শিরোনাম
২০ জুন, ২০২৪ ২১:৩২
দানা বাঁধছে রহস্য

কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক মাসের মধ্যে দুই বাংলাদেশি যুবক নিখোঁজ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক মাসের মধ্যে দুই বাংলাদেশি যুবক নিখোঁজ

মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম শিহাব (বামে) ও মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন (ডানে)

ভারতের কলকাতায় চিকিৎসা করাতে গিয়ে এক মাসের মধ্যে দুই বাংলাদেশি যুবক নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রথম ঘটনা ২৪ মে। দ্বিতীয় ঘটনা ২০ জুন। দুটি ঘটনাতেই নিখোঁজের অভিযোগ জানানো হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের কারোরই হদিশ মেলেনি। স্বাভাবিকভাবে পরপর এই দুই নিখোঁজের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কলকাতার নিউমার্কেট এলাকায়।

চিকিৎসা করাতে গত ২২ মে মা-বাবার সাথে বাংলাদেশ থেকে কলকাতা যান মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম শিহাব নামের এক যুবক। ২৪ বছর বয়সী শিহাবুল মানসিক ভারসম্যহীন। এরই চিকিৎসা করাতে কলকাতায় যায় তার পরিবার।

কলকাতার নিউমার্কেটের মার্কুই স্ট্রিট এলাকায় কলিং স্ট্রিটের শামীমা হোটেলে ওঠেন শিহাবের বাবা শফিকুল ইসলাম শাবান ও মা নাসিমা বেগম। কিন্তু, ২৪ জুন হঠাৎ করে নিখোঁজ হয়ে যায় শিহাব। রাতে সেই ফ্ল্যাট থেকে তার বেরিয়ে যাওয়ার ছবিও সিসিটিভিতে ধরা পড়ে। ঘটনার পরেই লালবাজার থানায় গিয়ে একটি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করেন তার বাবা-মা। কিন্তু প্রায় একমাস হতে চললেও খোঁজ মেলেনি নিখোঁজ শিহাদের। 

বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার রাজপাড়া লক্ষ্মীপুর এলাকার বাসিন্দা শিহাব বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। স্বাভাবিকভাবেই একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে কার্যত মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে শিহাবের পরিবার। ফলে সন্তান নিখোঁজের পরেও টানা কয়েকদিন কলকাতার হোটেলেই অবস্থান করে ওই পরিবার।

বিষয়টি জানাজানি হলে কলকাতার ইন্দো বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্যরাও নিখোঁজ শিহাবের খোঁজখবর নিতে শুরু করেন। এমনকি শিহাবের ছবি দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি নিখোঁজের পোস্ট করে হারিয়ে যাওয়া সন্তানকে মা-বাবার যাচ্ছে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা সামনে এলো। এবার নিখোঁজ হলেন ২৩ বছর বয়সী বাংলাদেশের পাবনার বাসিন্দা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

জানা গেছে, গত ১৮ জুন বাংলাদেশ থেকে মা-বাবার সাথে কলকাতায় যান দেলোয়ার। বুধবার কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা (অ্যাপোলো গ্লেনিগেলস) করায়। ওইদিন রাতের খাবার খেয়ে নিউমার্কেটের মার্কুইস স্ট্রিটের প্যারামাউন্ট হোটেলে বাবা-মায়ের সাথে ঘুমাচ্ছিল দেলোয়ার। রাত সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে হঠাৎ করে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে যায় দেলোয়ার। সন্তানের অনুপস্থিতির খবর টের পেয়েই রাত ১টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট থানায় ছোটে তাদের পরিবারের সদস্যরা। প্রথমে সেখানে একটি নিখোঁজের ডাইরি করা হয়। পরে বৃহস্পতিবার আরেকটি ডায়েরি করা হয় লালবাজার থানায়।

এ ঘটনায় কান্নায় ভেঙে পড়ে দেলোয়ারের পরিবার। ঘটনার বিষয়ে দেলোয়ারের বোন কামরুন্নাহার অমি জানিয়েছেন, তার ভাই নার্ভের রোগী। মাঝে মধ্যেই তার স্মৃতিশক্তি হারিয়ে যায়। কোনো কিছু সহজে চিনে রাখতে পারে না। যে কারণে ১৯ জুন অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিৎসা করাই। 

কামরুন্নাহার অমি বলেন, গতরাতে আমি ও আমার স্বামী এক রুমে ছিলাম। আর পাশের রুমে ভাই দেলোয়ারকে নিয়ে বাবা-মা ছিলেন। রাত ১১টা নাগাদ আমার আব্বা আম্মা দেখতে পান রুমের দরজা খোলা। ভাই ঘরের মধ্যে নেই। এরপর ছুটে আসি নিচে। পথে বের হয়ে তার খোঁজ করি। দীর্ঘ এক ঘণ্টা খোঁজাখুঁজির পর রাতেই পার্কস্ট্রিট থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করি।

তিনি আরো বলেন, পরে হোটেলের সিসিটিভিতে দেখা যায় ১১ টা ২৭ মিনিটে হোটেল ছেড়ে ভাই বাইরে চলে যাচ্ছে। কিন্তু রাত ১১টা থেকে আজ প্রায় ১৮ ঘণ্টা হয়ে গেল এখনো পুলিশ কিছু উদ্ধার করতে পারেনি। খুবই টেনশনে আছি। ভাইকে সাত ঘণ্টা অন্তর অন্তর মেডিসিন খেতে হয়। নাহলে ভাইয়ের কথা আটকে যায়, খাবারও খেতে পারে না।

এদিকে এক মাসের মধ্যে পরপর দুই বাংলাদেশি যুবকের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সন্দেহ দানা বাঁধছে। প্রশ্ন উঠছে এই ঘটনার পেছনে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাচারকারী কোনো চক্র কাজ করছে না তো। তবে উত্তর মেলেনি। বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত কলকাতার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারাও। পরপর দুটি নিখোঁজের ঘটনা সামনে আসায় তারাও খোঁজ খবর শুরু করেছেন। পুলিশের সাথেও সমন্বয় রেখে চলেছেন তারা।

পাশাপাশি পার্কস্ট্রিট থানা ও কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তর লালবাজারও সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছে দেলওয়ারকে খুঁজে বের করার। তবে কাকতালীয় হলেও দুইটি ঘটনারই খুবই মিল রয়েছে। ফলে দানা বাঁধছে রহস্য। আর সেই রহস্য উন্মোচনে কাজ করছে কলকাতা পুলিশ।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর