদের সাথে মিত্র প্রগতিশীল দল-নিরপেক্ষ সিনেটর বার্নি স্যন্ডারস, এনবিসি চ্যানেলকে বলেন, “ইসরাইলের আর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সাহায্য থেকে একটি পয়সাও পাওয়া উচিত নয়। ইসরায়েল ...সমগ্র ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গেছে, এবং তার ফলাফল হয়েছে একদম ভয়াবহ।”

রিপাবলিকান দলের সিনেটর লিন্ডসে গ্রেহাম ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাথে তুলনা করে এনবিসিকে বলেন, “আমরা হিরোশিমা আর নাগাসাকির উপর দুটো অ্যাটম বোমা ফেলেছিলাম কেন? যাতে যুদ্ধে না হেরে যুদ্ধ শেষ করা যায় … সেটা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল … ইসরায়েল, তুমি ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য যা করার দরকার সেটাই করো।” সূত্র: ভয়েস অব আমেরিকা

বিডি প্রতিদিন/একেএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর