২৭ জুলাই, ২০২৪ ১২:৩৫

স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা

অনলাইন ডেস্ক

স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা

সংগৃহীত ছবি

মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে স্বেচ্ছায় কারাগারে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনি শরণার্থীরা।

জানা গেছে, কয়েক সপ্তাহ ধরে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসে অবিরাম বোমাবর্ষণ করছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের হামলা থেকে কোনও স্থাপনাই নিরাপদ নেই। এমনকি শরণার্থীদের তাঁবুগুলোতেও হামলা হচ্ছে। ভয়ানক এই পরিস্থিতিতে আর কোনও উপায় না পেয়ে কারাগারে আশ্রয় নিয়েছেন শরণার্থীরা।
 
জানা গেছে, ইসরায়েল এই কারাগার নির্মাণ করেছিল শত শত ফিলিস্তিনি খুনি ও চোরদের আটক রাখার জন্য। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের কেউ অবশিষ্ট না থাকায় সেটি এখন পরিত্যক্ত। বাইরের দেয়ালে হাজারো বুলেটে ছিদ্র সেই ভবনটিতে শেষ ভরসা হিসেবে শরণার্থীরা দলে দলে প্রবেশ করছে।

ইয়াসমিন আল-দারদাসি নামে এক শরণার্থী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের দুর্দশা অবর্ণনাতীত। তিনি ও তার পরিবার অসংখ্য আহত ব্যক্তিদের ফেলে কারাগারটিতে এসেছেন। আহতদের অবস্থা এতই বেগতিক যে তাদের সাহায্য করার চেয়ে মৃত্যুর অপেক্ষায় ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ইসরায়েলি বোমা হামলা থেকে কোনও মতে প্রাণ বাঁচিয়ে তারা পরিত্যক্ত কারাগারটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এর আগে কয়েক দিন তারা একটি গাছের নিচে ছিলেন। বর্তমানে কারাগারের নামাজ কক্ষে তাদের ঠাঁই হয়েছে। তার ভাষ্য, অন্তত সূর্যের প্রখরতা থেকে বাঁচতে পারছি। অন্যরা এ সুযোগটুকুও পাচ্ছে না।

দারদাসির সঙ্গে তার স্বামীও আছেন। তিনি কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যায় শয্যাশায়ী। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, এ মানুষটি শেষ সময়ে লেপ-তোশক ছাড়াই মেঝেতে থাকছেন।

এ পরিবারটির আর কোনও আশ্রয়স্থল ছিল না। তাই এতটুকু পেয়ে তিনিসহ আশ্রয় নেওয়া সবাই খুশি। কিন্তু প্রতিনিয়ত আতঙ্কে রাত কাটছে। তাদের ধারণা, খুব বেশি দিন তারা এখানে থাকতে পারবেন না। এর আগেই হয়তো ইসরায়েলি বিমান কারাগারটিতে বোমা ফেলবে। যারা বেঁচে থাকবেন তাদের অন্য কোথাও আরেকটি ছাদ খুঁজতে হবে।

কয়েক সপ্তাহ ধরে ইসরায়েল দক্ষিণাঞ্চলে হামলা জোরদার করেছে। ১৩ জুলাই আল-মাওয়াসি এলাকায় শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলায় কমপক্ষে ৯০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, হামাসের সামরিক প্রধান মোহাম্মদ দেইফকে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে বলে ইসরায়েল দাবি করেছে। 

এদিকে বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্ব খান ইউনিসের এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক হামলায় ১৪ জন নিহত হয়েছেন। অনুমোদিত আশ্রয় শিবির এলাকায় এ ধরনের হামলা উদ্বেগ জানিয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন মানবিক সংস্থা।

গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের হামলা শুরুর পর গাজা উপত্যকায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৯ হাজার ২০০ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়ে হাজারো মানুষ কাতরাচ্ছেন। তাদের অনেকের ভাগ্যে ন্যূনতম চিকিৎসাসেবাও জুটছে না। হামলা হচ্ছে হাসপাতাল ও আন্তর্জাতিক সংস্থার চিকিৎসা ক্যাম্পেও।

এছাড়া গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী অন্তত ৯ হাজার ৮০০ ফিলিস্তিনিকে গ্রেফতার করেছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫৯০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার ৪০০ জন আহত হয়েছেন।

এদিকে, গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ১৭৫ ফিলিস্তিনি। আহত হয়েছে ৯০ হাজার ৪০৩ জন। সূত্র: আল-জাজিরা, রয়টার্স

বিডি প্রতিদিন/একেএ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর