২৪ জুলাই, ২০২৪ ১৫:৪৪

কোটা আন্দোলনে বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তে 'অপারেশন অ্যালার্ট' জারি বিএসএফ'র

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

কোটা আন্দোলনে বাংলাদেশে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সীমান্তে 'অপারেশন অ্যালার্ট' জারি বিএসএফ'র

কোটা বিরোধী বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই, সীমান্তের ওপারের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে 'অপারেশন অ্যালার্ট' জারি করেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)। সেইসাথে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় উচ্চ সতর্কতা অবস্থানে রয়েছে। 

বিএসএফ মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বিএসএফ ইস্টার্ন কমান্ডকে। বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরামসহ ভারতের পাঁচটি রাজ্যের ৩২টি জেলার সীমান্ত রয়েছে। 

উল্লেখ্য, ভারত এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ৪০৯৬.৭ কিলোমিটার বিস্তৃত সীমান্তে বিএসএফ ইস্টার্ন কমান্ডের অধীনে ৬টি ফ্রন্টিয়ার রয়েছে। আরেকটি তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘতম স্থল সীমান্ত হলো ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত।  

বিএসএফ কর্মকর্তা বলেন, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে প্রধান সমস্যা হলো চোরাচালান, অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপার এবং অভিবাসী সমস্যা। তবে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে প্রতিবেশী দেশের বর্তমান আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কাছে একটা বড় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে ও তার প্রভাব ফেলছে।

বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনা করে, বিএসএফ'এর এডিজি (সদর দফতর) এবং বিশেষ ডিজি (ইস্টার্ন কমান্ড) রবি গান্ধী ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত বরাবর একটি 'অপারেশন সতর্কতা' জারি করেছেন। বিএসএফ সীমান্তের ওপারের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। পাশাপাশি যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় সৈন্যরা উচ্চ সতর্কতা অবস্থানে রয়েছে।

আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিরাপত্তার বিষয়টি ছাড়াও, প্রাণভয়ে বাংলাদেশ থেকে চলে আসা ভারতীয় এবং বিদেশী শিক্ষার্থীদের প্রত্যাবাসনের সুবিধা করে দিতেও উদ্যোগী ভূমিকা নিচ্ছে বিএসএফ। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় এবং ত্রিপুরা রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সহকারী সংস্থা এবং বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সাথে নিবিড় সমন্বয় রেখে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের সুবিধা করে দিচ্ছে তারা। ইতোমধ্যে ভারত-বাংলাদেশের একাধিক সীমান্ত দিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ৪৩১৫ জন শিক্ষার্থীকে সহায়তা করেছে বিএসএফ। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সমস্ত ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট (আইসিপি) এবং ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশনে (এলসিএস) শিক্ষার্থীদের জলখাবার, খাবারের প্যাকেট, কাউন্সেলিং, গরম খাবার, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, যানবাহনের ব্যবস্থা করাসহ সমস্ত ধরনের অপারেশনাল এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা করেছে বিএসএফ। 

বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, সমস্ত আগত শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদানের জন্য সীমান্তে বিশেষ সহায়তা কাউন্টার খোলা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও কল্যাণ নিশ্চিত করার জন্য মেডিকেল চেক-আপের ব্যবস্থা করেছে। শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থার উপর অশান্তির প্রভাব অনুধাবন করা, তাদের উদ্বেগ এবং ভয় মোকাবেলায় সহায়তা করার জন্য চিকিৎসকদের সাথে কাউন্সেলিং সেশনের ব্যবস্থা করেছে। উপরন্তু, বিএসএফের গাড়িতে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার আগে সীমান্তে শিক্ষার্থীদের গরম খাবার ও নাস্তা দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে বিএসএফ দক্ষিণবঙ্গ সীমান্ত। 

এ ব্যাপারে বিএসএফ'এর দক্ষিণবঙ্গ সীমান্তের ডিআইজি (জনসংযোগ) এ কে আর্য বলেন, তারা আইসিপি পেট্রাপোল, এলসিএস মাহাদিপুর, ঘোজাডাঙ্গা এবং গেদে-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বর্ডার গার্ডস বাংলাদেশের (বিজিবি) সঙ্গে সমন্বয় করেছেন। সুপরিকল্পিত ও সমন্বিত অভিযান নিশ্চিত করতে দুই সীমান্ত নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে যোগাযোগের চ্যানেলগুলো সক্রিয় করা হয়েছে। পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিজিবি শিক্ষার্থীদের নিরাপদে আন্তর্জাতিক সীমান্তে নিয়ে আসছে, তারপরে বিএসএফ তাদের নিজেদের তত্ত্বাবধানে এবং পরবর্তী পরিবহনের দায়িত্ব নেয়। 

বিএসএফ জানিয়েছে, গত ৪ দিনে, ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে ৩০৭৭ জন ভারতীয়, ১১১৮ জন নেপালি, ৬ জন ভুটানি, ৪২ জন বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ছাড়াও মালদ্বীপ থেকে ২ জন এবং কানাডা থেকে ১ জন শিক্ষার্থীকে ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে সহায়তা প্রদানে আন্তরিক প্রচেষ্টা নিয়েছে বিএসএফ। 

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর