১৩ জুন, ২০২৪ ১৫:৪২

গাজা যুদ্ধবিরতি ইস্যু: হামাসের ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

অনলাইন ডেস্ক

গাজা যুদ্ধবিরতি ইস্যু: হামাসের ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র

ফাইল ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং জিম্মি মুক্তি চুক্তি পৌঁছতে বিলম্বের পিছনে হামাসকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় কিছু পরিবর্তন আনার ব্যাপারে হামাসের প্রস্তাবের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন সংগঠনটির উদ্দেশে বলেছেন, “দরকষাকষি বন্ধের সময় এসেছে।”

দোহায় সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কিছু পরিবর্তন প্রস্তাব নিয়ে কাজ করা গেলেও অন্যগুলো নিয়ে কাজের সুযোগ নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্র এবং আলোচনার মধ্যস্থতাকারী কাতার ও মিশর চুক্তিটি করতে চেষ্টা করে যাবে।

হামাস গত মঙ্গলবার বলেছে, তারা এই প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক। তবে তারা গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনী পুরোপুরি প্রত্যাহার এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিয়েছে।

ইসরায়েল সরকার এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতিক্রিয়া প্রত্যাখ্যানের মতোই।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যে প্রস্তাবনা ১২ দিন আগেই দেওয়ার কথা বলেছেন তা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এখনও প্রকাশ্যে অনুমোদন করেননি।

ব্লিংকেন অবশ্য বলেছেন, সোমবার জেরুজালেমে এক বৈঠকে নেতানিয়াহু তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের পাশাপাশি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদও ওই প্রস্তাবের সমর্থনে একটি রেজুলেশন পাস করেছে।

উপসাগরীয় দেশটিতে কূটনৈতিক এ সফরের মাধ্যমে ব্লিংকেন আঞ্চলিক সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছেন।

তিনি কাতারের প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মেদ বিন আব্দুর রহমান আল থানির সাথে সাক্ষাৎ করেছেন হাসিমুখেই।

দেশটি এ সঙ্কটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার কার্যালয় আছে সেখানে। আবার ইসরায়েলের সাথে আলোচনারও একটি মাধ্যম আছে।

যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্লিংকেনকে কিছুটা উত্তেজিতও দেখা গেছে। তিনি জানান, যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাস যেসব পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছে তা নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন।

তিনি আরও বলেন, “হামাস যেসব প্রস্তাব গত ৬ মে দিয়েছিল তার সাথে এবারের প্রস্তাব প্রায় অভিন্ন। এর পেছনেই পুরো বিশ্ব আছে। ইসরায়েলও তা গ্রহণ করেছে। এখন হামাস একটিই প্রতিক্রিয়া দিতে পারে এবং তা হল ইয়েস।”

তিনি বলেন, “এর পরিবর্তে হামাস দু’সপ্তাহ অপেক্ষা করল এবং তারপর অনেকগুলো পরিবর্তনের প্রস্তাব করল এবং এর কয়েকটি তারা আগেও গ্রহণ করেছে। এর ফলে হামাস যে যুদ্ধ শুরু করেছে তা চলছে এবং আরও মানুষ দুর্ভোগ পোহাবে। ফিলিস্তিনিরা দুর্ভোগে পড়বে, আরও ইসরায়েলি দুর্ভোগে পড়বে।”

ব্লিংকেন অবশ্য হামাসের পরিবর্তনের দাবিগুলো নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। হামাস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যে বিবৃতি দিয়েছে সেখানে ‘গাজায় আগ্রাসন পুরোপুরি বন্ধ’ এবং ইসরায়েলি সেনাদের পূর্ণাঙ্গ প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর একজন সদস্য ইজ্জাত আল রিশক জানান, তাদের প্রতিক্রিয়া ছিল ‘দায়িত্বশীল, গুরুত্বপূর্ণ এবং ইতিবাচক’ এবং এটি সমঝোতায় পৌঁছানোর ক্ষেত্রে ‘বড় পথ’ তৈরি করেছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে আনুষ্ঠানিক কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। তবে নাম প্রকাশ না করে একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বিবৃতিতে জানান, হামাস প্রধান ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়গুলো পরিবর্তন করেছে এবং বন্দী মুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে যেটি প্রেসিডেন্ট বাইডেন উপস্থাপন করেছিলেন।

বুধবার রয়টার্সকে দেয়া আরেক বিবৃতিতে হামাস বলেছে, সমঝোতায় পৌঁছাতে তারা পুরোপুরি ইতিবাচক। এবং তারা ইসরাইলকে চাপ দেয়ার জন্য ব্লিংকেনকে অনুরোধ করেছে।

এমন প্রেক্ষাপটেও ব্লিংকেন বলেন, কাতার ও মিশরকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিটি সম্পন্ন করার চেষ্টা করবে।

তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি দূরত্ব ঘুচিয়ে আনা সম্ভব। তবে হামাসকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে তিনটি ধাপের কথা বলা হয়েছে।

প্রথম ধাপে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি, যখন হামাস নারী, বয়স্ক মানুষ ও আহত পণবন্দীদের মুক্তি দেবে। বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির পাশাপাশি গাজার ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার হবে এবং মানবিক সহায়তা দেওয়া হবে।

দ্বিতীয় ধাপে বেঁচে থাকা সব বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে এবং আলোচনা সাপেক্ষে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার হবে।

তৃতীয় ধাপে নিহত বন্দীদের লাশ ফেরত দেওয়া হবে এবং গাজার পুনর্গঠনে একটি বড় পরিকল্পনা নেওয়া হবে।

হোয়াইট হাউজ উভয়পক্ষকে নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও ইসরায়েলের নেতারা এ বিষয়ে সন্দিহান।

ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব না দেয়ার জন্য নেতানিয়াহুর ওপর চাপ তৈরি করছে ডানপন্থী মন্ত্রীরা। তারা কোয়ালিশন সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবকে তারা হামাসের কাছে আত্মসমর্পণ হিসেবে বিবেচনা করছে।

প্রধানমন্ত্রী ওই পরিকল্পনার প্রতি নিঃশর্ত সমর্থন এখনও ঘোষণা করেননি। যদিও এটি তার যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা কর্তৃক অনুমোদিত বলে স্বীকার করেছেন।

তবে বাইডেন যতটা প্রকাশ করেছেন ইসরায়েলের প্রস্তাবনা আরও অনেক দীর্ঘ ছিল বলে জানা গেছে।

প্রস্তাবটি প্রকাশ করা হয়নি এবং প্রেসিডেন্ট বাইডেন যতটা বলেছেন তার সাথে এর পার্থক্য কতটুকু সেটিও পরিষ্কার নয়। এটি হামাসের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বাইডেনের বক্তব্যের আগেই। সূত্র: বিবিসি

বিডি প্রতিদিন/একেএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর