১ জুন, ২০২৪ ২১:১৮

সপ্তম দফা ভোটের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো লোকসভা নির্বাচন

পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার অভিযোগ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

সপ্তম দফা ভোটের মধ্যে দিয়ে শেষ হলো লোকসভা নির্বাচন

শনিবার ভারতে বিক্ষিপ্ত কিছু সহিংসতা ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে সপ্তম ও শেষ দফার ভোট। এদিন দেশটির ৮ টি রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের ৫৭ টি লোকসভা আসনে ভোট নেওয়া হয়। যার মধ্যে ছিল পশ্চিমবঙ্গের ৯টি লোকসভা আসন। আর এর মধ্যে দিয়েই ভারতের ৫৪৩ টি লোকসভা আসনেই ভোট নেওয়া সম্পন্ন হল। 

এদিন ভোট গ্রহণ শুরু হয় সকাল ৭ টায়, চলে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত। কিন্তু ভোট শুরুর পর থেকে পশ্চিমবঙ্গের একাধিক জায়গা থেকে সহিংসতার খবর আসে। কোথাও ইভিএম পানিতে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ,  বিরোধীদলের প্রার্থীদের ঘিরে বিক্ষোভ, 'ফিরে যাও' স্লোগান, বিরোধী দলের কর্মী-সমর্থকদের মেরে মাথা ফাটিয়ে দেওয়া, আবার কোথাও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সাথে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়লেন বিরোধী দলের প্রার্থী। এরকম নানা ঘটনায় দিনভর উত্তপ্ত হয়ে রইলো পশ্চিমবঙ্গের ভোটের ময়দান। 

ইতিমধ্যে বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে কয়েক হাজার অভিযোগ জমা পড়েছে নির্বাচন কমিশনে। যার বেশিরভাগ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। যদিও নির্বাচন কমিশনের দাবি রাজ্যে ভোট শান্তিপূর্ণ। 

এদফায় দেশ জুড়ে ৯০৪ জন প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণ হয়। উত্তরপ্রদেশের বারাণসী কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিজেপির শীর্ষ নেতা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই কেন্দ্রে তার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন কংগ্রেসের অজয় রাই। এছাড়াও নির্বাচনের লড়াইয়ে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বিজেপি প্রার্থী অনুরাগ ঠাকুর (হামিরপুর), রবি শংকর প্রসাদ (পাটনা সাহিব), বিজেপি প্রার্থী ভোজপুরি অভিনেতা রবি কিষান (গোরখপুর), বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লালপ্রসাদ যাদবের কন্যা আরজেডি প্রার্থী মিসা ভারতী (পাটলিপুত্র), সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা (কাংড়া), বিজেপি প্রার্থী অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত (মান্ডি), তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক ও মমতা ব্যানার্জির ভাতিজা অভিষেক ব্যানার্জি (ডায়মন্ড হারবার), টলিউড অভিনেত্রী সায়নী ঘোষ (যাদবপুর), বিজেপির রেখা পাত্র (সন্দেশখালি), শিরোমণি আকালি দলের প্রার্থী হরসিমরাত কৌর বাদল (ভাতিণ্ডা)। 

শেষ দফায় দেশজুড়ে সমাজের বিভিন্ন পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে ভোট দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাওয়াত, বিজেপির সভাপতি জেপি নাড্ডা, বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি প্রধান লালু প্রসাদ যাদব ও রাবড়ি দেবী, আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সাংসদ রাঘব চাড্ডা, সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিং প্রমুখ। 

এদিকে পশ্চিমবঙ্গেও সাধারণ মানুষের সাথে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিলেন বিজেপি নেতা ও বলিউড স্টার মিঠুন চক্রবর্তী। কলকাতার বেলগাছিয়ায় ভেটেরিনারি কলেজে ভোট দেন মিঠুন। দক্ষিণ কলকাতার মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভোট দেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা ব্যানার্জি, মমতার ভাতিজা তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জি, দক্ষিণ কলকাতা সাউথ সিটি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ভোট দেন অভিনেতা দীপক অধিকারী (দেব)। চেতলার একটি স্কুলে ভোট দেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, ঠাকুরপুকুর জনকল্যাণে ভোট দেন সাবেক ভারতীয় ক্রিকেট অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী। 

এদিন ভোট দিয়েই চলমান নির্বাচনে তৃতীয়বারের জন্য বিজেপি সরকার গঠন করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন দলটির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। তিনি বলেন পশ্চিমবঙ্গে ৪২ আসনের মধ্যে ৩০ টা বিজেপি দখল করবে, ওড়িশায় ২১ টার মধ্যে ১৮ টা দখল করবে। ঠিক একইভাবে তেলেঙ্গানা, তামিলনাড়ুতেও আমাদের খুব ভালো ফল হবে। কেরলে আমরা বেশ কিছু আসনে জয় পাবো। প্রত্যেকটা জায়গায় আমাদের প্রাপ্ত ভোটের শতকরা হার বাড়বে।' 

এদিকে ভোট শেষের দিনই দিল্লিতে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসে বিরোধীদল 'ইন্ডিয়া' জোটের নেতারা। মূলত ৪ জুন নির্বাচনী ফলাফলে পর জোটের রণ কৌশল স্থির করতেই এই বৈঠক। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে কংগ্রেস, সিপিআইএম, সমাজবাদী পার্টি, সিপিআই, ডিএমকে, জেএমএম, আম আদমি পার্টি, এনসিপি সহ জোটের শরিক দলগুলোর নেতা-নেত্রীরা উপস্থিত থাকলেও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট নেত্রী মেহেবুবা মুফতি অনুপস্থিত ছিলেন। 

অন্যদিকে নিজের এক্স হ্যান্ডেলে নতুন সূর্য উদয়ের ভবিষ্যৎবাণী করেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। দেশটির প্রধান বিরোধী দলনেতা লেখেন 'আজও, অনুগ্রহ করে আপনার বেশি সংখ্যায় ঘর থেকে বেরিয়ে আসুন এবং এই সরকারকে 'চূড়ান্ত আঘাত' হিসাবে আপনার ভোট দিন। কেন্দ্রের সরকার অহংকার এবং অত্যাচারের প্রতীক হয়ে উঠেছে।' 

৫৩ বছর বয়সী এই কংগ্রেস নেতা আরো লেখেন, 'গণনার দিন অর্থাৎ আগামী ৪ জুনের সূর্য দেশের জন্য নতুন ভোর বয়ে আনবে।' 

উল্লেখ্য গত ১৬ মার্চ লোকসভা ভোটের তফসিল প্রকাশ করেছিল ভারতের নির্বাচন কমিশন। প্রথম দফার নির্বাচন হয় ১৯ এপ্রিল। সেই থেকে ১ জুন- মোট সাত দফায় ভারতের ৫৪৩ লোকসভার আসনে ভোট নেওয়া হল। গণনা আগামী ৪ জুন। সেক্ষেত্রে স্বাধীনতার পর এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দীর্ঘদিন ধরে (৪৪ দিন) চলল এই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। ১৯৫১-৫২ সালে ভারতে প্রথম লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়া চলে প্রায় চার মাস ধরে। ১৯৮০ সালে সবচেয়ে কম সময়ে ভোট প্রক্রিয়া শেষ হয়, মাত্র ৪ দিন ধরে চলে ওই ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া। 

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর