২৪ জুন, ২০২৪ ১৭:৪৫

লোকসভার প্রথম অধিবেশন, বাইরে বিক্ষোভ

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

লোকসভার প্রথম অধিবেশন, বাইরে বিক্ষোভ

সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সোমবার, ১৮তম লোকসভার অধিবেশনের শুরুর দিনেই তৃতীয়বারের জন্য সাংসদ হিসেবে শপথ নিলেন মোদি। প্রধানমন্ত্রীর সাথেই শপথ নিলেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যসহ একাধিক নবনির্বাচিত সাংসদ। বাকিরা সাংসদ হিসেবে শপথ নেবেন মঙ্গলবার।

এদিন প্রধানমন্ত্রীসহ অন্য সাংসদদের শপথ গ্রহণ করান প্রোটেম স্পিকার ভর্তৃহরি মাহতাব। তার আগে সাতবারের বিজেপি সাংসদ ভর্তৃহরি মাহতাবকে প্রোটেম স্পিকার হিসেবে শপথ গ্রহণ করান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।

এরপর প্রধানমন্ত্রীসহ একে একে অমিত শাহ, রাজনাথ সিং, নীতিন গড়করি, শিবরাজ সিং চৌহান, কিরেন রিজুজু, মনসুখ মান্ডব্য, জি কিষান রেড্ডি, চিরাগ পাসওয়ানসহ মন্ত্রিসভার সদস্যদের সাংসদ হিসাবে শপথ বাক্য পাঠ করান প্রোটেম স্পিকার। আর এভাবেই নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণের মধ্যে দিয়ে শুরু হলো ভারতের সংসদের অধিবেশন।

নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রোটেম স্পিকারকে সহায়তা করার জন্য কংগ্রেস সাংসদ সুরেশ কোডিকুন্নিল, ডিএমকে সাংসদ টি আর বালু, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিজেপির রাধা মোহন সিং, ফগন সিং খুলাস্তেকে নিয়ে একটি প্যানেল গঠন করলেও, তিন বিরোধী সংসদ সদস্য সেই দায়িত্ব পালন করতে অস্বীকার করেন।

সংসদের অধিবেশন চলবে আগামী ৩ জুলাই পর্যন্ত। তার আগে আগামী ২৬ জুন লোকসভার স্পিকার পদে নির্বাচন, ২৭ জুন সংসদের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য রাখবেন রাষ্ট্রপতি।

সম্প্রতি ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩ আসনের মধ্যে বিজেপি নেতৃত্বাধীন 'জাতীয় গণতান্ত্রিক মোর্চা' (এনডিএ) জোট জয় পেয়েছে ২৯৩ আসন, এর মধ্যে বিজেপি একার ঝুলিতে রয়েছে ২৪০ আসন। অন্যদিকে বিরোধীদলের জোট 'ইন্ডিয়া'র জয় পেয়েছে ২৩৪ আসনে, এর মধ্যে কংগ্রেস একাই জয় পেয়েছে ৯৯ আসনে। স্বাভাবিকভাবে গত দুইটি মেয়াদের তুলনায় এবার বিরোধীরা অনেকটাই শক্তিশালী। আর সেটাই দেখা গেল এদিনের অধিবেশনের শুরুতে।

নেট, নিট পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ, সংসদ ভবন চত্বরে বিভিন্ন ভাস্কর্য স্থাপন, সাতবারের বিজেপি এমপি ভর্তৃহরি মাহতাবকে প্রোটেম স্পিকার নিয়োগসহ একাধিক ইস্যুতে ঝড় তোলেন বিরোধী সাংসদরা।

ভর্তৃহরি মাহতাবকে প্রোটেম স্পিকার নিয়োগ নিয়ে বিরোধীদের প্রশ্ন, আটবারের কংগ্রেস সাংসদ কোডিকুন্নিল সুরেশ থাকা সত্ত্বেও তাকে উপেক্ষা করে ভর্তৃহরিকে এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ এর ফলে সরকার নিয়ম লঙ্ঘন করেছেন এবং সুরেশের সিনিয়ারিটিকে অসম্মান জানানো হয়েছে।

আবার সংসদ হিসেবে এদিন যখন শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান শপথ গ্রহণ করেন, ঠিক তখনই নিট পরীক্ষায় দুর্নীতি নিয়ে স্লোগান দেয় বিরোধীরা।

অন্যদিকে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়ে সংসদ ভবন চত্বরে বিক্ষোভ দেখার বিরোধী দলের জোট 'ইন্ডিয়া'র সাংসদরা। প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে এদিন সংবিধানের কপি হাতে নিয়ে প্রতিবাদ করতে দেখা যায় কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্র, সায়নী ঘোষ, কাকলি ঘোষ দস্তিদার, ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি, টিআর বালুকে। প্রত্যেকেই হাতে সংবিধান নিয়ে 'সংবিধান রক্ষা, গণতন্ত্র রক্ষার' স্লোগান দিতে থাকেন। এমনকি সংসদ সদস্য হিসেবে নরেন্দ্র মোদি যখন শপথ নিতে ওঠেন, তখনও রাহুল গান্ধী সহ বিরোধী সাংসদরা হাতে সংবিধান নিতে দেখা যায়।

এনিয়ে রাহুল গান্ধী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যেভাবে সংবিধানের উপর আক্রমণ চালাচ্ছেন সেটা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটা হতে দেব না। সেই কারণেই আমরা শপথ গ্রহণের সময় সংবিধান হাতে নিয়েছিলাম। আমাদের বার্তা স্পষ্ট। কোন শক্তিই ভারতের সংবিধানকে ছুঁতে পারবে না।

এদিকে অধিবেশনের শুরুতে এদিন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন সংসদীয় গণতন্ত্রে আজকের দিনটি গৌরবের, বৈভবের। স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো নতুন সংসদ ভবনে সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠান। এতদিন পুরোনো সংসদ ভবনে শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠান হতো। আমি প্রত্যেক নবনির্বাচিত সংসদদের হৃদয় থেকে স্বাগত, অভিনন্দন ও শুভকামনা জানাচ্ছি। শ্রেষ্ঠ ভারত নির্মাণ ও বিকশিত ভারত তৈরির স্বপ্ন নিয়ে আজ ১৮তম লোকসভার সূচনা হচ্ছে। জনগণ আমাদের সরকারকে তৃতীয় মেয়াদের জন্য জনাদেশ দিয়েছে। আমাদের নীতি, আমাদের উদ্দেশ্যকে সমর্থন দিয়েছে। আমরা সব সময় সবাইকে সাথে নিয়ে চলার চেষ্টা করব, দেশসেবা করার জন্য ঐকমত্য গড়ে তোলা ও জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করার চেষ্টা করব।

দেশে জরুরি অবস্থা জারির বিষয়টি উত্থাপন করে কংগ্রেসকে নিশানা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামীকাল ২৫ জুন। যারা সংবিধানের গরিমা বোঝেন, সংবিধানকে সম্মান করেন, তাদের কাছে এই দিনটি ভোলার নয়। গোটা দেশকে সেদিন কারাগার বানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, গণতন্ত্রে কালি লাগিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কয়েক দশক আগে ২৫ জুন ভারতের সংবিধানে যে কালিমা লেগেছিল, আগামীকাল তার ৫০ বছর পূর্তি হবে। এই ৫০ বছর পূর্তিতে দেশবাসী সংকল্প নেবে, যে ভবিষ্যতে এই ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে।

জরুরি অবস্থা নিয়ে মোদির এই মন্তব্যের পর তাকে নিশানা করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে। তার বক্তব্য সরকারিভাবে জরুরি অবস্থা জারি না করেও মোদি সরকার সেই আচরণটাই করে যাচ্ছে। আপনি কতদিন ধরে এভাবে দেশ চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন?

বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর